এই পৃষ্ঠা প্রিন্ট করুন
মঙ্গলবার, 24 অক্টোবর 2017 21:48

আমার বাবার কেনা বইটা নির্বাচিত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(1 ভোট)
                আমার পুরোনো বইটা 
আজও কাঁদে আমার সাথে 
কখনো উদাসী হয়, কখনো মন গঙ্গায় 
আনন্দ বেদনার কথা বলে শুধু আমার সাথে | 
আমার বগল  দাপা হয়ে থাকতে চায় সারাক্ষন 
সে,  নাকি আমি, নাকি পরস্পর? 
আপনজন খুঁজে আপনজনকে 
হারানোর যত শংকা আর বিরহের তাড়না 
বুঝেও যেন বুঝিনা,  
অন্তর্বাসিনী যেন পরস্পরের 
আবার এক চিলতে ইতিহাস, প্রতিবাদ আর অহংকার, 
ডাকে চিত্র নদীর বাঁকে,   প্রাণের আকুতি নিয়ে বার বার,
কথা বলে,  গান গায় আবার কোথায় হারায় 
হয়তো জীবন্ত নয়তো নুতন করে ভেঙে ভেঙে 
দুঃসাহস দেখায় গড়বার |
তবুও 
প্রাণ সঙ্গিনী বইটা আমার কেমন যেন আনমনে 
কখনো পথ হারায় আবার কখনো পথ খুঁজে পায় গন্তব্য 
বইটাকে আঁকড়ে ধরি তবু সময়ের সাথে বিবর্ণ 
হয় পাতাগুলো,  মরচে ধরে, কষ্ট গুলো মনকে চেপে ধরে 
এরপরও  
নাক সিটকানো পুরোনো আগুনে পড়া মখমলের গন্ধ 
বাস্পায়িত হয় শ্বাসনালিতে অজান্তে |
বাবা অনেক সাধ করে কিনে দিয়েছিলেন বইটা 
বইমেলার মুক্তাঙ্গনে. 
দেখিয়ে ছিলেন  বড় হবার স্বপ্ন 
বড় লোক নয় বড় মানুষ হবার স্বপ্ন,  
সেদিন থেকে চকচকে বইটা  হলো আমার সাথী 
রক্তের বন্ধন,  
মনে হতে লাগলো সারাক্ষন নির্জনের নির্বাসন   
সে যেন আমার কোনো এক জন্মের হারিয়ে যাওয়া স্বজন 
যক্ষের ধন | 
কলেরাতে মা মারা গেলো  
খুব কাঁদলাম আমি, বইটাও কাঁদলো জোরে জোরে
কবর দিলাম মাকে জানালার ওপাশে খুব ভোরে 
তবু চোখে যেন বিড়ম্বিত জীবনের জল ঝরে 
নিভৃতে নীরবে 
কিন্তু নাড়ির টান যেন দমকা হাওয়া হয়ে জাপটে ধরে 
আঁকড়ে ধরতে চায় আরো জোরে বইটাকে 
আমার বাবার কেনা বই 
মায়ের আশীর্বাদ আর নকশিকাঁথার বই |
দিন যায়  জোনাকিরা  আলো খুঁজে 
বইয়ের কালো অক্ষরে,  
অক্ষরগুলো ঝাপসা হয়  সময়ের জলসা ঘরে | 
বাবাও বিদায় নিলো 
নিঃসঙ্গ আমি 
আর বইটা রয়ে গেলো আমার সাথে 
জানিনা তার মৃত্যু আগে নাকি আমার 
কিন্তু বিশ্বাস ঝড় তোলে 
রাতের আধার রঙিন শহরে  হয় ঝলমলে 
হাত বুলিয়ে কে যেন বলে যেতে চায় 
মানুষের মৃত্যু থাকে 
বইয়ের মৃত্যু নাই
সে থাকে অনন্তকাল অমরত্বের ঠিকানায় 
আর মায়াবতী বইয়ের পাতায় পাতায় 
জীবনের কাব্যে লেখা হয় 
এক নুতন প্রজন্মের নতুন অধ্যায় |            
            
725 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর এ দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন। শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি যেমন অবদান রেখে চলেছেন তেমনি সৃষ্টিশীল লেখার ক্ষেত্রেও তাঁর পদচারণা। তিনি মনে করেন বিজ্ঞান চর্চা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি একে অন্যের পরিপূরক। তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, গবেষক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, কবি, গীতিকার, নাট্যকার, সমাজ সংস্কারক ও সাংস্কৃতিক কর্মী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শনে বিশ্বাসী এই মানুষটির ছোটবেলা থেকেই লেখায় হাতেখড়ি। কৈশোর ও তারুণ্যে তিনি বাংলা একাডেমি, খেলাঘর, কঁচিকাচার মেলা সহ বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করেছেন। এই সময় তাঁর প্রবন্ধ, কবিতা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রকৌশল বিদ্যা অধ্যায়নের সময় তিনি প্রগতিশীল কর্মী হিসেবে কাজ করে সহিত চর্চা করে গেছেন। এ সময় তাঁর লেখাগুলো বিশ্ববিদালয়ের ম্যাগাজিনে এখনও সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও অনেকদিন ধরেই তিনি দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে লিখে চলেছেন। বাংলা ও ইংরেজি দুই সাহিত্যেই তাঁর সমান দক্ষতা রয়েছে। সমাজ, রাষ্ট্র, প্রকৃতি, বিজ্ঞান, শিক্ষা, পরিবর্তন, সম্ভাবনা ও মানুষ তাঁর লেখার মূল উপজীব্য বিষয়। তিনি একজন ভাল বক্তা। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টক্ শো সহ বিভিন্ন সৃজনশীল অনুষ্ঠানে তাকে অতিথি হিসেবে দেখা যায়। ভারতরে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় তথ্যমন্ত্রী অজিত কুমার পাঁজা কলকাতা দূরদর্শনের একটি প্রতিযোগিতায় তাঁর প্রেরিত প্রবন্ধে মোহিত হয়ে নিজ হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সে সময় সম্প্রচারিত হয়। এই খবরটি আজকাল, সংবাদ, বাংলাবাজার সহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এছাড়া তিনি ফিলিপিন্স, চীন, বি-টিভি সহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন পুরুস্কারে ভূষিত হন। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের একজন কর্মী হিসেবে তিনি কাজ করে চলেছেন।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী এর সর্বশেষ লেখা

একই ধরনের লেখা

2 মন্তব্য