সত্যি, এ গাঁয়েরই মেয়ে আমি। দেখলে না তো আমায় ফিরে, সে দিন! আমি কালো বলে? ধরলে না তো হাতটি আমার, একটু হেসে। বললে না তো কোনো কথা, একটু ভালোবেসে। কেন,আমি কালো বলে? দেখলে না তো কালো-হরিণ চোখ দুটি মোর, একটু চেয়ে। এই আমিতো হতেও পারি রবিঠাকুরের সেই মেয়েটি,"কৃষ্ণকলি" সত্যি, সেদিন ছিলেম আমি কৃষ্ণকলি কালো আমায় বলতো গাঁয়ের লোকে, মেঘলা দিনে দাঁড়িয়ে ছিলেম মাঠে, সত্যি, আমি দাঁড়িয়ে ছিলেম একা পথের পানে চেয়ে। বুকের জমিন শূন্য ছিল সেদিন তোমার অপেক্ষাতে। আসলে না তো সেদিন, সেই ময়না পাড়ার মাঠে, যেখানে আমি দাঁড়িয়ে ছিলেম একা আসবে বলে তুমি। মুখ ফিরিয়ে গেলে তুমি চলে। কেন?আমি কালো বলে? কালো মেঘে ছেয়ে গেল আকাশ, নামলো আঁধার আমার তমাল বনে। দমকা হাওয়ায় উড়ে গেল সবই, চুলের ভাঁজে আটকে থাকা শুভ্র পদ্মকলি। বকুল গুলি পড়লো খসে খসে। বুকের জমিন রইলো খালি, শেওলা এসে ভীড় জমালো, ফুটলো না ফুল, ভরলো ঘাসে ঘাসে। সেই তো তুমি আসলে ফিরে, আকুল হলে সব হারিয়ে। বুকের জমিন শূন্য করে, ডাকলে আবার নতুন করে। সময় গেছে শূন্য পাটে, দিন ফুরোলো ঘাটে ঘাটে। নাম যে তাহার বদল হলো, বদল হলো কালো-হরিণ চোখ। পথের পানে চেয়ে চেয়ে হারিয়ে গেছে ময়না পাড়ার মাঠ, হারিয়ে গেছে ঘন তমাল বন, হারিয়ে গেছে বকুল ঝরা ভোর। হারিয়ে গেছে কৃষ্ণকলি তোমা হতে যোজন যোজন দূর।