বৃহষ্পতিবার, 12 অক্টোবর 2017 23:00

সময়ের গল্প নির্বাচিত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(0 টি ভোট)
                সময়ের গল্প

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

১
মানুষ কখন মারা যাবে কেউই জানেনা | মৃত্যুর বিষয়টা অনেক রহস্যপূর্ণ | কিন্তু  একজন মানুষ প্রতিদিন ভাবতো সে হয়তো আগামীকাল মারা যাবে | ফলে হালছাড়া  নৌকার মাঝির মতো তার অবস্থা ছিল | অফিসের কাজগুলোও সে ঠিকভাবে  করতো না | সংসারের ব্যাপারেও সে খুব উদাসীন্যে ছিলো | ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার প্রতিও তার কোন লক্ষ ছিলোনা | তার স্ত্রীর প্রতিও তার যেন কোনো ধরনের দায়বদ্ধতা ছিলোনা | অনেকটা ছন্নছাড়া হয়ে চলতো সে | তার এই ধরণের আচরণের কারণে সে চাকুরী হারালো | তার স্ত্রী তাকে ত্যাগ করলো | ছেলে মেয়েরা মানুষ হলোনা | কিন্তু সে অনেকদিন বেঁচে  রইলো | এখন তার বয়স আশি ছুঁই ছুঁই | এখন সে ভিক্ষে  করে কোনোমতে জীবন ধারণ করে | এখন সে ভাবে যদি সে আগের জীবনটা ফিরে পেতো, তবে সে জীবনটাকে আবার নুতন করে সাজাতো | কিন্তু সময় কখনো ফিরে আসেনা |  সময় বড় নির্মম | আরেকজন মানুষ ছিল সে  ঠিক তার বিপরীত চিন্তা করতো | সে ভাবতো আগামীকাল আমি ঘুম থেকে আবার জেগে উঠবো আর নুতন করে শুরু করবো আরো একটি দিন | সে অফিসে খুব ভালো কাজ করছিলো | ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খবর তিনি সব সময় রাখতেন | স্বামী হিসেবে  স্ত্রীর প্রতি তার  যে  দায়িত্ব ছিল তা সে যথাযথ পালন করতো | সে তর তর করে ভালো কাজের জন্য পদোন্নতি পেলো | অফিসের সবচেয়ে বড় পদে সে অধিষ্ঠিত  হলো | ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হলো | তার   স্ত্রীর  কাছে  সে মহানায়ক হয়ে গেলো | এখন মানুষটির অবসর জীবন তার স্ত্রী, ছেলে মেয়ে, নাতি নাতনি নিয়ে  খুব আনন্দে কাটছে | এটাই জীবন | যেখানে মানুষ সময়ের সাথে চলতে পারে | আর সময়ের সাথে চলতে পারলে জীবন আরো সুন্দর ও আলোকিত হয় |
২
সবাই বলে সময় কারো জন্য বসে থাকেনা | সময় দুরন্ত জল তরঙ্গের মতো বয়ে চলে | যেমন নদী  বয়ে চলে সমুদ্রের পানে | মেঘ বৃষ্টি হয়ে আকাশ থেকে  ঝরে পড়ে মাটির পৃথিবীতে | তেমনি মানুষের জন্য সময় বসে থাকেনা | তবে কোনো এক অঁজপাড়া গায়ে একজন মানুষ বাস করতো | তার দর্শনটা ছিল ভিন্ন ধরণের | সে বলতো আমি সব সময় সময়ের চেয়ে আগে চলি আর  সময় সব সময় আমার পিছনে থাকে | তার দর্শনের বিষয়টা এক কান থেকে আরেক কান হয়ে ঐ রাজ্যের রাজার কানে গেলো | রাজা বিষয়টা শুনে খুব কৌতুহলী  হলেন | তিনি অঁজপাড়া গায়ের লোকটিকে তার সৈন্য দিয়ে ধরে আনলেন | পরের দিন রাজা রাজসভায় লোকটিকে নিয়ে আসলেন | রাজা লোকটিকে তার দর্শনের  বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে বললেন  আর সাথে সাথে এইও বললেন তোমার কথা যদি মিথ্যে হয় তবে তোমার গর্দান নেবো | লোকটি বললো আমি একজন বিজ্ঞানী | আমি কয়েকটি বিজ্ঞানের সূত্র আবিষ্কার করেছি  যেটির উপর পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত গবেষনার কাজ করা যাবে | যেমন ধরুন নিউটনের যে  বৈজ্ঞানিক সূত্রগুলো আবিষ্কৃত হয়েছে তা আজও বিভিন্ন ধরণের আবিষ্কার আর গবেষণার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হচ্ছে | আর পৃথিবী ধ্বংস হবার পূর্বদিন পর্যন্ত তা চলতে থাকবে | নিউটন  মারা গেছেন কিন্তু তিনি বর্তমান সময়ের বিভিন্ন আবিষ্কারের মাধ্যমে বেঁচে  আছেন | যা আজ আমরা অসম্ভব ভাবছি নিউটনের সূত্র ব্যবহার করে হাজার বছর পড়ে এমন কিছু আবিষ্কার হবে যা পৃথিবীর বর্তমান ধারণাকে পাল্টে দিবে | আমার বৈজ্ঞানিক সূত্রগুলো আগামীদিনের  মানুষের চিন্তার খোরাক যোগাবে আর নুতন নুতন আবিষ্কার আগামী পৃথিবীকে অবাক করবে | তাহলে রাজা মশাই বলুন আমি সময়ের চেয়ে এগিয়ে আছি কিনা | আমি হয়তো মারা যাবো | কিন্তু আমার অবদান আগামীদিনের আবিষ্কারগুলোর মধ্যে বেঁচে থাকবে | এখন থেকে একলক্ষ বছর পরেও মানুষকে স্বীকার করতে হবে তার  আবিষ্কার আর গবেষনার মূল ভিত্তি ছিল আমার সূত্রগুলো | রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন আমি কি সময়ের আগে চলি | লোকটি বললো না | এ পৃথিবীতে কত বড় বড় রাজা মহারাজা এসেছে কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ইতিহাসের গর্ভে তারা হারিয়ে গেছে | মানুষ সময়কে জয় করতে পারে তার মৌলিক জ্ঞানের মাধ্যমে, কারণ মৌলিক জ্ঞান মানুষকে আজীবন বাঁচিয়ে রাখে কিন্তু ক্ষমতা হারিয়ে যাই কালের গর্ভে | এটাই দর্শন | যেখানে সময় একজন মানুষকে অতিক্রম করতে পারেনা |
৩
কথায় বলে সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করেনা | মাদার  তেরেসা বলেছিলেন “গতকাল চলে গেছে, আগামীকাল এখনো আসেনি, আমরা আজকে আছি | আসুন নুতন করে শুরু করি |” আলবার্ট আইনস্টান বলেছিলেন ” সময় একধরণের বিভ্রম” | বেঞ্জামিন ফ্ল্যাঙ্কিন বলেছেন ” তুমি দেরি করতে পারো কিন্তু সময় করবেনা “| কিন্তু  একজন মানুষ সময়কে কিভাবে আটকে রাখা যায় এ বিষয়ে অনেকদিন ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন |  তিনি ভাবলেন আকাশের পাখিকে যদি খাঁচায় বন্দি করা যায় তবে সময়কে কেন যাবেনা | নদী শাসন করে যদি বাঁধ দেয়া যায় তবে সময়কে কেন শাসন করা যাবেনা | মানুষের সততা ও বিবেককে যদি টাকা দিয়ে কেনা যায় তবে সময়কে কেন যাবেনা | সৌরশক্তিকে যদি সোলার প্যানেলের মাধ্যমে  ধরে রাখা যায় তবে সময়কে কেন ধরে রাখা যাবে না | লোকটির সময়কে ধরে রাখার চেষ্টা অব্যাহত আছে | সবাই লোকটাকে বোকা ভাবতে পারে | তবে তার প্রচেষ্টা যে একদিন সফল হবেনা তা কি কেউ বলতে পারে | কারণ বিশ্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে বহুদূর |
এখানে শিক্ষণীয় বিষয় গুলো হলো
১ | মানুষ একদিন মারা যাবে এটা যেমন সত্য, তার চেয়েও বড় সত্য হলো মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে যাওয়া |
২| একজন বিজ্ঞানী তার মৌলিক আবিষ্কারের মাধ্যমে সময়ের চেয়ে আগে চলতে পারে | প্রত্যেককে  সৃজনশীল হতে হবে ও সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে তবে সে তার মৌলিক অবদান ও চিন্তাশক্তির  মাধ্যমে সময়কে ধরে রাখতে পারবে |
৩| পৃথিবীর অনেক বিস্ময়কর আবিষ্কারের মধ্যে আগামীদিনের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার হতে পারে যদি কেউও সময়কে ধরে রাখতে পারে |  এটা আজ হয়তো অসম্ভব বলে মনে হতে পারে  কিন্তু একদিন সম্ভব হতেও পারে | কারণ পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছুই নেই |            
            
782 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর এ দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন। শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি যেমন অবদান রেখে চলেছেন তেমনি সৃষ্টিশীল লেখার ক্ষেত্রেও তাঁর পদচারণা। তিনি মনে করেন বিজ্ঞান চর্চা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি একে অন্যের পরিপূরক। তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, গবেষক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, কবি, গীতিকার, নাট্যকার, সমাজ সংস্কারক ও সাংস্কৃতিক কর্মী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শনে বিশ্বাসী এই মানুষটির ছোটবেলা থেকেই লেখায় হাতেখড়ি। কৈশোর ও তারুণ্যে তিনি বাংলা একাডেমি, খেলাঘর, কঁচিকাচার মেলা সহ বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করেছেন। এই সময় তাঁর প্রবন্ধ, কবিতা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রকৌশল বিদ্যা অধ্যায়নের সময় তিনি প্রগতিশীল কর্মী হিসেবে কাজ করে সহিত চর্চা করে গেছেন। এ সময় তাঁর লেখাগুলো বিশ্ববিদালয়ের ম্যাগাজিনে এখনও সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও অনেকদিন ধরেই তিনি দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে লিখে চলেছেন। বাংলা ও ইংরেজি দুই সাহিত্যেই তাঁর সমান দক্ষতা রয়েছে। সমাজ, রাষ্ট্র, প্রকৃতি, বিজ্ঞান, শিক্ষা, পরিবর্তন, সম্ভাবনা ও মানুষ তাঁর লেখার মূল উপজীব্য বিষয়। তিনি একজন ভাল বক্তা। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টক্ শো সহ বিভিন্ন সৃজনশীল অনুষ্ঠানে তাকে অতিথি হিসেবে দেখা যায়। ভারতরে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় তথ্যমন্ত্রী অজিত কুমার পাঁজা কলকাতা দূরদর্শনের একটি প্রতিযোগিতায় তাঁর প্রেরিত প্রবন্ধে মোহিত হয়ে নিজ হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সে সময় সম্প্রচারিত হয়। এই খবরটি আজকাল, সংবাদ, বাংলাবাজার সহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এছাড়া তিনি ফিলিপিন্স, চীন, বি-টিভি সহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন পুরুস্কারে ভূষিত হন। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের একজন কর্মী হিসেবে তিনি কাজ করে চলেছেন।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী এর সর্বশেষ লেখা

1 মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.