রৌদ্র-ঝিলমিল উষার আকাশ, মধ্যনিশীথের নীল, অপার ঐশ্বর্যবেশে দেখা তুমি দাও বারে-বারে নিঃসহায় নগরীর কারাগার-প্রাচীরের পারে। উদ্বেলিছে হেথা গাঢ় ধূম্রের কুণ্ডলী, উগ্র চুল্লীবহ্নি হেথা অনিবার উঠিতেছে জ্বলি’, আরক্ত কঙ্করগুলো মরুভূর তপ্তশ্বাস মাখা, মরীচিকা-ঢাকা । অগণন যাত্রিকের প্রাণ খুঁজে মরে অনিবার, পায়নাকো পথের সন্ধান; চরণে জড়ায়ে গেছে শাসনের কঠিন শৃঙ্খল; হে নীলিমা নিষ্পলক, লক্ষ বিধি-বিধানের এই কারাতল তোমার ও-মায়াদণ্ডে ভেঙেছো মায়াবী! জনতার কোলাহলে একা ব’সে ভাবি কোন্ দূর জাদুপুর-রহস্যের ইন্দ্রজাল মাখি বাস্তবের রক্ততটে আসিলে একাকী; স্ফটিক আলোকে তব বিথারিয়া নীলাম্বরখানা মৌন স্বপ্ন-ময়ূরের ডানা! চোখে মোর মুছে যায় ব্যাধবিদ্ধা ধরণীর রুধিরলিপিকা, জ্ব’লে ওঠে অন্তহারা আকাশের গৌরী দীপশিখা! বসুধার অশ্রুপাংশু আতপ্ত সৈকত, ছিন্নবাস, নগ্নশির ভিক্ষুদল, নিষ্করুণ এই রাজপথ, লক্ষ কোটি মুমূর্ষুর এই কারাগার, এই ধূলি—ধূম্রগর্ভ বিস্তৃত আঁধার ডুবে যায় নীলিমায়—স্বপ্নায়ত মুগ্ধ আঁখিপাতে, শঙ্খশুভ্র মেঘপুঞ্জে, শুক্লাকাশে নক্ষত্রের রাতে; ভেঙে যায় কীটপ্রায় ধরণীর বিশীর্ণ নির্মোক তোমার চকিত স্পর্শে, হে অতন্দ্র দূর কল্পলোক!