আমার পুরোনো বইটা আজও কাঁদে আমার সাথে কখনো উদাসী হয়, কখনো মন গঙ্গায় আনন্দ বেদনার কথা বলে শুধু আমার সাথে | আমার বগল দাপা হয়ে থাকতে চায় সারাক্ষন সে, নাকি আমি, নাকি পরস্পর? আপনজন খুঁজে আপনজনকে হারানোর যত শংকা আর বিরহের তাড়না বুঝেও যেন বুঝিনা, অন্তর্বাসিনী যেন পরস্পরের আবার এক চিলতে ইতিহাস, প্রতিবাদ আর অহংকার, ডাকে চিত্র নদীর বাঁকে, প্রাণের আকুতি নিয়ে বার বার, কথা বলে, গান গায় আবার কোথায় হারায় হয়তো জীবন্ত নয়তো নুতন করে ভেঙে ভেঙে দুঃসাহস দেখায় গড়বার | তবুও প্রাণ সঙ্গিনী বইটা আমার কেমন যেন আনমনে কখনো পথ হারায় আবার কখনো পথ খুঁজে পায় গন্তব্য বইটাকে আঁকড়ে ধরি তবু সময়ের সাথে বিবর্ণ হয় পাতাগুলো, মরচে ধরে, কষ্ট গুলো মনকে চেপে ধরে এরপরও নাক সিটকানো পুরোনো আগুনে পড়া মখমলের গন্ধ বাস্পায়িত হয় শ্বাসনালিতে অজান্তে | বাবা অনেক সাধ করে কিনে দিয়েছিলেন বইটা বইমেলার মুক্তাঙ্গনে. দেখিয়ে ছিলেন বড় হবার স্বপ্ন বড় লোক নয় বড় মানুষ হবার স্বপ্ন, সেদিন থেকে চকচকে বইটা হলো আমার সাথী রক্তের বন্ধন, মনে হতে লাগলো সারাক্ষন নির্জনের নির্বাসন সে যেন আমার কোনো এক জন্মের হারিয়ে যাওয়া স্বজন যক্ষের ধন | কলেরাতে মা মারা গেলো খুব কাঁদলাম আমি, বইটাও কাঁদলো জোরে জোরে কবর দিলাম মাকে জানালার ওপাশে খুব ভোরে তবু চোখে যেন বিড়ম্বিত জীবনের জল ঝরে নিভৃতে নীরবে কিন্তু নাড়ির টান যেন দমকা হাওয়া হয়ে জাপটে ধরে আঁকড়ে ধরতে চায় আরো জোরে বইটাকে আমার বাবার কেনা বই মায়ের আশীর্বাদ আর নকশিকাঁথার বই | দিন যায় জোনাকিরা আলো খুঁজে বইয়ের কালো অক্ষরে, অক্ষরগুলো ঝাপসা হয় সময়ের জলসা ঘরে | বাবাও বিদায় নিলো নিঃসঙ্গ আমি আর বইটা রয়ে গেলো আমার সাথে জানিনা তার মৃত্যু আগে নাকি আমার কিন্তু বিশ্বাস ঝড় তোলে রাতের আধার রঙিন শহরে হয় ঝলমলে হাত বুলিয়ে কে যেন বলে যেতে চায় মানুষের মৃত্যু থাকে বইয়ের মৃত্যু নাই সে থাকে অনন্তকাল অমরত্বের ঠিকানায় আর মায়াবতী বইয়ের পাতায় পাতায় জীবনের কাব্যে লেখা হয় এক নুতন প্রজন্মের নতুন অধ্যায় |