রবিবার, 22 নভেম্বর 2020 23:28

ফাল্গুনী নির্বাচিত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(1 ভোট)
                সখি পাতিসনে শিলাতলে পদ্মপাতা,
   সখি দিসনে গোলাব-ছিটে খাস্‌ লো মাথা!
    যার অন্তরে ক্রন্দন
     করে হৃদি মন্থন
     তারে হরি-চন্দন
       কমলী মালা-
   সখি দিসনে লো দিসনে লো, বড় সে জ্বালা!      
বল কেমনে নিবাই সখি বুকের আগুন!
   এল খুন-মাখা তৃণ নিয়ে খু’নেরা ফাগুন!
    সে যেন হানে হুল্‌-খুনসুড়ি,
     ফেটে পড়ে ফুলকুঁড়ি
     আইবুড়ো আইবুড়ো
       বুকে ধরে ঘুণ!
   যত বিরহিণী নিম্‌-খুন-কাটা ঘায়ে নুন!

   আজ লাল-পানি পিয়ে দেখি সব-কিছু  চুর!
   সবে আতর বিলায় বায়ু বাতাবি নেবুর!
    হ’ল মাদার আশোক ঘা’ল,
     রঙন তো নাজেহাল!
     লালে লাল ডালে-ডাল
       পলাশ শিমুল!
   সখি তাহাদের মধু ক্ষরে-মোরে বেঁধে হুল্‌!

   নব সহকার-মঞ্জরী সহ ভ্রমরী!
   চুমে ভোমরা নিপট, হিয়া মরে গুমরি’।
    কত ঘাটে ঘাটে সই-সই
     ঘট ভরে নিতি ওই,
     চোখে মুখে ফোটে খই,-
      আব-রাঙা গাল,
   যত আধ-ভাঙা ইঙ্গিত তত হয় লাল!

   আর সইতে পারিনে সই ফুল-ঝামেলা!
   প্রাতে মল্লী চাঁপা, সাঁজে বেলা চামেলা!
    হের ফুটবো মাধী হুরী
     ডগমগ তরুপুরী,
     পথে পথে ফুলঝুরি
      সজিনা ফুলে!
   এত ফুল দেখে কুলবালা কূল না ভুলে!

   সাজি’ বাটা-ভরা ছাঁচিপান ব্যজনী-হাতে
   করে স্বজনে বীজন কত সজনী ছাতে!
    সেথা চোখে চোখে সঙ্কেত
     কানে কথা-যাও ধেৎ,-
     ঢ’লে-পড়া অঙ্কেতে
      মন্‌মথ-ঘায়!
   আজ আমি ছাড়া আর সবে মন-মত পায়।

   সখি মিষ্টি ও ঝাল মেশা এল এ কি বায়!
   এ যে বুক যত জ্বালা করে মুখ তত চায়!
    এযে শরাবের মতো নেশা  
     এ পোড়া মলয় মেশা,
     ডাকে তাহে কুলনাশা
      কালামুখো পিক।
   যেন কাবাব করিতে বেঁধে কলিজাতে শিক্‌!

   এল আলো-রাধা ফাগ ভরি’ চাঁদের থালায়
   ঝরে জোছনা-আবীর সারা শ্যাম সুষমায়!
    যত ডাল-পালা নিম্‌খুন,
     ফুলে ফুলে কুঙ্কুম্‌,
     চুড়ি বালা রুম্‌ঝুম,
      হোরির খেলা,
   শুধু নিরালায় কেঁদে মরি আমি একেলা!
   
   আজ সঙ্কেত-শঙ্কিত বন-বীথিকায়
   কত কুলবধূ ছিঁড়ে শাড়ি কুলের কাঁটায়!
    সখি ভরা মোর এ দু’কুল
     কাঁটাহীন শুধু ফুল!
     ফুলে এত বেঁধে হুল?
      ভালো ছিল হায়,
   সখি ছিঁড়িত দু’কূল যদি কুলের কাঁটায়!

হুগলী, ফাল্গুন ১৩৩২            
            
946 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
কাজী নজরুল ইসলাম

কাজী নজরুল ইসলাম (মে ২৪, ১৮৯৯ – আগস্ট ২৯, ১৯৭৬) অগ্রণী বাঙালি কবি, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, সংগীতস্রষ্টা, দার্শনিক, যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকার সঙ্গে সঙ্গে প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে –- কাজেই "বিদ্রোহী কবি", তাঁর জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে। নজরুল এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স্থানীয় এক মসজিদে সম্মানিত মুয়াযযিন হিসেবে কাজও করেছিলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মত কবিতা; ধূমকেতুর মত সাময়িকী। জেলে বন্দী হলে পর লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী, এই সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল। তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন। ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল, এর পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামাসংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং অধিকাংশে সুরারোপ করেছেন যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা "নজরুল গীতি" নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়। মধ্যবয়সে তিনি পিক্‌স ডিজিজে আক্রান্ত হন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। এখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। (উৎসঃ উইকিপিডিয়া)

কাজী নজরুল ইসলাম এর সর্বশেষ লেখা

এই বিভাগে আরো: « আমার কৈফিয়ৎ বধূ-বরণ »

2 মন্তব্য

  • মন্তব্যের লিঙ্ক oBSzCYw সোমবার, 31 জুলাই 2023 08:41 লিখেছেন oBSzCYw

    Previous studies have shown that angiotensin converting enzyme ACE inhibitors and angiotensin II Ang II receptor blockers reduce mortality and morbidity among patients with chronic heart failure CHF and left ventricular LV systolic dysfunction chinese viagra alternative Minor 1 flucytosine increases effects of fluconazole by pharmacodynamic synergism

  • মন্তব্যের লিঙ্ক AKEFLHQIR শুক্রবার, 14 জুলাই 2023 05:43 লিখেছেন AKEFLHQIR

    Pathogenesis of NAFLD is not yet fully understood, it s widely accepted that NAFLD is caused by the interaction of complex genetic background and environment factors 5, insulin resistance enhances the lipolysis of adipose tissue, impact a mass of free fatty acids FFA into the liver, leading to the deposition of FFA and triglycerides in the liver 6 can viagra cause a heart attack Jones is 82 years old

মন্তব্য করুন

Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.