এই পৃষ্ঠা প্রিন্ট করুন
বৃহষ্পতিবার, 27 আগষ্ট 2020 18:09

আসাদের শার্ট নির্বাচিত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(1 ভোট)
                গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের
জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট
উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায় ।

বোন তার ভায়ের অম্লান শার্টে দিয়েছে লাগিয়ে
নক্ষত্রের মতো কিছু বোতাম কখনো
হৃদয়ের সোনালী তন্তুর সূক্ষতায়
বর্ষীয়সী জননী সে-শার্ট
উঠোনের রৌদ্রে দিয়েছেন মেলে কতদিন স্নেহের বিন্যাসে ।

ডালীম গাছের মৃদু ছায়া আর রোদ্দুর- শেভিত
মায়ের উঠোন ছেড়ে এখন সে-শার্ট
শহরের প্রধান সড়কে
কারখানার চিমনি-চূড়োয়
গমগমে এভেন্যুর আনাচে কানাচে
উড়ছে, উড়ছে অবিরাম
আমাদের হৃদয়ের রৌদ্র-ঝলসিত প্রতিধ্বনিময় মাঠে,
চৈতন্যের প্রতিটি মোর্চায় ।

আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখন্ড বস্ত্র মানবিক ;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা ।            
            
634 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
শামসুর রাহমান

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯ - ১৭ আগস্ট ২০০৬) বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে দুই বাংলায় তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও জনপ্রিয়তা প্রতিষ্ঠিত। তিনি একজন নাগরিক কবি ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর লিখিত তাঁর দুটি কবিতা খুবই জনপ্রিয়। তিনি মজলুম আদিব (বিপন্ন লেখক) ছদ্মনামে লিখতেন। শামসুর রাহমানের ডাকনাম বাচ্চু, জন্ম, শৈশব ও শিক্ষা পুরনো ঢাকার মাহুতটুলি এলাকায় নানাবাড়িতে। বাবা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী ও মা আমেনা বেগম। পৈতৃক বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার পাড়াতলী গ্রামে। কবি শামসুর রাহমান ১৩ জন ভাই-বোনের মধ্যে ছিলেন ৪র্থ। ১৯৪৫ সালে পুরনো ঢাকার পোগোজ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৪৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং তিন বছর নিয়মিত ক্লাস করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর মূল পরীক্ষা দেননি। ১৯৫৩ সালে পাস কোর্সে বিএ পাশ করে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে এমএ (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করলেও শেষ পর্বের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। বিংশ শতকের তিরিশের দশকের পাঁচ মহান কবির পর তিনিই আধুনিক বাংলা কবিতার প্রধান পুরুষ হিসেবে প্রসিদ্ধ। কেবল বাংলাদেশের কবি আল মাহমুদ এবং পশ্চিমবঙ্গের কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় বিংশ শতকের শেষার্ধে তুলনীয় কাব্যপ্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন বলে ধারণা করা হয়। আধুনিক কবিতার সাথে পরিচয় ও আন্তর্জাতিক-আধুনিক চেতনার উন্মেষ ঘটে ১৯৪৯-এ, এবং তার প্রথম প্রকাশিত কবিতা ১৯৪৯ মুদ্রিত হয় সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকায়। শামসুর রাহমান বিভিন্ন পত্রিকায় সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় লিখতে গিয়ে নানা ছন্দনাম নিয়েছেন। সে গুলো হচ্ছে: সিন্দবাদ, চক্ষুষ্মান, লিপিকার, নেপথ্যে, জনান্তিকে, মৈনাক। পাকিস্তান সরকারের আমলে কলকাতার একটি সাহিত্য পত্রিকায় মজলুম আদিব (বিপন্ন লেখক) নামে কবিতা ছাপা হয় যা দিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট সমালোচক আবু সায়ীদ আইয়ুব।

শামসুর রাহমান এর সর্বশেষ লেখা