এই পৃষ্ঠা প্রিন্ট করুন
রবিবার, 22 নভেম্বর 2020 23:16

সর্বহারা নির্বাচিত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(0 টি ভোট)
                ব্যথার সাতার-পানি-ঘেরা
      চোরাবালির চর,
    ওরে পাগল! কে বেঁধেছিস
      সেই চরে তোর ঘর?
     শূন্যে তড়িৎ দেয় ইশারা,
     হাট তুলে দে সর্বহারা,
     মেঘ-জননীর অশ্র”ধারা
      ঝ’রছে মাথার’ পর,
    দাঁড়িয়ে দূরে ডাকছে মাটি
      দুলিয়ে তর”-কর।।

    কন্যারা তোর বন্যাধারায়
      কাঁদছে উতরোল,
    ডাক দিয়েছে তাদের আজি
      সাগর-মায়ের কোল।
    নায়ের মাঝি! নায়ের মাঝি!
    পাল তু’লে তুই দে রে আজি
    তুরঙ্গ ঐ তুফান-তাজী
      তরঙ্গে খায় দোল।
    নায়ের মাঝি! আর কেন ভাই?
      মায়ার নোঙর তোল্‌।
    
    ভাঙন-ভরা ভাঙনে তোর
      যায় রে বেলা যায়।
    মাঝি রে! দেখ্‌ কুরঙ্গী তোর
      কূলের পানে চায়।
     যায় চ’লে ঐ সাথের সাথী
     ঘনায় গহন শাঙন-রাতি
     মাদুর-ভরা কাঁদন পাতি’
      ঘুমুস্‌ নে আর, হায়!
     ঐ কাঁদনের বাঁধন ছেঁড়া
      এতই কি রে দায়?

    হীরা-মানিক চাসনি ক’ তুই,
      চাস্‌নি ত সাত ক্রোর,
    একটি ক্ষুদ্র মৃৎপাত্র-
      ভরা অভাব তোর,
     চাইলি রে ঘুম শ্রানি–হরা
     একটি ছিন্ন মাদুর-ভরা,
     একটি প্রদীপ-আলো-করা
      একটু-কুটীর-দোর।
    আস্‌ল মৃত্যু আস্‌ল জরা,
      আস্‌ল সিঁদেল-চোর।
    
    মাঝি রে তোর নাও ভাসিয়ে
      মাটির বুকে চল্‌!
    শক্তমাটির ঘায়ে হউক
      রক্ত পদতল।
     প্রলয়-পথিক চ’ল্‌বি ফিরি
     দ’লবি পাহাড়-কানন-গিরি!
     হাঁকছে বাদল, ঘিরি’ ঘিরি’
      নাচছে সিন্ধুজল।
    চল্‌ রে জলের যাত্রী এবার
      মাটির বুকে চল্‌ ।।            
            
544 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
কাজী নজরুল ইসলাম

কাজী নজরুল ইসলাম (মে ২৪, ১৮৯৯ – আগস্ট ২৯, ১৯৭৬) অগ্রণী বাঙালি কবি, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, সংগীতস্রষ্টা, দার্শনিক, যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকার সঙ্গে সঙ্গে প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে –- কাজেই "বিদ্রোহী কবি", তাঁর জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে। নজরুল এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স্থানীয় এক মসজিদে সম্মানিত মুয়াযযিন হিসেবে কাজও করেছিলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মত কবিতা; ধূমকেতুর মত সাময়িকী। জেলে বন্দী হলে পর লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী, এই সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল। তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন। ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল, এর পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামাসংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং অধিকাংশে সুরারোপ করেছেন যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা "নজরুল গীতি" নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়। মধ্যবয়সে তিনি পিক্‌স ডিজিজে আক্রান্ত হন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। এখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। (উৎসঃ উইকিপিডিয়া)

কাজী নজরুল ইসলাম এর সর্বশেষ লেখা

1 মন্তব্য