দাতার প্রধান জাফর নিত্য দান করে দুঃখী জনে, তাহার তুল্য নাহি বদান্য বিশ্বাস মনে মনে | একদা সহসা উদ্যানমাঝে সান্ধ্যভ্রমণ কালে, হেরে তার দাস ক্ষুধায় কাতর বসে আছে আলবালে | দিবস শেষের তিনখানি রুটি প্রাপ্য আহার তার একে একে দিল কুকুরের মুখে,–বিচিত্র এ ব্যবহার ! কহিল জাফর, ‘ওরে কিঙ্কর, সারাদিন উপবাসী, দিবস শেষের খাদ্য তাও কুক্কুরে দিলি হাসি ? চমকি বান্দা জোড় হাতে কয়,– ‘মানুষ হয়েছি ভবে, আজিকে ভাগ্যে না হয় আহার, কালি পুনরায় হবে | খোদার এ জীবে আহার কে দিবে ? ক্ষুধায় বাঁচাবে কেবা ? মোরা যে ধরাতে এসেছি করিতে নিখিল জীবের সেবা | কহিল জাফর আঁখি ছল ছল– ‘ আবিসিনিয়ার দাস, আজিকে দর্প করিলি চূর্ণ, ছিঁড়ে দিলি মোহ-পাশ | গুরুর মন্ত্র কানে দিলি তুই, দে রে কোল, বুকে আয় ; দুর্দিনে ধীর সেরা দানবীর তুই দীন-দুনিয়ায় | রাজকোষ যে বা মুক্ত করেছে দাতা নাহি কই তারে, সেই ত্যাগ-বীর বুকের রুধির হেলায় যে দিতে পারে | রে চির বান্দা, নহিস বনদী– দিলাম মুক্তি প্রাণ, এই বাগিচার মালিক হইয়া প্রাণ ভরে কর দান |
শেয়ার করুন
প্রকাশিত বিভাগ কবিতা

কালিদাস রায়
কালিদাস রায় (২২ জুন ১৮৮৯ – ২৫ অক্টোবর ১৯৭৫) ছিলেন রবীন্দ্রযুগের বিশিষ্ট রবীন্দ্রানুসারী কবি, প্রাবন্ধিক ও পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা। তার রচিত কাব্যগুলির মধ্যে তার প্রথম কাব্য কুন্দ (১৯০৮), কিশলয় (১৯১১), পর্ণপুট (১৯১৪), ক্ষুদকুঁড়া (১৯২২) ও পূর্ণাহুতি (১৯৬৮) বিশেষ প্রশংসা লাভ করে। গ্রামবাংলার রূপকল্প অঙ্কনের প্রতি আগ্রহ, বৈষ্ণবপ্রাণতা ও সামান্য তত্ত্বপ্রিয়তা ছিল তার কবিতাগুলির বৈশিষ্ট্য। তিনি আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। তিনি রবীন্দ্র-ভাবধারায় প্রভাবিত হয়ে তিনি কাব্যচর্চা শুরু করেন। এরপরে কবিতা, ছোটগল্প, রম্য সাহিত্য ইত্যাদি রচনা করেন। 'বেতালভট্ট' ছদ্মনামে লিখিত বহু রসরচনা পাঠক সমাজে সমাদৃত ।
মন্তব্য করুন
Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.