এই পৃষ্ঠা প্রিন্ট করুন
সোমবার, 24 আগষ্ট 2020 17:23

বৈরাগী আর বোষ্টমী যায় নির্বাচিত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(0 টি ভোট)
                কোথা হতে এলো রসের বৈরাগী আর বোষ্টমী,
আকাশ হতে নামল কি চান হাসলাপরা অষ্টমী।
চেকন চোকন বোষ্টমী তার ঝটরা মাথায় দীঘল কেশ,
খেজুর গাছের বাগড়া যেমন পূব হাওয়াতে দুলছে বেশ।
পাছা পেড়ে শাড়িখানি পাছা বেয়ে যায় পড়ে,
বৈরাগী কয়, তারির সাথে ফাঁস লাগায় যাই মরে।
মুখখানি তার ডাগর ডোগর ঘষামাজা কলসখানি।
বৈরাগী কয় গলায় বেঁধে মাপতে পারি গাঙের পানি।

সঙ্গে চলে বৈরাগী তার তেল কুচ কুচ নধর কায়,
গয়লা বাড়ির ময়লা বাছুর রোদ মেখেছ সকল গায়।
আকাশেরও কালো মেঘে প্রভাতেরি পড়ছে আলো,
সামনে লয়ে পূর্ণিমা চাঁদ অমাবস্যা যায় কি ভাল।
হাতে তাহার ঘুব ঘুমা ঘুম বাজে রসের একতারা,
বৈরাগী বউর রূপের গাঙ্গে মুর্চ্ছি সে সুর হয় হারা।
বৈরাগী যে চলছে পথে চলছে রসের রূপখানি,
বৈরাগী তার একতারাতে চলছে তারি সুর হানি।

হিসেব লেখে বেনের ছেলে অঙ্কে তাহার হয় যে ভুল,
নুন মাপিতে চুন মেপে কয় বৈরাগিনীর হয় না তুল।
বৈরাগী আর বোষ্টমী যায়-মহাজনের থামছে খাতা,
থামছে পালা থামছে পাথর, ওরা দুজন নয়কো যা-তা।

সিকে কড়ায় পোয়া কড়ায় ছিল যেথায় হিসাব নিকাশ,
একতারারি ঝঙ্কারেতে আনল সেথার কি অবকাশ।
কৃষ্ণশোকে রাই মরিল, তমাল লতা মুরছে পড়ে,
সাজী মশায় বান ডাকালমহাজনী খাতার পরে।
চলতে পথে সবার ঘরে হুকোর মাথায় আগুন জ্বলে।
বৈরাগী ভাই! বসো বসো তামাক খেয়েই যেয়ো চলে।
চলতে পথে বাটায় বাটায় পান ভরা হয় সবার ঘরে,
বউরা বলে, বোষ্টমী সই পান সেজেছি তোমার তরে।

বৈরাগী আর বোষ্টমী যায়, রবিবারের দিনটি নাকি
একতারারি ঝঙ্কারেতে গায়ের পথে যায় গো ডাকি।
ঘুব ঘুমা ঘুম বাজনা বাজে অবসরের ঘন্টাখানি,
পথের মাঝে যেইবা শুনে অমনি ছাড়ে কাজের ঘানি।
গাঁয়ের ধারে বটের তলে বৈরাগী আর বোষ্টমী গায়,
একতারারি তারে তারে সুরের পরে সুর মূরছায়।
ঘাসের বোঝা ফেলছে চাষী হালের গরু বেপথ যায়,
মান সায়রের কলমিনী শাম-সায়রো ভাসছে হায়।
যাক গরু আজ পরের ক্ষেতে, ধান নিড়ান থাক না ভাই,
শ্যাম গেছে আজ ব্রজ ছেড়ে কেমন করে বাঁচবে রাই?

গান গেয়ে যে বৈরাগী যায় গাঁয়ের পথে অনেক দূর,
মাঠের কাজে কৃষাণ ছেলের বুকের মাঝে কানছে সুর।
গানে গানে দেখছে যেন দুধারে ধান সবুজ সাচা,
মাঝ দিয়ে যায় বৈরাগিনী মুখখানি তার কাঁচা কাঁচা।            
            
447 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
জসীমউদ্দীন

জসীমউদ্দীন (জানুয়ারি ১, ১৯০৩ - মার্চ ১৩, ১৯৭৬) পুরো নাম জসীমউদ্দীন মোল্লা একজন বিখ্যাত বাঙালি কবি। তিনি বাংলাদেশে পল্লী কবি হিসেবে পরিচিত। তার লেখা কবর কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য অবদান। তিনি ১৯০৩ সনের পহেলা জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জসীমউদ্দীন ফরিদপুর ওয়েলফেয়ার স্কুল, ও পরবর্তীতে ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে পড়ালেখা করেন। এখান থেকে তিনি তার প্রবেশিকা পরীক্ষায় ১৯২১ সনে উত্তীর্ন হন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. এ. এবং এম. এ. শেষ করেন যথাক্রমে ১৯২৯ এবং ১৯৩১ সনে। ১৯৩৩ সনে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রামতনু লাহিড়ী গবেষণা সহকারী পদে যোগদেন। এরপর ১৯৩৮ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৯ সনে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মান সূচক ডি লিট উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি ১৩ মার্চ ১৯৭৬ সনে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। পরে তাকে তার নিজ গ্রাম বিমলগুহে সমাধিস্থ করা হয়। (উৎসঃ উইকিপিডিয়া)

জসীমউদ্দীন এর সর্বশেষ লেখা

1 মন্তব্য