কবিতার দুর্বোধ্যতা বিষয়ক - মণি জুয়েল(Moni Jewel) বছর খানেক আগে এক মহিলা কবি আমার কবিতার মতো এক লেখা তাঁকে দুর্বোধ্য মনে হলে তিনি বলেছিলেন- দুর্বোধ্য কবিতা লিখে কি লাভ, যে কবিতা কেউ বুঝবে না এমন কবিতা আমি লিখবো না, লিখতে পছন্দ করি না, পড়েও তৃষ্ণা মেটে না। সেদিন কোনো উত্তর দিই নি । কারণ দুর্বোধ্য বলেছিলেন কেন, তা বুঝি নি। কেন না আমার লেখা আমাকেই দুর্বোধ্য লাগবে এমন নয়। নিজের লেখা কাউকেই মনেহয় দুর্বোধ্য মনে হবে না। পরবর্তীতে আমাকেও অনেকের অনেক কবিতা দুর্বোধ্য মনে হয়েছে। কিন্তু সময়ের সাথে আমি সমৃদ্ধ হলে তবে সমৃদ্ধি আমার চোখে আমার মনে ধরা পড়ে এবং গ্রহন করি। কিছুদিন হলো কারো এক দুর্বোধ্য কবিতা বিষয়ক পোস্টে আমি মন্তব্য করেছিলাম- দুর্বোধ্য বলে আসলে কিছু হয় না, যতটা আমি সমৃদ্ধ ঠিক ততখানি ধরা পড়ে আমার কাছে সমৃদ্ধি। অনেকেই বলেন- সহজ সরলে লিখলেই কবিতা পাঠক প্রিয়তা পায়। উদাহরণ হিসেবে বলেন রবি ঠাকুর, কাজী কবির নাম এবং কয়েকটা কবিতার লাইন। এমন কিছু কথা শুনে মনে হতে পারে না কি যে, তারা যেন রবি ঠাকুর, কাজী কবিকে খুব ভালো করে ধারণ করেছেন? রবি ঠাকুরের বা কাজী কবির অনুভূতির সাথে তাঁদের অনুভূতি মিলে মিশে একাকার? মনে হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু আসলে কি তাঁরা সে উচ্চতায় উত্তীর্ণ? তাছাড়া তাঁদের সৃষ্টি যদি সত্যিই সহজেই বোঝা যায় তাহলে সেগুলো নিয়ে গবেষণা করার কি দরকার? ইউনিভার্সিটিগুলো অযথা তা চালু রেখেছেন কেন? শিক্ষিত সমাজ তাঁদের নিয়ে গবেষণা করতে সময় মস্তিষ্ক অর্থ ব্যয় করেন কেন? ছাপিয়ে বাজারে ছেড়ে দিলেই তো হবে। যিনি পড়বেন তিনি অনুভব করে নেবেন এবং সমাজ সমৃদ্ধ হয়েই যাবে। সহজের আড়ালে যে কত কঠিন কি লুকিয়ে তার খবর কজনই বা রাখি! কয়দিন আগেই পোস্ট করেছিলাম- শুধু মাত্র মনের বিনোদনই কবিতা নয়, কবিতা হলো মনের ভেতরের মনের চুপকথা। যে চুপকথা ভাষায় ধরা পড়ে না। শুধু অনুভবেই তা ধারণ সম্ভব, তাছাড়া কোনো পন্থা নেই আর। কিছু কিছু অনুভূতি অনুভব করতে নিজেকে আগে পাত্র তৈরি হতে হয় ধারণ করার মতো। নয়লে বরফের কাঠিন্য শূন্য হয়ে শূন্যে উবে যায় তখনকার মতো। পরে ধারণের উপযুক্ত সময়, আবহাওয়া, অবস্থা, অবস্থান হলে তখন ফের ঝরে পড়ে বৃষ্টি হয়ে, ফসল ফলে। কয়দিন আগে বাংলাদেশের এক কবিতা সাধক, (মাস্টারমশাইও সম্ভবত) তিনি কবিতা বিষয়েই কি যেন পোস্ট করেছিলেন। আমি পড়ে সব বুঝে নিলাম, তারপরেও একটি বাক্যের জন্য সব জটিল মনে হলো। বাক্যাংশটি ছিলো "বকতিয়ারের ঘোড়া"। মতামতে জানালাম বুঝতে না পারার কারণ, দুর্বোধ্যতার কারণ। পরে উনি জানালেন "মাহমুদ কবি"র কবিতার কথা। পরে কবিতাটি পড়লাম এবং তারপরে সেই পোস্টটি আবার পড়লাম। আর দুর্বোধ্য মনে হলো না। অনেকদিন আগে ফেসবুকে এক মহিলা কবির কবিতা পড়ে "অবনী বাড়ি ফেরেনি" এমন এক বাকাংশ্য পেয়েছিলাম। গোটা কবিতাতে বাড়ি ফেরা বিষয়ক কিছু পাই নি। ফলে দুর্বোধ্য মনে হলো। পরে যখন অবনী বিষয়ে জানলাম সেই ফেসবুকের মহিলা কবির কবিতাটি যেন সহজেই চোখে ভেসে উঠলো, তখন না পড়েও যেন সেদিনের পড়া কবিতাটি অনুভব করলাম। অথবা অনেক লেখা পড়তে সহজ মনে হলো বেশ উপভোগ করা গেলো। কিন্তু কিছু দিন বছর পরে সেই একই লেখা পড়তে গিয়ে নতুন কিছু আবিষ্কার হলো। এমন উদাহরণ দেওয়ার বা গল্প শোনানোর মানে হলো এই যে, আসলে দুর্বোধ্য বলে কিছুই নেই, যা কিছু আমাদেরই সীমাবদ্ধতা। সাথে যা সহজ মনে করা হলো তা আদৌ সহজ কি না ভাবা দরকার। আর কবির সব ভাব যদি আমাদের সাধারণের কাছে ধরা পড়েই যাবে তবে কবি আর বিশেষ কি ভাবলেন? একজন সাধারণ পাঠকে আর একজন কবিতে পার্থক্য কি তবে? শুধু কি ছন্দে, অন্ত্যমিলে, শব্দে রঙ মাখিয়ে সাজালেই হবে? হ্যাঁ রঙ মাখানো বা ছন্দে, অন্ত্যমিলে কথা সাজানোটা একটা কৃতিত্ব। তা স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু কবির কাজ কি শুধু তাই? কাজী কবিই মনেহয় বলে গেছেন প্রায় এমন- ভাষাহীন কে ভাষা দেওয়া, অব্যক্তকে ব্যক্ত করা কবির কাজ। তাহলে অব্যক্ত বা ভাষাহীনতার ধারণা তো আমাদের রাখতেই হবে। শুধু সমাজের কথা, সমাজের মনের কথা, সমাজের হৃদয়ের কথা, সমাজের অন্ত কথা বলে কৃত্রিম আলোড়ন শুরু করলেই তো হয় না। সেগুলো জানতে হবে তো না কি? আমরা জানি পৃথিবীর অনেক ভাবই আজও অজানা, আর অজানা মানে তার প্রকাশ নেই, ভাষা নেই। কিন্তু সেগুলোও সমাজেরই। সমাজের বাইরের নয়। সেই অব্যক্তকে ব্যক্ত করেতে হবে। সাধণা করে হাসিল করতে হবে। কিন্তু ব্যক্ত করতে গিয়ে যত সমস্যা! জটিল মনে হবে, দুর্বোধ্য মনে হবে। কারণ নতুনভাবে কিছু দেখে বা অনুভব করে তাকে নতুন ধরণে বললে সাধারণের কাছে তা সাধারণত দুর্বোধ্যই হয়। তাই তো কবিতা শুধু পড়ার বা উপভোগ করার বিষয় নয়। বিশেষত কবিতা হলো অনুভব করার বস্তু। চাদের নিজের আলো আছেই চলতো, যদি না কেউ গবেষণা করে বলতেন চাঁদের আলো নিজের নয়, সুর্যের ধার করা। কারণ সাধারণত আমরা চাঁদকে জ্বলতে দেখি। হয়তো কোনো কালে এ নিয়ে তর্ক হয়েও ছিলো। এখন আমার বুঝে গেছি বলে তা আর দুর্বোধ্য নয়। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ থেকে প্রকাশ পেয়েছিলো সুর্য ও পৃথিবীর ঘোরা-স্থির থাকা নিয়ে কিছু বই। তাতে বিজ্ঞানের অনেক বিষয়কে খন্ডন করা হয়েছিলো ঘূর্ণন বিষয় নিয়ে। কিন্তু আসল সত্য তো হলো সবাই ঘুরছে চলছে স্থীর আসলে কিছুই নয়। এমনকি আপনি পাঠক/পাঠিকা এখন বসে /শুয়ে এ লেখা পড়ছেন বটেই তবুও আপনি থেমে আছেন এমন নয়। থেমে কিছুই থাকে না। এই যে আজকের এ সত্যগুলো আজ আমরা অনেকে যারা অনুভব করেছি/ ধারণ করেছি তাদের কাছে সহজ হলেও, যারা এ অনুভব করেন নি বা গবেষণা করে জানেন নি তাদের কাছে তো দুর্বোধ্য/জটিল/ফাউ/বাকোয়াস মনে হতেই পারে। তাই বলে ফাঁকা/দুর্বোধ্য/ভুলভাল তো নয়। তেমনি কোনো কবিতাই জটিল নয়। আমরা হয়তো সব বিষয় সবসময় সব ধরণে বুঝতে পারি না। এটা আমাদের দুর্বলতা, কবির নয়। কবির কাজ কবি করে যাবেন বা আবিষ্কারকের কাজ আবিষ্কারক করে যাবেন। আমাদেরকে সেগুলো আবেগ, বোধ, বুদ্ধি চিন্তা, মস্তিষ্ক কাজে লাগিয়ে খুঁজে দেখতে হবে ভেতরে কি। আমার এতোগুলো কথার মানে এই না যে সবই দুর্বোধ্য হবে। সব তো আর দুর্বোধ্য হয় না। বিনোদনে বিনোদনের মতোই হতে হবে। আমাদের মাথায় রাখতে হবে স্থান-কাল-পাত্র। সৃষ্টিকুলের দরকারে সব, সুতারাং সৃষ্টির সব কিছুই খেয়ালে রাখতে হবে। দুইবিঘা জমি"র যেমন দরকার, তেমনি "কান্ডারি হুশিয়ার" ও। সাথে সাথে নাভীর নিচের বা সুডৌল বুক, ভারি নিতম্বের কথা যেমন ভাবতে হবে তেমনি "খাঁচার ভিতর অচিন পাখি"ও। কোনো কবিতাই যেমন দুর্বোধ্য নয়, তেমনি অকারণে দুর্বোধ্য করে লেখাটাও কবিত্ব নয়। তার চেয়েও বড় কথা হলো সহজ বা কঠিন এ বিষয়টা ঠিক স্থির নয়। কারো কাছে একটা বিষয় সহজ তো সেই বিষয়ই আবার কারো কাছে দুর্বোধ্য । সাধারণত নতুন বা নতুন ধরণের যা কিছুই সাধারণত তা একটু কঠিনই মনেহয়। যেমন আপনার এ্যান্ড্রোয়েডের কিবোর্ড। তাই কঠিন সহজ এগুলো বিচার না করে আমরা যদি প্রকৃত পাঠক পাঠিকা হতে পারি তবে সবই সহজ-সম্ভব। আমাদের বেশী বেশী করে উচিত হবে নিজেকে সমৃদ্ধ করা।
মণি জুয়েল
মণি জুয়েল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান নিকটস্থ বাবুপুর গ্রামে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মপ্রহন করেন | তিনি একজন ভারতীয় বাঙালী। ২০০৪ সালে সাহেব নগর হাইস্কুল (এইচ. এস) থেকে মাধ্যমিক এবং ২০০৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। মালদা জেলায় অবস্থিত গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশুনো শেষ করেছেন ২০১১ সালে |ছাত্র অবস্থা থেকেই শিক্ষা প্রসার, এবং বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ণ প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে আসছেন ...এই সামাজিক আন্দোলনের পথ ধরেই তিনি সমাজ বিকাশ কল্পে কলম ধরে বর্তমানে সমাজ সচেতনামূলক লেখালেখি করে থাকেন। এবার বাংলাদেশের বই মেলায় তার লেখা সামজিক মূল্যবোধক কবিতা "কবিদের নীল পদ্মে" ছাপা হয়েছে।সাথে সাথে অনান্য আরো লেখা 'একমুঠো আলো' কাব্যগ্রন্থ এবং অন্বেষা নামক ম্যাগাজিনে এই কবির কবিতা প্রকাশিত হয়েছে |
মণি জুয়েল এর সর্বশেষ লেখা
5 মন্তব্য
- মন্তব্যের লিঙ্ক রবিবার, 02 জুলাই 2023 14:44 লিখেছেন fMBjGA
who should not take viagra Safarpour S, Pirzadeh M, Ebrahimpour A, Shirafkan F, Madani F, Hosseini M, et al
- মন্তব্যের লিঙ্ক বৃহষ্পতিবার, 05 অক্টোবর 2017 12:08 লিখেছেন Epifania
Hi well done teacher i'm from peru your english is american or britanico
- মন্তব্যের লিঙ্ক শনিবার, 30 সেপ্টেম্বর 2017 09:05 লিখেছেন Maricruz
It has in no way been easier to judge between the transportation services, as all customer opinions and testimonials are gathered in ditty see on you to pick the best.
Levant awful calibre and as a culminate bad endure by consulting any
transmission website reviews. Unreservedly written testimonials will
guide you during the dispose of of selecting the one and alone rendering checking that settle upon in good shape your needs. - মন্তব্যের লিঙ্ক শুক্রবার, 08 সেপ্টেম্বর 2017 19:43 লিখেছেন Mora
It has never been easier to opt between the transportation services, as all customer
opinions and testimonials are gathered in ditty categorize as a service to you to pick
the best. Take off bad calibre and as a culminate miserable face by consulting any rewording
website reviews. Unreservedly written testimonials purpose guide
you through the activity of selecting the one and but transfiguration usefulness that settle
upon fit your needs. - মন্তব্যের লিঙ্ক শুক্রবার, 14 জুলাই 2017 19:14 লিখেছেন আহমেদ দীন রুমি
বিশ্লেষণাত্মক ঢঙে শক্ত কথা। উপকৃত হলাম।
মন্তব্য করুন
Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.