শুক্রবার, 23 মার্চ 2018 20:14

একজন_মুক্তিযোদ্ধার_গল্প

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(0 টি ভোট)
                একজন_মুক্তিযোদ্ধার_গল্প
                  মোঃ মোশাররফ হোসেন

৭০ সালে নির্বাচন পাকিস্থানে,পূর্ব পাকিস্থানের আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতা শেখ মুজিবর রহমান।নির্বাচনে পশ্চিম পাকিস্থানকে হারিয়ে বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করে পূর্ব পাকিস্থানের মুজিব।কিন্তু তৎকালীন অত্যাচারিরা ক্ষমতার হাল ছাড়তে চায়নি।ক্ষমতায় বসতে দেয়া হলো না পূর্ব বাংলার মানুষকে।এছাড়াও বাংলার মানুষকে নানা ভাবে জ্বালাতন করতে লাগে।আর তাই ৭১ এর ৭ই মার্চ বাংলার আপোসহীন নেতা জ্বালাময়ী কন্ঠে স্বাধীনতার ডাক দিলেন।
"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম"
"এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"
আরো বললেন তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত হও।হ্যা বাংলার মানুষ তার কথা রেখেছিল তার কথা ফেলেনি।এই দিনটিকে কেন্দ্র করে ২৫শে মার্চ পাক বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ঢুকে রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত বুকে গুলি চালিয়ে নিঃসংশভাবে হত্যা করে।রাতেই শেখ মুজিবকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো।বাঙলার বুকে যেন কালো ছায়া নেমে আসলো।বাংলার মানুষ বুঝতে পারছিল না কি করবে।হ্যা মুজিব বলে গিয়েছে আমি যদি হুকুম নাও দিতে পারি তোমরা থেমে থাকবে না।সে দিন হয়তো মুজিব বুঝতে পেরেছিল এ ভাষণের পর তাকে আর বাংলায় রাখা হবে না।তার উপর যেকোন সময় হামলা হতে পারে।বাংলার মানুষ যেন সেই কথা শুনতে পাচ্ছিল "তোমরা থেমে থাকবে না"।তাইতো বাংলার দামাল ছেলে-মেয়ে,কৃষক-কৃষানি,কামার-কুমার,ছাত্র-ছাত্রী সহ সকলে জ্বলে উঠতে লাগে।ঘর থেকে বেরিয়ে পরে।শুরু হলো যুদ্ধ।দেশে গরম বিরাজ করছে।গোলাগুলি,আগুনজ্বলা, মানুষের আর্তনাদ চিৎকার দিনভর।খবরের কাগজ,টেলিভিশনের পর্দায় এক দৃশ্যই।রতনও যুদ্ধে গেছে।রতন তপুর দুলা ভাই।হ্যা তপুর কথাই বলব।তপুও একজন মুক্তিযোদ্ধা। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর বোন আর দুলা ভাইয়ের কাছেই মানুষ।কখন মা-বাবার অভাব বুঝতেই দেয়নি।যু্দ্ধ প্রায় মাঝ পথে এমন সময় হালিমাদের গ্রামের পাশে  পাক বাহিনীর ক্যাম্প করছে।গ্রামের কিছু মৌলবাদী, স্বার্থপর মানুষ এই পাক-বাহিনীকে সহয়তা করছে।দিনে রাতে গ্রাম থেকে যুবতী মেয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।লুট করছে গ্রামবাসীর ধন-সম্পদ।কারো বা শেষ সম্ভল।হালিমা ভেবে পায় না কি করবে।ছোট ভাই তপুর সাথে বলছিল কিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে খবরটা পৌঁছে দেয়া যায়।হঠাৎ চমকে দেয়া কথা শুনতে পায় হালিমা।তপু বলছে আমি যাবো খবর নিয়ে।তপুর বয়স সবে ১১ বছর মাত্র।যুদ্ধ কি দেশ প্রেম কি,রাজাকার কি ওর না বুঝার কথা।কিন্তু সেই তপু বলছে আমি যুদ্ধে যাবো।আমি খবর পৌঁছে দিব।যে নাকি বন্দুক কি বা কিভাবে ধরে জানে না সে যুদ্ধ করবে।হালিমা ভাইয়ের কথা শুনে ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগে ভাইয়া তুই পারবি?না তুই পারবি না।প্রয়োজনে আমি যাবো।না আমি ভাই থাকতে তুমি যেতে পারো না।মানুষ অপেক্ষা সাহস যেন একটু বেশিই।তপুর গ্রাম থেকে প্রায় ১৫/১৭ কিলো দুরে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প।তপু বোনকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে বাংলা মায়ের মাটি মাথা মেখে রওনা হলো।আর বলে গেল আপু আমি যদি ফিরে না আসি তুমি কান্না করবে না।জেনে নিও আমার দেশ স্বাধীব হবে পাক-বাহিনী মুক্ত করবই।জয় হবে বাংলার।এই বলে তপু ছুটলো।যাবার সময় হালিমা তপুকে একটি লাল সবুজ পতাকা হাতে দিয়ে ছিল।তপু যেতেই ছিল।কিন্তু পথ ফুরচ্ছে না। হালিমা পলকহীন নয়নে চেয়ে আছে।যে ভাইকে ছেলের আদরে বড় করছে দেশে জন্য আজ তাকে মৃত্যু কূপে ছেড়ে দিতে হলো।অনেক দুর হেটে তপু ক্লান্ত।একটু গাছের নিচে বিশ্রামের জন্য বসল।কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছে তপু জানে না।ঘুমের ঘরে তপু শুনতে পাচ্ছে তপু ওঠ তোকে খবরটা নিয়ে যেতে হবে।তুই দেশটাকে রাজাকার, আলবদর পাক-বাহিনীর হাত থেকে মুক্তি করবি।তুঁই একজন মুক্তিযোদ্ধা।তপুর শরীরে শিহরন দিয়ে উঠে। হঠাৎ তপু গুলির শব্দ শুনতে পায়।তপুর ঘুম ভাঙে।মনে হয় মুক্তি ক্যাম্পের কাছে এসে পড়েছে।কিন্তু মনে হচ্ছে মুক্তি বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলি চলছে।তবু সাহস করে তপু এগিয়ে যায়।কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই কোথা থেকে যেন একটা মরণনাশক গুলি এসে তপুর বুকটা ভেদ করে কলিজ্বার মধ্যে ঢুকে গেল।চিৎকার দিয়ে তপু বলতে লাগল বুবুরে আমি পারলাম না,আমাকে ক্ষমা করে দিস্।আমি আমার দেশটার জন্য কিছু করতে পারলাম না।কিন্তু বাংলা থেমে থাকবে না।বাংলার জয় হবেই।জয় বাংলা।বলতে বলতে তপু মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেশে লাল-সবুজ পতাকাটা বুকে চেপে চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়ল।কুদ্দুসের মেয়ে জরিনাকে ধরে নিয়ে গেল রাজাকাররা,ইজ্জত হারল,মিঠু বাবা হারাল....।
কিন্তু হ্যা মুক্তিবাহিনীরা মনে হয় তপুর আর্তনাদ চিৎকার শুনতে পেয়েছিল।বাংলাদেশ স্বাধীন হলো।রতন ফিরে এল,ফিরে এলো কত মুক্তিযোদ্ধা।কিন্তু তপু নেই।আর ফিরে এলো না....
৭ই মার্চ গেল চারদিকে শোনা যায়,
"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম"
"এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"
আজ ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস চারদিকে একই শব্দ শোনা যাচ্ছে। সবাই হয়তো সেই কষ্টের কথা,স্মৃতি ভুলে গেছে।মাথার চুল আজ কাচা রেশমি কালো থেকে সাদা হচ্ছে।কিন্তু হালিমা ভুলতে পারেনি,ভুলতে পারেনি ভাইয়ের স্মৃতি।জানালার পাশে বসে ভাইয়ের পথ চেয়ে বসে থাকে।চোখের পাতা নড়ে না,শুধু সুরুভাবে জল গড়িয়ে পড়ছে।মনে হয় এই বুঝি তপু এসে বলছে বুবু আমি এসেছি।বুবু বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।জয় বাংলা।আবার পরক্ষনেই  মনে হয় তপু বলছে বুবু আমার স্বাধীন দেশে এখনো রাজাকার আলবদর বাস করছে। মানুষ নিপীড়িত হচ্ছে।এদেশটায় এখন অন্যায় অত্যাচার হচ্ছে ধর্মের নামে,ক্ষমতার জোরে এখনও অনেকে জুলুম চালাচ্ছে।বুবু মনে হয় আবারও যুদ্ধ করতে হবে,আবারও মুক্তিবাহিনীকে খবর দিতে হবে।এভাবেই এই দিন কাটে হালিমার।এই দিন এলেই হালিমা কেমন যেন অজানায় হারিয়ে যায়।এমন সময় বাহির থেকে হারিস ডাকছে মা মা।হালিমার ভ্রম কাটে,চোখ মুছতে মুছতে বাহিরে যায়।            
            
707 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
মোঃ মোশাররফ হোসেন

আমার নাম মোঃ মোশাররফ হোসেন।পিতার নাম আঃ মান্নান বেপারী মাতার নাম মজিদা বেগম। ২৫ ডিসেম্বর শরিয়তপুর জেলার জাজিরা থানাধীন বি কে নগর কাজী কান্দি মাতুল আলয় জন্ম গ্রহন করি।পৈত্রিক নিবাস একই থানার পূর্ব নাওডোবা মঙ্গল খার কান্দি।ভাইবোনের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। এলাকার চরখাগুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেনি পাশ করি।পরে পূ্র্ব নাওডোবা পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ভর্তি হলেও বি কে নগর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জে এস সি এবং পূ্র্ব নাওডোবা পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে এস এস সি পাশ করি।বর্তমান ঢাকায় জিনজিরা পি. এম. পাইলট স্কুল এ্যান্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক চূড়ান্ত বর্ষে। পারিবারিক ও অন্যান্য কারনে পড়ালেখা বাঁধা প্রাপ্ত হয়।নিজ চেষ্টায় পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ায় পড়ালেখার গতি ধীরস্থির।এছাড়াও আমার এখন বেশি পড়তে ভাল লাগে না।তবে সাহিত্য: জীবন কাহিনী,গল্প, উপন্যাস, ছোট গল্প, স্মৃতিচারন মুলক ও স্বাবলম্বী ভাষায় লেখা বই পড়তে বেশ ভাল লাগে।আমার স্বপ্ন ছিল অনেক কিন্তু সৃষ্টি প্রদত্ত কিছু গুন ও পারিপার্শ্বিক কারনে সবার সব সম্ভব হয় না।এখন আমার স্বপ্ন সাংবাদিক হবো এবং পাশাপাশি লেখক।ছোটবেলা চাচাতো ভাইয়ের মুখে তার বন্ধুর ডাইরি ভর্তি লেখার গল্প শুনি আর স্বপ্ন দেখি আমিও লিখব।সেই স্বপ্ন থেকেই আমার কলম গতিশীল। তাছাড়া আমার লেখনির পিছনে আরো একজনের কথা না বললেই নয়, সে হলো আমার আপন বন্ধু, বন্ধু সুলভ বোন মোসাঃ রুমা আক্তার।যার উত্সাহ আমার শক্তি হিসেবে কাজ করে। মা-বাবা, বড় ভাইয়ের ভালবাসাই আমার জীবনের সম্পদ।

1 মন্তব্য

  • মন্তব্যের লিঙ্ক expalay শনিবার, 16 ডিসেম্বর 2023 21:34 লিখেছেন expalay

    Is there anything else I can do for this patient that would mitigate against complications from renal failure cialis without prescription

মন্তব্য করুন

Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.