স্নিগ্ধ প্রভাতে এক পসরা সোনালী রোদ এসে লেপ্টে গেল কবির জীর্ণ কুঁটিরে। সেই ছেলেটা প্রথম হাঁপাতে হাঁপাতে এসে জানিয়েছিল খবরটা। যে বলেছিল "কবির মৃত্যুর পরে মেলে হাজারো পদক"। বলেছিল, নাহিদ'রে 'ঘাসফুল কাব্যের জন্য একুশে পদক পাবি তুই। কি এক অজানা সুখ ২৫ বছর বয়সী কবির মনে এসে দোলা দিল অনাকাঙ্ক্ষিত এই সংবাদ। মাকে জড়িয়ে ধরে বললো, দেখলিতো মা তোর ছেলে আজ মস্ত বড় কবি হয়ে গেল। আমার কবিতা নিয়ে ওদের তাচ্ছিল্যের সীমা রেখা অতিক্রম করলে আমি তোর অাঁচলে মুখলুকিয়ে কাঁদতাম, আর তুই আমার মাথায় বুলিয়ে দিতিস তোর প্রেরণার পরশ। পদকের মানে না জানা কবির রুগ্ন বাবা বলে ওঠে, আমি জানতাম আমার ছেলে মস্ত বড় কবি হবে। তিনটি প্রাণ অানন্দের সায়রে ভেসে গেল ক্ষণিকের জন্য। প্রথম অভিবাদন সেই বন্ধুটা জানিয়েছিল কবি'কে, যে কিনা তাচ্ছিল্য করে 'তাল গাছ কবি' উপাধি দিয়েছিল। দুপুর অাসতে না অাসতেই হাজারো মানুষের ভিড় কবির উঠোনে, সেই সাথে টিভি সাংবাদিক,পত্রিক া সাংবাদিক,ফটো সাংবাদিক আরও কতোজন। তুমি এই ভাঙা কুঁটিরে বসে কবিতা লেখ কি করে? এক সাংবাদিকের কপাল ভাজ করা সরল প্রশ্ন। কবির সোজা সাফটা উত্তর "কবিতা লেখার জন্য স্থান লাগে না"। কবিকে নিয়ে যাওয়া হলো স্পেশাল গাড়ির বহরে, সেই সাথে গেল কবির মা বাবা। কবিকে ডাকা হলো মঞ্চে ধীর পায়ে ক্রমশঃ এগুলেন মঞ্চে, সামান্য কায়েকটা বাক্যে টানলেন ইতি, এতো বড় পদক আমার দরকার নাই, শুধু দোয়া চাই যেন লিখে যেতে পারি যেন নিরন্তর আমার,আপনার,আপনাদের এ বিশ্বের সকল মানুষের জন্য, রাতের আকাশে হঠাৎ ভেসে ওঠা আগুনের ফুলকির মতো প্রস্থান হলো কবির, শোকাকুল নিরবতা নেমে এলো অডিটোরিয়ামে। করতালিতে মুখরিত অডিটোরিয়ামে একটা কথা এদিক ওদিক ভেসে বেড়াতে লাগল, বাহ্ রে কবি বাহ্। ফিরতি পথে মা বললো, ভাল করেছিস বাবা। ফোনের উপর ফোন আসতে লাগল গ্রাম থেকে, অার কতো দূর আর কত সময়? ক্ষণিকের জন্য কবি মন উদ্বেলিত হতে চাইলো দাম্ভিক অহমিকায়, যারাই তাচ্ছিল্য করত তুই মারা গেলে 'মধু মেলার ' মতো 'নাদু মেলা' বসানো হবে তারাই কবির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য সে কি ব্যস্ত, আকস্মাৎ আজরাইলের খামখেয়ালিতে ঘাসফুল কাব্যের সমস্ত কবিতা লেখা হলো মায়ের আচলে কবির রক্তে, শেষ বারের মতো কবি মায়ের কানে কানে বলে গেল,মা'গো আমার কবরে কিছু ঘাসফুল বিছায়ে দিস। ০২/১১/২০১৫ ইং সোমবার সকাল ১০:০০