ছোট গল্প পর্ব ২ . আশরাফুল বিয়ে বাড়ি থেকে ফেরার পথে মাইক্রোবাসে বসে বসে নাম অজানা মেয়ের অনুভূতিতে বিভোর। কারও সাথে কথা বলে না। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে কলেজ হোস্টেলে যায়। সামনে মাস্টার্স পরীক্ষা, পড়ার টেবিলে মন বসতে চায় না। অন্ধকার রুমে শুয়ে শুয়ে কল্পনার স্বপ্ন রাজ্যে যেন, বলাকার ডানামেলে নীল আকাশে উড়তে থাকে। চিন্তা করে মেয়েটিকে জীবন সঙ্গী করে কিভাবে সংসার গড়ে তোলবে। ভাবনার জগতে রাজহংসীর ডানামেলে ভাসতে থাকে মেয়েটি সকালে রান্না শেষ করে যেন, আশরাফুলকে বলবে সাহেব উঠেন, অফিসের সময় হয়ে গেছে। আশরাফুল ঘুমের ভান করে থাকবে, মেয়েটি তার পায়ের পাতায় শুরশুরী দেবে, তবু ঘুম ভাংবে না। নাক ধরে ঢাকবে, এই! উঠ না, সোনা। আশরাফুলের ঘুম যেন আরো বেশি পেয়েছে। মেয়েটি বলবে,দাড়াও দেখাচ্ছি মজা, খুব অলসতা না? তোমার মাথায় এক কলসি পানি ঢেলে দেব। মেয়েটি যেতেই আশরাফুল হাত ধরে বলবে এভাবে কী ঘুম ভাংগে? -তো কিভাবে ভাংবে, স্যার? - একটু, না,মানে, গালে.... -ওরে আমার দুষ্ট....। আশরাফুল এ রকম হাজার কল্পনা নিজের মনে বুনিয়ে চলে। বন্ধুদের সাথে কথা কম বলেন, বাইরে বের হয় না বললেই চলে। আশরাফুলের হঠাৎ পরিবর্তন, একা একা হাসা, সন্ধ্যার পরেই বিছানাতে যাওয়া দেখে, বন্ধুরা বলে, দোস, তুই কার হাতে কুরবানী হয়ে গেলি-রে, দোস্ত? বল না কে সেই সুন্দরী? আশরাফুল হেসে বলেন, না ওসব কিছু না। এভাবেই বেশ ক'দিন কেটে যায়। আশরাফুল চিন্তা করে মেয়েটির পারিবারিক অবস্থা ভাল, আমার সাথে তারা হয়তো বিয়ে দেবে কী'না....। তাহলে মেয়েটিকে পেতে হলে দরকার নিজের যোগ্যতা অর্জন করা। পরীক্ষা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। তাকে পাওয়ার জন্য ভাল রেজাল্ট অর্জন করা জরুরি। সে পরিকল্পনায় আশরাফুল পড়াশোনাতে মনোযোগী হয়। . মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ করে, আশরাফুল নিজ বাড়ি চলনবিল এলাকার চলে যায়। ক্ষণে ক্ষণে ভাবতে থাকে কী উপায়ে মেয়েটির কাছাকাছি যেতে পারি। পড়ন্ত বিকালে চলনবিলের জলসমুদ্রে, ডিঙ্গি নৌকাতে একা একা ভাসতে থাকে। মেয়েটির অনুভবে বিভোর হয়ে,কখনো কখনো একা একা জলকেলি খেলা করে। তার কল্পনা এতটাই গভীর যেন, মেয়েটির উপস্থিতি অনুভব করতে পারে। কখনো কখনো মনে হয় মেয়েটিসহ ডিঙ্গি নৌকার দুই মাথায় দুইজন বসে হালকা স্রোতে ভেসে চলছে। মাঝে মাঝে গুনগুন করে গান গেয়ে তাকে শোনায়। কখনো কখনো জোৎস্না রাতে ডিঙ্গি নৌকায় বসে চাঁদের সাথে অনুভূতি বিনিময় করে। সিদ্ধান্ত নেয় আর এখানে নয়। মেয়েটির বাড়িতে চলে যাবে। একজন নারীর প্রেম, পুরুষকে পাগল করে দেয়। ব্যক্তিত্ববোধ ধুলায় মিশে যায়। মনে হয় প্রেমে কোন লজ্জা নেই। তাকে পাওয়ার বাসনা প্রবল হয়ে উঠে। মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে আশরাফুল বাড়ি থেকে, বেড়ানোর কথা বলে বের হয় মাদারীপুর। (চলবে)