উড়ানীর চর ধূলায় ধূসর যোজন জুড়ি, জলের উপরে ভাসিছে ধবল বালুর পুরী। ঝাঁকে বসে পাখি ঝাঁকে উড়ে যায় শিথিল শেফালি উড়াইয়া বায়; কিসের মায়ায় বাতাসের গায় পালক পাতি; মহা কলতানে বালুয়ার গানে বেড়ায় মাতি। উড়ানীর চরে কৃষাণ-বধূর খড়ের ঘর, ঢাকাই সীমের উড়িছে আঁচল মাথার পর। জাঙলা ভরিয়া লাউ এর লতায় লক্ষ্মী সে যেন দুলিছে দোলায়; ফাল্গুনের হাওয়া কলার পাতায়, নাচিছে ঘুরি; উড়ানী চরের বুকের আঁচল কৃষাণ-পুরি। উড়ানীর চর উড়ে যেতে চায় হাওয়ার টানে; চারিধারে জল করে ছল ছল কি মায়া জানে। ফাগুনের রোদ উড়াইয়া ধূলি, বুকের বসন নিতে চায় খুলি; পদ ধরি জল কলগান তুলি, নূপুর নাড়ে; উড়ানীর চর চিক্ চিক্ করে বালুর হারে। উড়ানীর চরে ছাড়-পাওয়া রোদ সাঁঝের বেলা- বালু লয়ে তার মাখামাখি করি জমায় খেলা। কৃষানী কি বসি সাঁঝের বেলায় মিহি চাল ঝাড়ে মেঘের কুলায়, ফাগের মতন কুঁড়া উঠে যায় আলোক ধারে; কচি ঘাসে তারা জড়াজড়ি করে গাঙের পারে। উড়নীর চরে তৃণের অধরে রাতের রানী, আঁধারের ঢেউ ছোঁয়াইয়া যায় কি মায়া টানি। বিরতী কৃষাণ বাজাইয়া বাঁশী, কাল-রাতে মাখে কাল-ব্যথারাশি; থেকে থেকে চর শিহরিয়া ওঠে, বালুকা উড়ে; উড়ানীর চর ব্যথায় ঘুমায় বাঁশীর সুরে।