সোমবার, 24 আগষ্ট 2020 17:02

এক আল্লাহ জিন্দাবাদ নির্বাচিত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(4 টি ভোট)
                উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ; 
আমরা বলিব সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ। 
উহারা চাহুক সংকীর্ণতা, পায়রার খোপ, ডোবার ক্লেদ, 
আমরা চাহিব উদার আকাশ, নিত্য আলোক, প্রেম অভেদ। 

উহারা চাহুক দাসের জীবন, আমরা শহীদি দরজা চাই; 
নিত্য মৃত্যু-ভীত ওরা, মোরা মৃত্যু কোথায় খুঁজে বেড়াই! 
ওরা মরিবেনা, যুদ্ব বাধিঁলে ওরা লুকাইবে কচুবনে, 
দন্তনখরহীন ওরা তবু কোলাহল করে অঙ্গনে। 

ওরা নির্জীব; জিব নাড়ে তবু শুধূ স্বার্থ ও লোভবশে, 
ওরা জিন, প্রেত, যজ্ঞ, উহারা লালসার পাঁকে মুখ ঘষে। 
মোরা বাংলার নব যৌবন,মৃত্যুর সাথে সন্তরী, 
উহাদের ভাবি মাছি পিপীলিকা, মারি না ক তাই দয়া করি। 

মানুষের অনাগত কল্যাণে উহারা চির অবিশ্বাসী, 
অবিশ্বাসীরাই শয়তানী-চেলা ভ্রান্ত-দ্রষ্টা ভুল-ভাষী। 
ওরা বলে, হবে নাস্তিক সব মানুষ, করিবে হানাহানি। 
মোরা বলি, হবে আস্তিক, হবে আল্লাহ মানুষে জানাজানি। 

উহারা চাহুক অশান্তি; মোরা চাহিব ক্ষমাও প্রেম তাহার, 
ভূতেরা চাহুক গোর ও শ্মশান, আমরা চাহিব গুলবাহার! 
আজি পশ্চিম পৃথিবীতে তাঁর ভীষণ শাস্তি হেরি মানব 
ফিরিবে ভোগের পথ ভয়ে, চাহিবে শান্তি কাম্য সব। 

হুতুম প্যাচারা কহিছে কোটরে, হইবেনা আর সূর্যোদয়, 
কাকে আর তাকে ঠোকরাইবেনা, হোক তার নখ চষ্ণু ক্ষয়। 
বিশ্বাসী কভু বলেনা এ কথা, তারা আলো চায়, চাহে জ্যোতি; 
তারা চাহে না ক এই উৎপীড়ন এই অশান্তি দূর্গতি। 

তারা বলে, যদি প্রার্থনা মোরা করি তাঁর কাছে এক সাথে, 
নিত্য ঈদের আনন্দ তিনি দিবেন ধুলির দুনিয়াতে। 
সাত আসমান হতে তারা সাত-রঙা রামধনু আনিতে চায়, 
আল্লা নিত্য মহাদানী প্রভূ, যে যাহা চায়, সে তাহা পায়। 

যারা অশান্তি দুর্গতি চাহে, তারা তাই পাবে, দেখো রে ভাই, 
উহারা চলুক উহাদের পথে, আমাদের পথে আমরা যাই। 
ওরা চাহে রাক্ষসের রাজ্য, মেরা আল্লার রাজ্য চাই, 
দ্বন্দ্ব-বিহীন আনন্দ-লীলা এই পৃথিবীতে হবে সদাই। 

মোদের অভাব রবে না কিছুই, নিত্যপূর্ণ প্রভূ মোদের, 
শকুন শিবার মত কাড়াকাড়ি করে শবে লয়ে-- শখ ওদের! 
আল্লা রক্ষা করুন মোদেরে, ও পথে যেন না যাই কভূ, 
নিত্য পরম-সুন্দর এক আল্লাহ্ আমাদের প্রভূ। 

পৃথিবীতে যত মন্দ আছে তা ভালো হোক, ভালো হোক ভালো, 
এই বিদ্বেষ-আঁধার দুনিয়া তাঁর প্রেমে আলো হোক, আলো। 
সব মালিন্য দূর হয়ে যাক সব মানুষের মন হতে, 
তাঁহার আলোক প্রতিভাত হোক এই ঘরে ঘরে পথে পথে। 

দাঙ্গা বাঁধায়ে লুট করে যারা, তার লোভী, তারা গুন্ডাদল 
তারা দেখিবেনা আল্লাহর পথ চিরনির্ভয় সুনির্মল। 
ওরা নিশিদিন মন্দ চায়, ওরা নিশিদিন দ্বন্দ চায়, 
ভূতেরা শ্রীহীন ছন্দ চায়, গলিত শবের গন্ধ চায়! 

তাড়াবে এদের দেশ হতে মেরে আল্লার অনাগত সেনা, 
এরাই বৈশ্য, ফসল শৈস্য লুটে খায়, এরা চির চেনা। 
ওরা মাকড়সা, ওদের ঘরের ঘেরোয়াতে কভু যেয়ো না কেউ, 
পর ঘরে থাকে জাল পেতে, ওরা দেখেনি প্রাণের সাগর ঢেউ। 

বিশ্বাস করো এক আল্লাতে প্রতি নিঃশ্বাসে দিনে রাতে, 
হবে দুলদুল - আসওয়ার পাবে আল্লার তলোয়ার হাতে। 
আলস্য আর জড়তায় যারা ঘুমাইতে চাহে রাত্রিদিন, 
তাহারা চাহে না চাঁদ ও সূর্য্য, তারা জড় জীব গ্লানি-মলিন। 

নিত্য সজীব যৌবন যার, এস এস সেই নৌ-জোয়ান 
সর্ব-ক্লৈব্য করিয়াছে দূর তোমাদেরই চির আত্বদান! 
ওরা কাদা ছুড়ে বাঁধা দেবে ভাবে - ওদের অস্ত্র নিন্দাবাদ, 
মোরা ফুল ছড়ে মারিব ওদের, বলিব - "এক আল্লাহ জিন্দাবাদ"।            
            
1315 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
কাজী নজরুল ইসলাম

কাজী নজরুল ইসলাম (মে ২৪, ১৮৯৯ – আগস্ট ২৯, ১৯৭৬) অগ্রণী বাঙালি কবি, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, সংগীতস্রষ্টা, দার্শনিক, যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকার সঙ্গে সঙ্গে প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে –- কাজেই "বিদ্রোহী কবি", তাঁর জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে। নজরুল এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স্থানীয় এক মসজিদে সম্মানিত মুয়াযযিন হিসেবে কাজও করেছিলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মত কবিতা; ধূমকেতুর মত সাময়িকী। জেলে বন্দী হলে পর লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী, এই সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল। তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন। ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল, এর পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামাসংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং অধিকাংশে সুরারোপ করেছেন যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা "নজরুল গীতি" নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়। মধ্যবয়সে তিনি পিক্‌স ডিজিজে আক্রান্ত হন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। এখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। (উৎসঃ উইকিপিডিয়া)

কাজী নজরুল ইসলাম এর সর্বশেষ লেখা

এই বিভাগে আরো: « সংকল্প বিদায়-বেলায় »

2 মন্তব্য

  • মন্তব্যের লিঙ্ক Pedrohic বৃহষ্পতিবার, 25 এপ্রিল 2024 02:20 লিখেছেন Pedrohic

    mexican drugstore online: cheapest mexico drugs - mexican drugstore online

  • মন্তব্যের লিঙ্ক KMQAPOj সোমবার, 07 আগষ্ট 2023 17:02 লিখেছেন KMQAPOj

    how was viagra discovered Table 3 Histomorphometric analyses of the degree of conjunctive tissue remodelling in alveoli at the 7th and 14th days after tooth extraction

মন্তব্য করুন

Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.