এই পৃষ্ঠা প্রিন্ট করুন
শনিবার, 29 আগষ্ট 2020 16:21

স্বপ্নের হাতে নির্বাচিত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(0 টি ভোট)
                পৃথিবীর বাধা— এই দেহের ব্যাঘাতে
হৃদয়ে বেদনা জমে; স্বপনের হাতে
আমি তাই
অামারে তুলিয়া দিতে চাই।
যেই সব ছায়া এসে পড়ে
দিনের রাতের ঢেউয়ে— তাহাদের তরে
জেগে অাছে আমার জীবন;
সব ছেড়ে অামাদের মন
ধরা দিতো যদি এই স্বপনের হাতে
পৃথিবীর রাত আর দিনের আঘাতে
বেদনা পেত না তবে কেউ আর—
থাকিত না হৃদয়ের জরা—
সবাই স্বপ্নের হাতে দিতো যদি ধরা।

আকাশ ছায়ার ঢেউয়ে ঢেকে,
সারা দিন— সারা রাত্রি অপেক্ষায় থেকে,
পৃথিবীর যত ব্যথা— বিরোধ— বাস্তব
হৃদয় ভুলিয়া যায় সব;
চাহিয়াছে অন্তর যে-ভাষা,
যেই ইচ্ছা— যেই ভালোবাসা
খুঁজিয়াছে পৃথিবীর পারে-পারে গিয়া—
স্বপ্নে তাহা সত্য হ’য়ে উঠেছে ফলিয়া।
মরমের যত তৃষ্ণা আছে—
তারি খোঁজে ছায়া আর স্বপনের কাছে
তোমরা চলিয়া এসো—
তোমরা চলিয়া এসো সব!
ভুলে যাও পৃথিবীর ওই ব্যথা— ব্যাঘাত— বাস্তব!
সকল সময়

স্বপ্ন— শুধু স্বপ্ন জন্ম লয়
যাদের অন্তরে,
পরস্পরে যারা হাত ধরে
নিরালা ঢেউয়ের পাশে-পাশে—
গোধূলির অস্পষ্ট আকাশে
যাহাদের আকাঙ্ক্ষার জন্ম— মৃত্যু— সব—
পৃথিবীর দিন আর রাত্রির রব
শোনে না তাহারা;
সন্ধ্যার নদীর জল— পাথরে জলের ধারা
আয়নার মতো
জাগিয়া উঠিছে ইতস্তত
তাহাদের তরে।
তাদের অন্তরে
স্বপ্ন, শুধু স্বপ্ন জন্ম লয়
সকল সময় …

পৃথিবীর দেয়ালের ’পরে
আঁকাবাঁকা অসংখ্য অক্ষরে
একবার লিখিয়াছি অন্তরের কথা—
সে-সব ব্যর্থতা
আলো আর অন্ধকারে গিয়াছে মুছিয়া;
দিনের উজ্জ্বল পথ ছেড়ে দিয়ে
ধূসর স্বপ্নের দেশে গিয়া
হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষার নদী
ঢেউ তুলে তৃপ্তি পায়— ঢেউ তুলে তৃপ্তি পায় যদি,
তবে ওই পৃথিবীর দেয়ালের ’পরে
লিখিতে ষেও না তুমি অস্পষ্ট অক্ষরে
অন্তরের কথা;
আলো আর অন্ধকারে মুছে যায় সে-সব ব্যর্থতা।

পৃথিবীর ওই অধীরতা
থেমে যায়— আমাদের হৃদয়ের ব্যথা
দূরের ধুলোর পথ ছেড়ে
স্বপ্নেরে— ধ্যানেরে
কাছে ডেকে লয়;
উজ্জ্বল আলোর দিন নিভে যায়,
মানুষেরো আয়ু শেষ হয়।
পৃথিবীর পুরানো সে-পথ
মুছে ফেলে রেখা তার—
কিন্তু এই স্বপ্নের জগৎ
চিরদিন রয়!
সময়ের হাত এসে মুছে ফেলে আর সব—
নক্ষত্রেরো আয়ু শেষ হয়!            
            
701 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
জীবনানন্দ দাশ

জীবনানন্দ দাশ (১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯ - ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে যখন তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল, ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবিতে পরিণত হয়েছেন। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ জীবনানন্দের কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন। বুদ্ধদেব বসু তাঁকে 'নির্জনতম কবি' বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে, অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁকে ‘শুদ্ধতম কবি’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন। সমালোচকদের অনেকে তাঁকে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল-পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি বলে মনে করেন। জীবনানন্দের বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত (১৯৫৩) হয়। ১৯৫৫ সালে শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে। জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মাঝে রয়েছে রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।

জীবনানন্দ দাশ এর সর্বশেষ লেখা

2 মন্তব্য