লকডাউন প্রাণের প্রিয় শহর ময়মনসিংহ। যেখানে জন্মের পর থেকে আমার বেড়ে ওঠা, যেখানেই মা-বাবা, ভাই-বোন ও আত্মীয় স্বজনদের সাথে কাটানো সময়টাকে খুব মিস করছি। স্কুল ও কলেজের বন্ধুদেরকেও খুব মিস করছি, জীবিকার টানে এখন হয়তো আগের মতো বন্ধুদেরকে সময় দিতে পারি না তবুও অফিসের কাজের ফাঁকে সামান্য ছুটি পেলেই আবার আত্মার টানে গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে চলে যেতাম গ্রামের বাড়িতে। আমাকে দেখেই প্রিয় মা খুঁশিতে আত্মহারা হয়ে বুকে টেনে নিতো, বাবাও কম নয়, আমি বাড়িতে ফিরে এসেছি তাই বাজারের বড় মাছ বা গোশত কিনে আনতো যা রান্না করার পরে মা-বাবা ও ভাই-বোন সবাই একসাথে বসে খাওয়া দাওয়া করতাম। বাড়ীর সকলের খোঁজ খবর নিয়ে আবার চলে যেতাম বন্ধুদের কাছে, তারা সবাই কেমন আছে আর কে কোথায় বর্তমানে আছে, কেমন কাটছে তাদের বর্তমান দিনকাল এই সমন্ধে অনেক গল্প করে সময় কাটাতাম। চায়ের দোকানে চা খেয়ে আড্ডা দিতাম, আমাকে পেয়ে তারাও অনেক খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠতো। মাঝে মধ্যে সামান্য সময় নিয়েও চলে যেতাম বন্ধুদের বাড়িতে, আমাকে পেয়ে তার মা-বাবাও অনেক খুশি হয়ে উঠতেন, আর জানতে চাইতেন আমি কেমন আছি? কখন এসেছি বাড়িতে থাকবোই বা কতোদিন আরও কতো রকম কথা। আমার জন্য রান্না করতেন হরেক রকম মজার মজার রান্না করা খাবার। খাওয়া দাওয়া করে তারপর আবার ফিরে আসতাম আমাদের বাড়িতে। ২৬ মার্চ বৃহস্পতিবার দিন থেকে ভয়ঙ্কর করোনার মহামারির জন্য সারাদেশ ব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করা হয় এবং আমাদের অফিসটাও এপ্রিলের ৫ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তাই আমিও ২৭ মার্চ শুক্রবার সকাল ভোর ৬টায় গ্রামের বাড়ির উদেশ্যে বাসা হতে বের হলাম। পুলিশের চেকপোস্ট পেরিয়ে তারপর কতটা পাঁয়ে হেঁটে আর ৪/৫টা গাড়ী পরিবর্তন করে অবশেষে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম। আমাকে দেখেই আমার মা এগিয়ে আসলেন তারপর জানতে চাইলেন কখন বাসা হতে বের হয়েছিলাম আর রাস্তায় কোন সমস্যা হয়েছিলো কিনা এ সমস্ত কথা। তারপর ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে চলে গেলাম বাজারে, লকডাউন শুরু হবার আগে ২৩ মার্চ নতুন একটা Redmi 8 নামে মোবাইল ফোন কিনছিলাম। তাই ৪জি সিম কার্ড ছাড়া ভিতরে ঢোকানো সম্ভব হয় না, তাই দুটি সিম কার্ড রিপ্লেসমেন্ট করার জন্য গিয়ে দ্রুত সিম কার্ড দুটি রিপ্লেসমেন্ট করলাম। তারপর গরম চা খেয়ে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গেলাম। কয়েকজন বন্ধুর দেখা পেলেও তারা আমাকে দেখেও এড়িয়ে গেলো, এক বন্ধু মুদির দোকানের ব্যবস্যা করতো, আমাকে দেখেই সে বললো সোহেল তুই কেমন আছিস, কখন আসলি ঢাকা থেকে? তারপর সে আমাকে বললো সোহেল তুই যত দ্রুত সম্ভব বাড়িতে চলে যা, তোর ভালোর জন্যই আমি তোকে এই কথাটি বললাম, কারণ তুই ঢাকা থেকে এই লকডাউনের সময় বাড়িতে এসেছিস সেটা যদি গ্রামের চৌকিদার বা চেয়ারম্যানের লোকেরা জানতে পারে তাহলে তোর সমস্যা হতে পারে। তারপর সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি করেই বাড়িতে ফিরে আসলাম। নিজের জন্মস্থান নিজ গ্রামের মানুষগণ যেনো আমাকে চিনেও না চেনার ভান করলো, আমাকে যেনো তাদের জন্ম শত্রুর চোখে দেখে এমন মনে হলো। আজকে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে এই মহামারি করোনা নামক ভাইরাসটি, প্রতিদিন হাজার হাজার লোক আক্রান্ত হচ্ছে এই ভাইরাসটিতে, আর মৃত্যুবরণ করছে প্রতিনিয়তই। জানি না আর কতদিন এই ভাইরাসটি থাকবে আমাদের মাঝে আর কবে আসবে তার প্রতিরোধক ভ্যাকসিন। হে আল্লাহ, তুমি সমস্ত মানুষকে করোনা নামক মহামারি ভাইরাস থেকে সবাইকে হেফাজত করো, আমিন।