ধাক্কা কেন কাঁদে মন, অকারণ! ঠিক অকারণও নয়, নির্দিষ্ট একটা নিভৃত কারণে কাঁদে নমিতার মন। বাবা ডাক্তার, মা টিচার আর দাদা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার। এ রকম একটা শিক্ষিত পরিবারে জন্ম তার। সে-ও তো মহান পেশায় যুক্ত আছে দু'বছর থেকে তবে কেন এ রকম করছে! আদর-যত্নেই মানুষ হয়েছে বলে আদরের মাত্রাধিক্যে ভীষণ জেদি হয়ে উঠেছে মেয়েটা। বছর দেড়েক থেকে প্রায় শতাধিক পাত্রপক্ষ দেখে গেছে তাকে কিন্তু কি এক অজানা কারণে কোন ছেলেকেই পছন্দ হয়নি নমিতার! তার দৃষ্টিতে কেউ কালো, কেউ বেঁটে-খাটো, কেউ আবার হ্যাংলা-পাতলা ইত্যাদি ইত্যাদি। আজ ডিনারে বসে প্রসঙ্গ তুললো দাদা অভিলাষ, - শোন বোন,কালকে আমার এক বন্ধু আসবে তোকে দেখতে। এবার যদি তাকে এভয়েড করিস তবে আমার হাতে আর কোন অপশন থাকবে না। - না দাদা, আর কোন উল্টো-পাল্টা আচরণ করবো না। কানা-খোঁড়া যাই হোক, তাকেই বিয়ে করবো, খুব বিষন্ন মনে জবাব দিল নমিতা। - কানা-খোঁড়া কী বলছিস! সিনেমার নায়কের চেয়েও সুন্দর-সুদর্শন আমার এ বন্ধুটা। - আচ্ছা, আচ্ছা, বললাম তো, এক কথায় রাজী হয়ে যাবো এবারে। তোমাদেক টেনশনে রাখতে মন সায় দিচ্ছে না আর। - তোর আর আমার মোবাইল নাম্বারসহ ডিটেইলস দেয়া আছে তাকে। ফোন করলে ভালভাবে কথা বলিস ওর সাথে। মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে পড়লো নমিতা, তারপর ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো সটান। শুয়ে শুয়ে ভাবছে কেমন হবে দাদা'র এ বন্ধুটা। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো এক সময়। পরদিন ব্লু-স্টার হোটেলে চা-নাস্তা করার সময়ে প্রথম ধাক্কা'টা খেলো নমিতা। কে এই ভদ্রলোক ! সাদা ধবধবে প্যান্টের উপড়ে হালকা নীলাভ ফুলহাতা শার্ট ইন করেছেন। কুচকুচে কালো রঙের চিকন বেল্টে সিলভার কালার বকলেস। জুতা জোড়াও দুধসাদা রঙের। গোল্ডেন কালার নেকটাই এর প্রান্তভাগ নাভীর নীচে বেল্টের বকলেস ছুঁই ছুঁই করছে। একদম ক্লিন সেভড, একটু দূর থেকে লক্ষ্য করলে মনে হবে যেন এখনও দাড়ি গোফ উঠেই নি তার। লম্বাটে ফরসা মুখমন্ডলে ঈষৎ থ্যাবড়া নাক, বড় বড় গোলাকার দু’টো চোখ-বেশ মায়াবী আর নিষ্পাপ দৃষ্টি তাতে। মাথাভর্তি রেশমী কালো ঘন ব্যাকব্রাশ করা চুল। বয়স আর কত হবে! বড়জোর বত্রিশ-তেত্রিশ। আড় নয়নে দেখছে আর ভাবছে নমিতা। ব্লু-স্টার হোটেলের কর্ণার টেবিলে বসেছে ওরা, সোনিয়া, রেহেনা আর নমিতা। নমিতা রায়। একই স্কুলের টিচার তিনজন-ঝাউতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দু'বছর পূর্বে প্রথম জয়েন করেছে সে। ইতিমধ্যে সি, ইন, এড প্রশিক্ষণ শেষ করেছে। রেহেনা, সোনিয়াও যে চুপি চুপি দেখছে ভদ্রলোককে সেটাও আন্দাজে টের পাচ্ছে নমিতা। ভাবছে কে এই ভদ্রলোক! এত সুদর্শন পুরুষ আগে কখনোই দেখেনি সে। ক্যাশ-টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কী যেন অর্ডার করছে ভদ্রলোক, কর্ণার টেবিল থেকে শুনতে পারছে না নমিতারা। কিছুক্ষণের মধ্যেই এক কার্টুন মিষ্টি এনে ক্যাশ-টেবিলে রাখলো হোটেল বয়। বিল মিটিয়ে দিয়ে মিষ্টির কার্টুনটা হাতে নিয়ে, হোটেল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন সুদর্শন ভদ্রলোক। সর্বনাশ! বুকের ভিতর হৃৎপিণ্ডটা ধ্বক করে লাফিয়ে উঠলো নমিতার। ধড়ফর করে উঠতে গেল চেয়ার থেকে, শাড়ীর পাড়ে জুতোর ডগা আটকে থাকায় চেয়ারসহ উল্টে পড়ে যাচ্ছিলো প্রায়, শাড়ী সামলে নিয়ে সবাই উঠে হোটেলের বাইরে এসে খুঁজলো মনে মনে, না! নেই সুদর্শন লোকটা! বেরুতে বেরুতেই যেন হাওয়া হয়ে উবে গেছে কাথাও! মনটা খারাপ হয়ে গেল ভীষণ। ভাব দেখে সোনিয়া বলে উঠলো, - কী হলো নমিতাদি? এমন থ হয়ে ভাবছিস কী!চল না, এতক্ষণে তোর দাদা'র বন্ধুরা নিশ্চয়ই এসে গেছে। - আসুকগে সে নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই,নির্লিপ্তভাবে জবাব দিলো নমিতা। - তারমানে!কঁকিয়ে উঠলো রেহানা। সেজন্যই তো আমাদের ডেকে আনলি! আবার নির্লিপ্তকণ্ঠে বললো নমিতা, - ওরা আসলে বাসা থেকে ফোন করে ডেকে নিবে দাদা। - তার আগে সাজগোজের ব্যাপারটা আছে না তোর? - না নেই, ওসব আমার ভালো লাগে না। আমি ভাবছি অন্যকথা। - কী কথা? - কিছুক্ষণ আগে মিষ্টি কিনলো, লোকটা কে? - হবে কোন নতুন অফিসার, ট্রান্সফারে এসেছে। এলাকার কেউ যে নয়, তা তো বোঝাই যায়। কথার মাঝে হঠাৎ বলে উঠলো সোনিয়া, - আরে রেহানা আপা,শুনেছো খবরটা? - কোন খবরটা? উৎসাহী হলো রেহানা। - আমাদের শিক্ষা অফিসার স্যার, ট্র্যান্সফার হয়ে গেছেন,নতুন অফিসার এসেছেন দিনাজপুর থেকে। এ খবরেও কোন ভাবান্তর হলো না নমিতার,সে কেবলই ভাবছে, কে এই সুদর্শন ভদ্রলোক? ভাবনার মাঝে হাতে রাখা মোবাইল ফোন বেজে উঠলো ক্রিং ক্রিং শব্দে। রিসিভ করে কানে লাগালো ফোনটা, দাদা বলছে, - ও, তো এসে গেছে একা একা, শীঘ্রই চলে আয়। বাসায় ঢুকেই দ্বিতীয় ধাক্কা'টা খেলো হল্লাদিনী নমিতা। দেখলো তাদের ড্রয়িং রুমের বারান্দায় বসে দাদা'র সাথে হাসাহাসি করছে হোটেলে দেখা সেই সুদর্শন ভদ্রলোক! মুহূর্তের মধ্যেই মনের ভিতর জমে থাকা আত্ম-অহংকারের রূপসী পাথরগুলো গলে গলে জল হয়ে গেল। দাদা বললো, - আয় বোস, এ-ই হলো আমার নায়ক বন্ধু সুবিমল রায়, তোদের নতুন শিক্ষা অফিসার। আর, সুবিমল, দ্যাখ আমার আদরিনী বোনকে। "শিক্ষা অফিসার" কথাটা শুনে আনন্দাতিশয্যে তৃতীয় ধাক্কা'টা হজম করলো নমিতা সুন্দরী। অন্তরের পাথরগলা জলগুলো ততক্ষণে আনন্দধারা হয়ে ছুটে চলেছে সুখ-সাগরের দিকে।
শেয়ার করুন
প্রকাশিত বিভাগ ছোট গল্প

প্রকাশ চন্দ্র
প্রকাশ চন্দ্র জন্ম ১৯৬২ ইং ৪ঠা ডিসেম্বর । নিজস্ব চেম্বার "হোমিও প্রাকটিস সেণ্টার" (প্রধান চিকিৎসক) পিতা মৃত যোগেন্দ্র নাথ রায় । মাতা মৃত শৈলেশ্বরী দেবী রায় । তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ। ১৯৮২ সালে রংপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ থেকে ডি.এইচ.এম.এস. ডিগ্রী অর্জন করেন । এক ছেলে, প্রেমপ্রদত্ত রায় এবং এক মেয়ে প্রীতিপ্রভা রায়। স্ত্রী চামেলী রাণী রায়, কিণ্ডারগার্ডেন স্কুলের টিচার ।
প্রকাশ চন্দ্র এর সর্বশেষ লেখা
1 মন্তব্য
- মন্তব্যের লিঙ্ক
রবিবার, 16 জুলাই 2023 09:45 লিখেছেন GgfgUHIp
Angioedema caused by ACE inhibitors is a classic example of bradykinin mediated angioedema buy cialis online with prescription 1998; McDonald et al
মন্তব্য করুন
Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.