রবিবার, 21 জানুয়ারী 2018 22:18

টিনা ও পানির ভূত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(2 টি ভোট)
                টিনা ও পানির ভূত
তুফান মাজহার খান

সেদিন টিনা তার দাদীমার কাছে একটা ভূতের গল্প শুনেছিল। ভূতটা নাকি খুব খারাপ ধরনের ছিল। যেমন তার চেহারা কদাকার ছিল ঠিক তেমনই তার কর্মকাণ্ডগুলোও ছিল খুব খারাপ। যেখানে যাকে একা পেত সেখানেই তাকে ভয় দেখানোর পায়তারা করতো। তবে কাউকে আঘাত করতো না বা মেরেও ফেলতো না। শুধু একেক সময় একেক রূপ ধারণ করে ভয়ের সঞ্চার করতো ভূতটি। কখনো ভিক্ষুক সেজে, কখনো অন্ধ সেজে মানুষের সামনে আসতো। গ্রামের সকল মানুষ ভূতের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল। লোকজন দলে দলে গ্রাম ছেড়ে পলায়ন করছিল। সেসময়ই নাকি টিনার দাদু পুরো পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে এসেছিলেন।
কিছুদিন পর গ্রামের মধ্যে এক পরামর্শ সভা ডাকা হলো। ভূত কিভাবে তাড়ানো যায় সে ব্যাপারে লোকজনকে জিজ্ঞাসা করা হলো। একেকজন একেক পরামর্শ দিল। একজন বললো তার পরিচিত এক বৈদ্য আছে যিনি ভূত ছাড়ানোর ওস্তাদ। গ্রাম থেকে এমনভাবে ভূতকে বিতাড়িত করবে যে তার সাত পুরুষ আর এদিকে আসার নাম পর্যন্ত নেবে না। কিন্তু শর্ত হচ্ছে সে বৈদ্যকে খুশি করে দিতে হবে। অর্থাৎ সে যা চায় তাকে তাই দিতে হবে। গ্রামের মাতব্বর কেরামত আলী বললো, তুমি বৈদ্যকে খবর দাও যা লাগে আমি তাই দেব। কিন্তু এ গ্রাম জনমানবশূন্য হতে দেব না। পরদিন বৈদ্য এলো। হাতে ঝাড়ু, কাঁধে ঝোলানো থলে আর মাথায় জটলা চুল। গ্রামের সব উৎসুক মহিলা,পুরুষ, শিশু সবাই একত্রিত হলো। চোখ-মুখ ভরা কৌতুহল নিয়ে সবাই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো বৈদ্যের মুখের দিকে। বৈদ্য বললো, এ বড় খাটাস প্রকৃতির ভূত। কিছুতেই কাছে আসছে না। অনেক চেষ্টার পর একটা শো.... করে আওয়াজ হলো এবং বৈদ্যের সামনে ধরানো প্রদীপটা নিভে গেল। সবাই বুঝলো যে ভূত চলে এসেছে। কিন্তু কেউ কিছু দেখতে পেল না। সবাই নিস্তব্ধ হয়ে গেল। প্রথমে বৈদ্য মন্ত্রপূত পানি ছিটিয়ে ভূতকে আটকে নিল। তারপরই জোর আওয়াজে বৈদ্য বলতে লাগলো, অই বদবখত ভূত তুই গ্রামের মানুষকে ভয় দেখাস ক্যান? ভূত বললো, মাফ করো আমায়, মাফ করো আমায়। আমার ভুল হয়েছে। আমি আর কোনোদিন এমন করব না। তবু আমাকে শাস্তি দিও না। বৈদ্য বললো, না, তোকে ছাড়ব না। তোকে শিশিতে ভরে সাগরে নিক্ষেপ করব। ভূতটি এবার কেঁদেই ফেললো এবং বললো, আমি আসলে মানুষকে ভয় দেখিয়ে মজা পেতাম সেজন্য এমন করতাম। আমি কথা দিচ্ছি আমি আর কখনো এমন করব না। এখন থেকে মানুষের উপকার করব।
সবাই ভূতের কান্না এবং কথা শুনতে পেল। বৈদ্য আবার বললো, ঠিক আছে যদি তাই করিস তাহলে তোকে এবারের মতো ক্ষমা করলাম। কিন্তু ভবিষ্যতে এমন করলে কিন্তু আর বাঁচবি না।
ভূতকে এবারের মতো ছেড়ে দেওয়া হলো। কবিরাজ গ্রামবাসীদের বললো, আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না। ভূত আপনাদের আর কোনো ক্ষতি করবে না। এখন থেকে ভূত আপনাদের উপকার করবে। আর যদি এর বিপরীত কিছু হয় তাহলে আমাকে খবর দেবেন আমি এসে একদম ভূতের চৌদ্দ গোষ্ঠীকে সাইজ করে দেব। 
বৈদ্যকে প্রচুর দক্ষিণা দিয়ে বিদায় করা হলো। এখন গ্রামবাসী একদম শঙ্কামুক্ত। বেশ ভালোই যাচ্ছিল দিনকাল। হঠাৎ একদিন প্রচুর বর্ষণ শুরু হলো। টানা তিনদিনের বৃষ্টিপাতে পুরো গ্রাম ডুবে গেল। মানুষ গাছে এবং টিনের চালে আশ্রয় নিল। মানুষ খেয়ে, না খেয়ে একেবারে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। দেখা দিয়েছিল বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ। ঠিক তখনই সেই ভূত এসে বললো, আপনারা কেউ ভয় পাবেন না। আপনাদেরকে এখনই বিপদমুক্ত করছি। এক ঘন্টার মধ্যে সব পানি নেমে গেল। পুরো গ্রাম আগের মতো হয়ে গেল। সবাই তখন খুশীতে আত্মহারা হয়ে গেল। এরপর থেকে গ্রামে আর কোনো বড় ধরনের দুর্যোগ দেখা যায়নি। তবে টিনার দাদুরা আর গ্রামে ফিরে যায়নি। 
গল্পটা টিনার কাছে খুব ভালোই লেগেছিল। সে রাতে টিনা ভূতটাকে নিয়ে প্রচুর ভেবেছে। সে ভূতটা যদি এখন ঢাকা আসতো তাহলে কতোই না ভালো হতো। কারণ কদিন ধরে ঢাকাতেও একই দুর্দশায় মানুষ ভুগছে। চারিদিকে পানি আর পানি। রাস্তা-নর্দমা,অলি-গলি সব পানিতে টইটুম্বুর। টিনা কদিন ধরে স্কুলে যেতে পারছেনা। বারান্দা থেকে রাস্তায় তাকালে মনে হয় একটা নদী বয়ে গেছে বিল্ডিংগুলোর পাশ দিয়ে। তার আবার অনেকগুলো শাখা-প্রশাখাও রয়েছে। 
এসব ভাবতে ভাবতে টিনা ঘুমিয়ে পড়ে। রাতে হঠাৎ দেখলো সে তার আম্মুর সাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছে। কিন্তু বাসার সামনে দেখলো প্রচুর পানি আর পুরো রাস্তাটাই পানিতে ভরা। তবুও তারা একটা রিকশায় উঠলো। রিকশাটার সিটটা শুধু পানির উপরে আর বাকিটা পানির নিচে। অনেক কষ্টে পা উঁচিয়ে রিকশায় বসলো তারা। রিকশাওয়ালা এক প্রকার পানিতে ডুবে ডুবেই রিকশা টানছে। হঠাৎ রিকশার একটা চাকা কোনো এক গর্তে পড়ে রিকশাটা উল্টে যায়। টিনা পানিতে ডুবে যায়। শ্বাস নিতে পারে না। কারণ টিনা সাঁতার জানে না।  টিনার মা উঠে দাঁড়ায়। টিনাকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু পায় না। হঠাৎ এক দৈত্যাকৃতির মানুষ এসে সব পানি শুষে নেয়। টিনা বেরিয়ে আসে পানির ভেতর থেকে। তার শ্বাস ফিরে আসে। সে লাফিয়ে উঠে খাটের উপর। সে ভাবে, এটা স্বপ্ন ছিল? কেমন জানি দাদীমার সেই গল্পটির সাথে স্বপ্নের ভূতটার মিল রয়েছে। ইস্, যদি বাস্তবটা এমন হতো। তাহলে আর পানিতে মানুষের এত দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। টিনা ভাবে, এটা কি শুধুই প্রকৃতির দোষ নাকি আমরাই এরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টিকারী?

টিনা তার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় না।            
            
806 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
তুফান মাজহার খান

কবি পরিচিতিঃ তুফান মাজহার খান তরুণ প্রজন্মের কবি, ছড়াকার ও কথাসাহিত্যিক। তিনি ১ ডিসেম্বর ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর (থানা) পৌর এলাকার লোহাগাছ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোঃ মোশাররফ হোসেন (অবঃ সার্ভেয়ার) এবং মাতার নাম হালিমা আক্তার (গৃহিণী)। শিক্ষা জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি সেখানেই পার করেছেন। তিনি ২০০৬ সালে লোহাগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি তথা পিইসি পাস করেন। তারপর ২০১৩ সালে শ্রীপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৫ সালে শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ঢাকা কলেজে দর্শন বিভাগে ২য় বর্ষে অধ্যয়ন করছেন। তার লেখা ছড়া, কবিতা, গল্প বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, মাসিক ম্যাগাজিন এবং বিভিন্ন ওয়েব পোর্টালে প্রকাশিত হয়। অমর একুশে বইমেলা ২০১৭ তে তার সাতটি যৌথ বই প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে চারটিতে কবিতা, দুইটিতে ছোটগল্প ও একটিতে গীতিকাব্য ছাপা হয়। উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো মিডিয়ার পিছনের গল্প, গল্পে জীবনের প্রতিচ্ছবি, পিরিতের সাতকাহন, নিশিপদ্ম, জেগে ওঠো বাংলাদেশ, জীবনের যত কাব্য ও সেতু। ২০১৮ বইমেলায় ইনশাআল্লাহ তার ৮ টি বই আসবে। এর মধ্যে সাতটি যৌথ ও ১টি একক বই থাকবে। তার প্রকাশিতব্য উপন্যাস "অন্তিম প্রতীক্ষা"। বইটি ফেব্রুয়ারি'১৮ থেকে কিনতে পারবেন রকমারি ডট কম থেকে। তরুণ এ কবি ও কথাসাহিত্যিক তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখে যেতে চান। বিরাজ করতে চান সাহিত্যের রাজ্যে। সকলের দোয়া ও ভালোবাসা তার এগিয়ে যাওয়ায় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

3 মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.