শুক্রবার, 15 মে 2015 04:01

একজন পতিতার গল্প

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(0 টি ভোট)
                :: রাত তখন
দশটা বিশ মিনিট। ফুটপাতের
হোটেলের কাঠের
চেয়ারে বসে আছি দুই বন্ধু; আমি আর
নাসির। বসে চা,আর মোগলাই
পরটা খেয়ে নাসির
একটা সিগারেটে আগুন
ধরিয়ে টানতে লাগলো।
সিগারেটের ধোঁয়ায়
কুন্ডলী পাকিয়ে আশপাশটা ভরে গেল।
আর দূষিত বায়ুতে নিঃশ্বাস
টানতে হচ্ছে দেখে খুব বিরক্ত
লাগলো। কেন যে মানুষ সিগারেট
খায় ? অযথাই কেন যে আশপাশের
পরিবেশটাকে দূষিত করে ?
বোকা লোকগুলো এর মাঝে কি সুখ
খুঁজে পায় আমার বুঝে আসেনা।
কিছুক্ষন আড্ডা দেয়ার পর দুই বন্ধু
একসাথে বাড়ির উদ্দেশ্য
রওয়ানা দিলাম; রাত তখন দ্বিপ্রহর।
ঘন্টার কাঁটা বারোটা ছুঁই ছুঁই। 
আকাশে ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ।”ছেড়া মেঘের
ফাক ফোকর গুলিয়ে   মরা জ্যোসনা এই
মধ্যরাতের প্রকৃতিকে বড়
অচেনা করে আনে। জলসিক্ত
হাসনা হেনার গন্ধ মাদকতা ছড়ায়।"
এলোমেলো ভাবতে ভাবতেই
হাটতে লাগলাম। বন্ধু নাসির,
চলে গেল তার বাড়ির পথটি ধরে।
চারদিক তখন একেবারে নিরব
নিস্তব্ধ;
পুরো শহর তখন গভীর ঘুমে মগ্ন। দূরে নিম
গাছে একটি কুক
পাখি ডেকে চলছে অবিরাম। কুক
পাখির ডাকটাই যেন কেমন!
শুনলে গা ছম ছম করে উঠে! কেমন যেন
একটা বিষাদ ও বিরহী ভাব ডাকটার
মধ্যে। সেই ডাক এই শীতের রাতের
নিঃস্তব্দতাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
আমার হাতে একটি চার্জলাইট। বড়
রাস্তা ছেড়ে যখন ছোট রাস্তায়
পায়ে হেটে চলছি। হঠাৎ করেই;
হাটা থামিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম!
মনে হল, রাস্তার একটু দূরেই কদম গাছের
নিচের ঝোপ-ঝাড় গুলো বড়
বেশী নড়া-চড়া করছে! একটু ভয়
নিয়ে আস্তে করে এগিয়ে গেলাম।
তারপর চার্জলাইটের আলো ফেলতেই
একটা তরুন দেহের মত একজন
মধ্যবয়সী লোক; হাঁজার মাইল
বেগে ছুটে পালালো। আরো একটু
এগিয়ে লাইটের
আলো ফেলে দেখলাম!
নাভীর উপরের অংশে কাপড়
ছাড়া একটা নারীদেহ; মুখে হাত
দিয়ে দুই চোখ ঢেকে চিৎ
হয়ে শুয়ে আছে। তার ভরাট দেহ যেন
বর্ষার নদীর ঢেউয়ের মত
ফুলে ফুলে উঠছে!
চোঁখ’টা সরিয়ে নিলাম।
কি বলবো তাকে ঠিক বুঝে উঠছিলাম
না।’জোরে ধমক দিলাম! এই
মেয়ে তুমি কে? কিছু বুঝে উঠার
আগেই
নারী দেহটি ড্রাইভ দিয়ে দুই
পা জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠল।
ভাইজান,আপনার আল্লাহর দোহাই
আমারে এই শহরের পতিতা বানাবেন
না। আমার কোন দোষ নাই। আবার ধমক
দিলাম, চুপ করো;কাপড় পরে নাও
তারপর
কি হয়েছে বলো?
মেয়েটি পা ছেড়ে পাশের ঝোপের
আড়াল থেকে শাড়ি নামক এক বস্তু
গায়ে জড়িয়ে এলো যা তার রঙ
হাঁরিয়েছে অনেক আগেই।
শাড়িতে কয়েকটি তালি লাগানোর
পরেও মেয়েটির দেহ ঢাকতে ব্যর্থ
হয়েছে।
এরপর ফুফিয়ে ফুফিয়ে মাথা নিচু
করে এসে সামনে দাঁড়াল।
তাকিয়ে দেখলাম, বয়সে আমার
থেকে অনেক বড় হবে তাই এবার
আপনি করেই বললাম। সে মাথা নিচু
করেই বলতে লাগলো। সে পাশের
বাড়ির মৃত বদর আলীর
ছেলে সিরাজের
স্ত্রী। তার স্বামী বিদেশে কি এক
কারখানায় নাকি চাকরি করে।
আগে বছর খানেক পর পর
বাড়ি আসত,কাপড়
নিয়ে টাকা নিয়ে।
কিছুদিন থাকত;তাকে আদর সোহাগ
করে আবার চলে যেত। দুই’ বছর
হয়ে গেল
সিরাজ আর আসেনা।
ওখানে সে আরেকটা বিয়ে করেছে;
এখন সে আর আসবে না। সে গৃহস্থ
বাড়িতে কাজ করে। অনেক যুবক
এমনকি বয়স্ক বৃদ্ধরাও তাকে কুকামের
প্রস্তাব দেয়। সে কোনোদিন
রাজি হয়নি। অনেকবার ভেবেছে এই
শহর ছেড়ে; স্বামীর ঘর
ছেড়ে চলে যাবে সে। কিন্তু
ঘরে অসুস্থ
শ্বাশুড়িকে রেখে কিভাবে যাই ?
এটি মায়া স্বরেই বলল সে।
আমি অবাক হলাম! যে স্বামী তার
খোঁজ খবর
না নিয়ে আরেকটা বিয়ে করে সুখে থাকতে পারে অথচ
তারি বৃদ্ধ অসুস্থ মায়ের দায়িত্বভার
বহন করছে সে। আমি অবাক
দৃষ্টিতে শুনতে লাগলাম তার
কথাগুলো। প্রতিদিন
একবেলা খেয়ে দিন কাটায় তাও
আবার জোটেনা ঠিকভাবে।
না খেয়ে ঘরে বসে থাকে সে।
বাহিরে বেরুলেই তার জন্য খারাপ
প্রস্তাব
নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অনেকেই।
সে আর যায়না কাজে। নিজে না হয়
না খেয়ে মরে যাব তাতে দুঃখ নেই
কিন্তু বৃদ্ধ শ্বাশুড়ি ক্ষিদের জ্বালায়
যখন চটপট করে তখন আর সহ্য হয়না। সবাই
তাকে শাড়ি, টাকার লোভ দেখায়।
কাপড়ের অভাবে অন্য কোথাও
কাজের
জন্য যেতে পারিনা। তাই শ্বাশুড়ির
চিৎকারে আজ এই লোকটির কথায়…
বলতে গিয়ে………..আবার
কেঁদে উঠলো।
এবার আর ধমক দিলাম না!
কাছে গিয়ে আস্তে তার মাথায়
হাত
রাখলাম।
মেয়েটি ভয়ে ভয়ে মাথাটা সোজা করলো।
তার ঠোট দু’টো মাছির পাখার মত
কাপছে; ভয় আর লজ্জায়
মেয়েটি একখন
আর কথা বলতে পারছে না।
আমি বললাম,আপনি কোন
চিন্তা করবেন না। এ
কথা আমি কাউকে জানাবো না।
কথাটি শুনে মেয়েটি একটা নিঃশ্বাস
ছাড়ল। মনে হল,হয়তো বুকের উপর
চাপানো একটন ওজনের একটা পাথর
এইমাত্র সরে গেল।
জিজ্ঞেস করলাম আপনার নাম কি?
খুব বিরক্ত আর তাচ্ছিল্ল স্বরে উত্তর
দিল সান্তা। আমি বললাম,
চিন্তা করবেন না। এখন আপনি যান।
ছিড়া,তালিযুক্ত কাপড়টাকে কোন
মতে গায়ে জড়িয়ে; ক্লান্ত
দেহটা বয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল
মেয়েটি।
আমি তবুও দাঁড়িয়ে আছি-
ভাবছি, নিজেকে ভীষন
অপরাধী মনে হল, আমি অসাধারন
কেউ
নই। সমাজ সংস্কারকও নই, অতি তুচ্ছ
একজন
মানূষ;তবুও মনের পর্দায় জেগে উঠলো,
জীবনে দেখা অনেক মহিলার কথা।
যাদের
কাছে শাড়ি লজ্জা নিবারনের জন্য
কোন মূল্যবান বস্তু নয়। শাড়ি তাদের
জন্য
ফ্যাশন। টিভির পর্দায়,খবরের কাগজে,
মানুষের মাঝে নিজেকে আকর্ষন
করে তোলার এক উপদ্রব। কোন এক
বিশেষ
দিনে নিজেকে বিকশিত
করে তোলার এক আবরণ।
আলমারীতে শোভা করে রাখা এক
অহংকার। তাই আজ মনে পড়ল সেই সব
শাড়ি পরিহিতাদের কথা; যাদের
নামি-দামী বর্ণাঢ্য শাড়ির
ঝলকানিতে চোঁখ
ঝলসে গিয়েছে কিন্তু চোখে 
পানি আসেনি।
অথচ আজ এই চেড়া-তালিযুক্ত
আশি,নব্বই
টাকার অতিসাধারন
একটি শাড়ি,তা দেখে চোঁখে পানি চলে আসলো,কেন
জানিনা।            
            
1046 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
আবিদ আল আহসান

বলার মতো জীবনী নেই

এই বিভাগে আরো: « পরিক্ষা অপুর বিয়ে »

3 মন্তব্য

  • মন্তব্যের লিঙ্ক Unrella শুক্রবার, 03 নভেম্বর 2023 12:32 লিখেছেন Unrella

    how long does erection last with viagra You ll be asked to lie flat with your right leg straight for 1 to 4 hours

  • মন্তব্যের লিঙ্ক zbFzkzN বৃহষ্পতিবার, 20 জুলাই 2023 13:48 লিখেছেন zbFzkzN

    The selection of the endocrine therapy accompanying OFS is also an issue buying cialis online Transcriptome analyses were performed at two time points; 4 weeks after tamoxifen vehicle treatment, when mice were already obese but did not reach their peak body weight, and 8 weeks after treatment when the mice were losing weight and returning to normal body weight

  • মন্তব্যের লিঙ্ক সার্জেন্ট মোঃ নাজমুল কবির (অবঃ) শুক্রবার, 15 মে 2015 12:29 লিখেছেন সার্জেন্ট মোঃ নাজমুল কবির (অবঃ)

    পড়েই কাহিল হয়েছে, কমেন্ট করতে আরও কাহিল বোধ করছি, ভালো হয়েছে, বয়সে কম হলে কি করতে দাদু ভাই............

মন্তব্য করুন

Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.