তখন ৬ টাকা ৯২ পয়সার যুগ, খুব বেশি দিন আগে নয়, ২০০২-০৩ সালের কথা। . অনার্সে পড়ি, নেত্রকোনার সাতপাই খান মেসে থাকি। মেসের পাশেই কবির ভাইএর ষ্টেশনারীর দোকান, ওখানে বাঁশের মাথায় লাগানো এন্টেনার সাথে লম্বা তার সংযুক্ত মোবাইল ছিল। তবে মোবাইলে কথা বলার মতো ভাগ্য তখনো হয়নি, দেশের বাড়িতে মোবাইলতো দূরে থাক, নেটওয়ার্কই যে ছিলোনা। . খদ্দের হিসেবে কবির ভাইএর সাথে বেশ খাতির থাকায় মোবাইলটা দিয়ে কোথাও ফোন করতে না পারলেও অবাক বিস্ময়ে খুবই সাবধানে মোবাইলটা নেড়েচেড়ে দেখতাম! হঠাৎ রিং এলে ট্যাঁ ট্যাঁ করতো, আমার বিস্ময় আরও বাড়ত, আর প্রতি বারেই কবির ভাইও যেন কিছুটা লাফ দিয়ে উঠে ফোন ধরে খুব স্টাইল করে বলত ‘হেইলো… আমি কবির বলছি, আপনি কে বলছেন প্লিজ……’ . কিছুদিন পর কবির ভাই আর একটা মোবাইল কিনলেন। শুনলাম ওটা নাকি রিং এলে কাঁপাকাঁপি শুরু করে, দৌড়ে গেলাম দেখতে। নোকিয়া সেট, সম্ভবত ৩৩০০ মডেলের। কবির ভাই কিছুটা আমতা আমতা করেই ওটা আমার হাতে দিয়ে বললেন ‘দুই হাতে খুব সাবধানে ধইরো, আমি ঐটা দিয়া রিং দিতেছি, কাঁপবো কিন্তু, সাবধান, ভয় পায়া হাত থাইকা ফালাইলেই কিন্তু শ্যাষ!’ আমি আরও সাবধান, অতি সাবধান হয়ে ফোনটা ধরে আছি, এই বুঝি রিং বাজলো, কেঁপে উঠলো মোবাইলটা। রিং আসে, কেঁপে উঠে মোবাইল, আমার গা কাঁটা দিয়ে উঠে, অবাক বিস্ময়ে আমিও কাঁপি। . মেসে তখনও ডাক পিয়ন আসে, ডাক পিয়ন দেখলেই বুকে একটা সুখের কাঁপন শুরু হতো, এই বুঝি মা-বাবা অথবা আপন জনের চিঠি এলো। মেসের ছেলেদের কাছে বাবা মা-র চিঠি আসে, মানি অর্ডারে টাকা আসে, টাকার ফর্মের এক্কেবারে নিচের অংশে দুই তিন লাইনের কিছু কথাও থাকে- - ‘ বাবা অমুক, ...টাকা পাঠাইলাম, ভালো মন্দ কিছু খেও, ঠিক মতো লেখাপড়া করিও। আমরা ভালো আছি, সামনের মাসে পারলে বাড়ি আইসো। ইতি, তোমার আব্বা।’ . এই অংশটা পিয়ন কেটে দিয়ে যেতো। আর এইটুকু লেখা পড়েই অনেক ছেলে কেঁদে ফেলত, খুব যত্ন করে টেবিল ক্লথের নিচে রেখে দিতো। এই লেখা গুলোই বারে বারে পড়তো। পুরো চিঠি আসলে তো কথাই নাই, খুব যত্নে অসংখ্যবার পড়তো, যত্ন করে রাখতো, কাঁপা কাঁপা বুকে চিঠিতে হাত বুলাতো মায়ের অথবা বাবার স্পর্শের অনুভূতি নিতে। . নেত্রকোনা আমার বাড়ি থেকে খুব বেশি দূরে ছিলোনা, তাই হয়তো আমি আম্মার হাতের কোন চিঠি পাইনি, যেদিন চাকরি নিয়ে আরও দূরে চলে গেলাম, তখন খুব দ্রুতই ফুরিয়ে গেছে চিঠির প্রয়োজন। হুম, মোবাইলের বাটনে দুইটা টিপ দিলেই- হ্যালো, তুমি ভালো আছ? হ্যা, ভাল আছি, খুব ব্যস্ত... ব্লা ব্লা ব্লা... . এখনো বাড়ির পুরনো আলমারিটা ঘাঁটলে হয়তো ভাইয়াদের কাছে লেখা আম্মার সেই পুরনো বেশ কিছু চিঠি পাবো, আম্মার কাঁপা কাঁপা হাতের আবেগ, কাঁপা কাঁপা ভালোবাসা... -‘প্রিয় রেজু, তুই কেমন আছিস... তোর জন্য পেটটা খুব পুড়ে, তোকে কতদিন দেখিনা, তুই কবে আসবি... খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করছিস তো বাবা?...... . সেই কত বছর আগের! অশ্রু ভেজা বুক কাঁপানো সময়, সেই অশ্রু ভেজা ভালোবাসা, পুরনো চিঠির ভাঁজে ভাঁজে ছিঁড়ে যাওয়া জমিনে বাবার অক্ষত আবেগ, অথবা মায়ের স্পর্শ, এই অক্ষরটা বাবার অথবা মায়ের হাতের, এই কমা’তে ভালোবাসা, এই দাঁড়ি’তে শাসন ...... যেন শুকিয়ে যাওয়া ফুলে- এখনো টাটকা, তরতাজা সুগন্ধ। . ৬ টাকা ৯২ পয়সা এখন ৪৮ পয়সায় ঠেকেছে, চিঠিতো এখন জীবাশ্ম! মায়ের ডাকে-ডিজিটাল ভাইব্রেশনে আজ পকেট কাঁপে, বুকের ভিতরের কাঁপনটা আর খুঁজে পাইনা... ----- রামেন,১৭/০৯/২০১৪
শেয়ার করুন
প্রকাশিত বিভাগ অনুগল্প
তানভীর মুছলিমী রামেন এর সর্বশেষ লেখা
1 মন্তব্য
- মন্তব্যের লিঙ্ক শনিবার, 05 আগষ্ট 2023 16:36 লিখেছেন zlkTORsOY
cialis for daily use You may be able to cure type 2 diabetes symptoms by limiting carb intake, child with 178 blood sugar reading drastically lowering calorie consumption, and regulating your diet in other ways
মন্তব্য করুন
Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.