ঈর্ষাতুর নই, তবু আমি তোমাদের আজ বড়ো ঈর্ষা করি | তোমরা সুন্দর জামা পরো, পার্কের বেঞ্চিতে বসে আলাপ জমাও, কখনো সেজন্য নয় | ভালো খাওদাও ফুর্তি করো সবান্ধব, সেজন্যেও নয় | বন্ধুরা তোমরা যারা কবি, স্বাধীন দেশের কবি, তাদের সৌভাগ্যে আমি বড়ো ঈর্ষান্বিত আজ | যখন যা খুশি মনের মতন শব্দ কী সহজে করো ব্যবহার তোমরা সবাই | যখন যে-শব্দ চাও, এসে গেলে সাজাও পয়ারে, কখনো অমিত্রাক্ষরে, ক্ষিপ্র মাত্রাবৃত্তে কখনো-বা | সেসব কবিতাবলী যেন রাজহাঁস, দৃপ্ত ভঙ্গিমায় মানুষের অত্যন্ত নিকটে যায়, কুড়ায় আদর অথচ এ দেশে আমি আজ দমবন্ধ এ বন্দী-শিবিরে মাথা খুঁড়ে মড়লেও পারি না করতে উচ্চারণ মনের মতন শব্দ কোনো | মনের মতন সব কবিতা লেখার অধিকার ওরা করেছে হরণ | প্রকাশ্য রাস্তায় যদি তারস্বরে চাঁদ ফুল পাখি এমন কি ‘নারী’ ইত্যাকার শব্দাবলী করি উচ্চারণ, কেউ করবে না বারণ কখনো | কিন্তু কিছু শব্দকে করেছে বেআইনী ওরা ভয়ানক বিস্ফোরক ভেবে স্বাধীনতা নামক শব্দটি ভরাট গলায় দীপ্ত উচ্চারণ ক’রে বারবার তৃপ্তি পেতে চাই | শহরের আনাচে কানাচে প্রতিটি রাস্তায় অলিতে গলিতে রঙিন সাইনবোর্ডে, প্রত্যেক বাড়িতে স্বাধীনতা নামক শব্দটি লিখে দিতে চাই বিশাল অক্ষরে স্বাধীনতা শব্দ এত প্রিয় যে আমার কখনো জানি নি আগে | উঁচিয়ে বন্দুক স্বাধীনতা, বাংলা দেশ—- এই মতো শব্দ থেকে ওরা আমাকে বিচ্ছিন্ন ক’রে রাখছে সর্বদা | অথচ জানে না ওরা কেউ গাছের পাতায়, ফুটপাতে পাখির পালকে কিংবা নারীর দু-চোখে পথের ধুলোয়, বস্তির দুরন্ত ছেলেটার হাতের মুঠোয় সর্বদাই দেখি জ্বলে স্বাধীনতা নামক শব্দটি |