সোমবার, 09 ফেব্রুয়ারী 2015 10:44

রাখালের প্রেম জীবনের কাহিনী।

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(0 টি ভোট)
                

.....রাখালের প্রেম জীবনের কাহিনী।

গ্রামে এক রাখাল ছিল।প্রতি দিন বীলের ধাঁরে তাঁর পালিত গরু,মহিষ গুলো দিয়ে আসত।বীলের মাঝে নালার পাড়ে একটি তাল গাছ ছিল।রাখাল প্রতি দিনের ন্যায় সেই তাল গাছের নিচে এসে মনের স্বুরে বাঁশি বাঁজাত।সেই বাঁশির হৃদয় জুড়াও স্বুর শুনত এক মৌলভীর কন্যা।প্রতি দিন বাঁশির স্বুর শুনতে মেয়েটি তাঁর মা'কে ফাঁকি দিয়ে কলসি নিয়ে যেত সেই তাল গাছের নিকট দিয়ে।রাখালের বাঁশির স্বুর শুনতে মৌলভীর কন্যার খুবেই ভাল লাগত।কিছু দিন অতিবাহিত হতে না হতে রাখালের প্রতি মেয়েটির মনে ভালবাসা জন্ম নিল।মেয়েটি অনেক চেষ্টা করে তা রাখালকে বলতে,কিন্তু বলতে পারত না।অন্য দিকে রাখালও মেয়েটির প্রেমে পড়ল।রাখাল মেয়টিকে তাঁর মনের বেতর জমানো প্রেমের কথা প্রকাশ করে দিল।মৌলভীর কন্যাও রাজি হয়ে গেল রাখালের প্রেমে।তাদের দু'জনের ভাল দিন যাচ্ছিল।

কন্যার মা তাঁর মেয়ের মন মানসিকতা দেখে বুঝতে পারল,যে তাঁর মেয়ে রাখালের প্রেমে পড়েছে।কোন এক দিন কন্যার মা তার মেয়েকে জিঙ্গেস করল রাখালের ব্যাপারে।মেয়েটিও রাখালের ভালবাসার কথা তাঁর মাকে বলে দিল।

মেয়ের মা ভাবতে লাগল,যে রাতে মৌলভী ঘরে ফিরলে ওনাকে কন্যার ভালবাসার কথা জানাবে।
অতপর,মৌলভী রাতে ঘরে আসল।কন্যার মা কন্যার বাবাকে সব কথা খুলে বলে দিল।মৌলভী সাহেব চিন্তা করে তাঁহার বিবিকে বলল,আচ্ছা ঠিক আছে.রাখালের তো অনেক গাভী আছে!আর গাভী গুলো তো বেশি বেশি দুধ দেয়।কন্যার মা বলল,হ্যাঁ দেয় তো!মৌলভী বলল,যদি তাঁর সাথে আমার মেয়ের বিয়ে হয়,ভাল হবে।আমাদের আর দুধ ক্রয় করে পান হবে না।বিবি বলল,হ্যাঁ ঠিক কথাই বলেছেন।

মৌলভী সাহেব ছিল একটু লোভি।তবুও মৌলভীকে সবাই ভাল জানত।তিনি আবার মসজিদের এক জন ক্যাশিয়ার ছিল।

কন্যার মা কোন এক সময় রাখালের ছোট্ট সেই মোবাইলে মিস কল দিল।রাখাল কল Back করে বলল,আস্সালামু আলাইকুম,আপনি কে?অপর প্রান্ত থেকে কন্যার মা উত্তরে বলল.আমি মৌলভী সাহেবের স্ত্রী।রাখাল বলল,আন্টি কেমন আছেন?কন্যার মা রেগে বলল,আমি ভাল আছি.তুমি কি আমার মেয়েকে সত্যি ভালবাস?রাখাল তার মনের কথা গুলো সাহসের সাথে বলে দিল।কন্যার মা বলল,আচ্ছা ঠিক আছে,আমার মেয়ের কপালে যদি রিক্সা ওয়ালা লেখা থাকে তাহলে রিক্সা ওয়ালার সাথে বিয়ে হবে।সুতরাং তুমি অপেক্ষা কর,আমার মেয়ে পড়া লেখা করুক।রাখাল খুশি মনে অপেক্ষা করতে লাগল।মাঝে মধ্যে রাখালের সাখে মৌলভীর মেয়ের দেখা এবং কথা হত।আর প্রতি দিন রাখাল মৌলভীর বাড়ীতে তাঁর গাভীর দুধ দিয়ে আসত(বিনা মুল্যে)।

মৌলভী সাহেব মসজিদের চাঁদার টাকা সব তাঁর বিবির হাতে দিত,জমা রাখতে।এক দিন এক পায়সা ওয়ালা মৌলভীর পরিচিত ভদ্র লোক সেই মসজিদে বিশ লাখ টাকা দান করল,যেই মসজিদের ক্যাশিয়ার মৌলভী সাহেব ছিল।মৌলভী বিশ লাখ টাকা গুলো তাঁর বিবির হাতে রাখতে দিল।মৌলভী সাহেব লোভ সামলাতে পারল না।চাঁদার জমা কৃত বিশ লাখ টাকা থেকে প্রায় চার লাখ টাকা খরচ করে একটি বিলডিং ঘর বানালো এবং ব্যবসা করতে লাগলো।অপর দিকে মৌলভীর মেয়েটি পড়া লেখাও বেশি করে ফেলল।তাই মৌলভীর মনের বেতর হিংসা জন্ম নিল।

এইবার মৌলভী ও মৌলভীর বিবি সাহেব এক পন্দী বের করে রাখালকে ডেকে বলল,আমাদের তো এখন ঘর বাড়ী টাকা পয়সা অনেক হয়েছে।আমাদের মেয়েকে বিবাহ করতে হলে তোমার টাকা থাকতে হবে।তাই তুমি তোমার গরু,বাচুর গুলো বিক্রি করে বি-দেশ চলে যাও,আর তুমি যত দিন ফিরে আসবে না,তত দিন আমাদের মেয়েকে বিবাহ কোথাও দেব না।রাখাল তাঁদের কথা বিশ্বাস করল।রাখাল এক ভিন্ন দেশে চলে গেল।

মৌলভীর মেয়েকে ভাল উন্নত মানের পড়া লেখা করা'বার জন্য মৌলভী তাঁর সহ পরিবার নিয়ে শহরে চলে গেল।শহর থেকে রাখালের সাথে ফোনে সবার কথাও হত।মৌলভীও রাখালকে ভাল উপদেশ দিত।রাখালের বাবাকে মৌলভী সাহেব এক দিন বলল,আপনার ছেলে দেশে আসলে তাঁর সাথে আমার মেয়ের বিবাহ দিব,এই বলে মৌলভী সাহেব হাঁসতে হাঁসতে ব্যাকুল হইয়া পড়িল.রাখালের বাবা সহজ সরল মানুষ ছিল,তাই রাখালের বাবা মৌলভীর হিংসা মাখা হাঁসি বুঝতে পারেনি।যাক তবুও দিন কাল ভাল যেত সবার।

হঠাত্‍ মৌলভী সাহেব রাখালকে না জানিয়ে তাঁহার মেয়ের জন্য এক শিক্ষিত মাস্টারের সাথে বিয়ের কথা ঠিকটাক করে ফেলল।তবে সে বিয়েতে মৌলভীর মেয়ে রাজি না থাকায় তাঁর মেয়েকে শপত দিল,যে তুমি যদি মাস্টারকে বিবাহ করতে রাজি না হও,আমি বিষ খেয়ে মরে যাব।মেয়ে ভয় পেয়ে রাজি হল বিয়েতে।

অন্য দিকে রাখাল এই সব কথা জানতে পারল।রাখাল মৌলভী সহ মৌলভীর বাড়ীর সবার সাথে ফোনে যোগাযোগ করল,কিন্তু মেয়ের সাথে যোগাযোগ করতে দিল না।সবাই রাখালের সাথে ছোট মন নিয়ে কথা বলা শুরু করে দিল।রাখাল পথ না পেয়ে সেই মাস্টারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করল।মাস্টার সাহেবও বিয়েতে রাজি,রাখাল তা বুঝতে পারল তাঁহার(মাস্টার)সাথে কথা বলে।মাস্টার মহোদয় রাখালের মামা হয়ে গেল(কোন এক সম্পর্কে)।রাখাল এবং মাস্টারের সাথে ফোনে ভাল কথা বার্তা হল।

এখন রাখাল,রাখালের দেওয়া ওয়াদাতে অঠঁল আসে।রাখাল ছোট হলেও,তাঁর ওয়াদা রক্ষা করতে প্রস্তুত।
রাখাল মনে মনে চিন্তা করে আর বলে.হয়তো মৌলভীর মেয়েও তাকে ভুলে গেছে।রাখালের সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করেছে,মৌলভী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা তা রাখাল বুঝতে পারল।রাখাল মেয়েটিকে কোন দিনও ক্ষমা করবে না।রাখালের অভিশাপ আজীবন মেয়েটির উপর থাকবে।

রাখাল শুধু বলে,মৌলভীর মেয়ে কোন দিন সূখি হতে পারবে না।মাস্টারের সাথে মেয়েটির কোন দিন মিল হবে না।অভিশাপে মেয়েটির জীবন শেষ হয়ে যাবে,এক দিন।রাখাল অতীতে এরকম অভিশাপ্ত অনেক নারীর অবস্তা দেখে ছিল।মৌলভীর মেয়ের অবস্তাও দেখবে রাখাল।

রাখাল এখন আগের সেই গরুর রাখাল নাই।রাখালের জীবন বদলে গেছে,কিন্তু রাখাল তার মন মানসিতা তথা মৌলভীর মেয়ের প্রতি ভালবাসা বদলাতে পারেনি।মৌলভীর মেয়ের প্রতি আজীবন রাখালের ভালবাসা এবং অভিশাপ দু'টাই থাকবে।

রাখালের জন্য মেয়েটি এক দিন কাঁদবে,এটাই রাখালের মনের আশা।
.
.
.
গল্প লিখলাম,এক রাখালের জীবন থেকে।

জামশেদ (বদরী)
ওমান থেকে

2502 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
নুরুন্নবী জামশেদ

আমি মুসলিম।মুসলিম ঘরে আমার জন্ম। নাম:-মোহাম্মদ নুরুন্নবী বিন হাছান (জামশেদ), পিতার নাম:-মোহাম্মদ হাছান আলী, মায়ের নাম:-রাশেদা খানম। জন্ম তারিখ:-০২/০৪/১৯৯২ ইং, গ্রাম:-ছনুয়া পাড়া, ডাক+ইউনিয়ন:-বদর খালী(৪৭৪২), উপজেলা:-চকরিয়া।, জেলা:-কক্সবাজার। শিক্ষাঙ্গণ:-বদরখালী এম,এস ফাজিল (ডিগ্রী)মাদ্রাসা। মোবাইল নাম্বার:০০৯৬৮-৯৩৩২১৬১০ ২০১১ সালে বাংলাদেশ মাদ্রাসা বোর্ড হতে দাখিল(GPA=4.56)শেষ করি। ২০১৩ সালের শেষ দিকে আলিমের টেষ্ট পরীক্ষা শেষ করি,ফাইনাল দেওয়ার পূর্বে,.. ১৩/০১/২০১৩ ইং তারিখ আমি আমার জন্ম ভুমি প্রাণে দেশ,বাংলাদেশ থেকে প্রবাসের উদ্দেশ্যে ওমান চলে আসি।মনের যত কথা কিছু লেখি।

এই বিভাগে আরো: আমার গ্রাম বদরখালী। »

2 মন্তব্য

  • মন্তব্যের লিঙ্ক CFChFclBK শনিবার, 22 জুলাই 2023 15:51 লিখেছেন CFChFclBK

    There s a lot of dementia in my family and I always forgot my keys, wallet and phone, but after dropping all carbs I have a much better memory best price cialis

  • মন্তব্যের লিঙ্ক নূর-ই-আলম সোমবার, 09 ফেব্রুয়ারী 2015 17:20 লিখেছেন নূর-ই-আলম

    আপনাকে স্বাগতম বাংলা সাহিত্য পরিষদ...ভালো লিখেছেন।

    একজন লেখক প্রতিটি অঙ্গনে দিনে একটির বেশী লেখা পোস্ট করতে পারবেন না, এইটা নীতিমালা বিরোধী। আপনার দুইটি লেখা পেন্ডিং আসে, এইগুলো কাল প্রকাশ হবে, ভবিষ্যতে এমন হলে লেখা মুছে দেওয়া হবে

মন্তব্য করুন

Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.