বাবা বিদেশ গেল।বাড়ির দায়িত্ব নিতে হল আমার,আমি ভাইদের মধ্যে বড় তাই।সংসার চালাতে হচ্ছে,প্রয়োজন অর্থের।নিজের শেখা হাতের বিদ্যা বিদ্যুতের কাজ জানা ছিল।শুরু হল কর্ম।কর্মের মাঝে ডুবে গিয়ে ভুলে গিয়েছিলাম আমি যে একজন মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছাত্র সে কথা।দুই বছর শেষ হইল।ক্লাসের সব বন্ধু বান্ধবের প্রস্তুুতি শেষ,পরীক্ষা দেওয়ার।ক্লাস শিক্ষকের কাছে বলেছিলাম,আমি পরীক্ষা দেব,তিনি আশা দিল।মাদ্রাসার দপ্তরে গেলাম,আরিফ হুজুর সহ দপ্তরি মামা কাদের সাহেব অনুরোধ করল।রেজিষ্টেশন দেখে অধ্যক্ষ মহোদয়(সম্মানিত হুজুর আমার)অনুমতি দিল।তা দেখে মৌলভী হুজুর চোখ দুইটি করল বাঁকা।আরিফ হুজুরকে দিলাম এক ডজন কলা খাইতে,রহমত আলীর পানের দোকানের পান খাওয়াইলাম দপ্তরি মামা কাদেরকে। ২৩শত টাকার কিতাব(বই)কিনলাম,কে-বি গ্রন্হাগার থেকে।আলী আজম ভাই সহ ওসমান আমার ভাগিনা গণিত দিল করিয়ে! "বন্ধুরা আমার ইমরান,আরিফ,ফরহাদ তাঁরা দিল ভর্সা, মৌলভীর মেয়ে সুন্দরী আমার বান্ধবী,সে করত হিংসা। তবুও তাঁর প্রতি ছিল,আমার ভালবাসা।যা এখনো আছে। সে এখন চট্টগ্রাম থাকে,চালায় সি-এন-জি। দাখিল টেষ্ট পরীক্ষা শুরু হইল।কিছু দিন পরে পরীক্ষা শেষ।আবার কাজ শুরু।হঠাত্ টেষ্ট পরীক্ষার ফলাফল দিল,২৯ জন ছাত্র/ছাত্রী করলাম পাস।৩০ জন পাস করল না।আমার নাম ২৮নাম্বারে,পয়েন্ট পেলাম ২.৬৮।আমার ফলাফল দেখে খুশি হইল শিক্ষকেরা।জনাব মখসুদ আহমদ বাংলা শিক্ষক,দিলেন আমায় বেরি গুড।২৯ নম্বারে মঈন ঊদ্দীন নাম তার,সে বন্ধু আমার,লম্বা দাঁড়ি দেখতে লাগে সুন্দর।সে আবার মুয়াজিদ একটি মসজিদের। কর্ম আবার শুরু,প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেল।দোয়া নিতে এবং জিয়ারত করতে গিয়েছিলাম হযরত আব্দুল মালেক শাহ(রঃ)মাজারে।শুরুতেই বাংলা,তাও আবার নতুন সৃজনশীল।পরীক্ষার আগের রাতে গেলাম টিউবল ওয়াস করতে নয়া পাড়া।রাতে কাজ চলিতেছে,রাত শেষের দিকে।ফজরের আজান দিল,ভোর হতে লাগল।মজিদকে বললাম আমি চলে যাচ্ছি,বাকি কাজ তুমি কর।সে মুচকি হাঁসি দিয়ে বলল,জামশেদ ভাই অনে যাইবান্দে হড়ে?(চলিত ভাষায়,আপনি কোথায় যাবেন)।আমি বললাম,পরীক্ষা দিতে।মজিদ আমার কাজের সহকারি ছিল।বাড়ীতে গেলাম,সকাল ছয়টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ঘুমালাম।৮টায় ঘুম থেকে ওঠে গোসল করে ভাত দুইটা খাইলাম।মা'কে বললাম,দোয়া করিয়েন,পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি।মা দোয়া করলো।আরো দোয়া করিয়ে দিলেন,আমার সেজু আব্বা আলহাজ্ব মাওলানা জাফর আহমদ (বদরী) সাহেব।সেই বাংলায় এ- আসিল।একে একে সব পরীক্ষা শেষ।মাঝে মধ্যে কাজও চলিত। ফলাফল হবে সবাই খুশি।মনটা আমার চটপট করিতেছে।জনাব শিক্ষক আমার ইসমাঈল স্যার,রেজাল্ট আনতে গেল।স্যারকে ফোন করে জিঙ্গেস করলাম,আমার কি অবস্তা?স্যার রোল নাম্বার চাইল,রোল নাম্বার ২৬৫৮০৬ দিলাম।স্যার ফোনে বলল,হাছান তোমার ৪.৫৬।তবে হাঁসিবার বিষয়,হাছান আমার বাবার নাম,স্যার তা জানত না।স্যারের কথা শুনে বিশ্বাস হইল না আমার।আল-জাবের মামার কাছে গেলাম,তিনি কম্পিউটারের মাধ্যে ইন্টারনেটে দেখে একেই উত্তর দিল।মনটা তখন খুশিতে নাচিতেছে।৪.৫০ ঊর্ধ্বে প্রাপ্তদের এককালীন বৃত্তি সরূপ দুই হাজার টাকা করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মহোদয় বিতরণ কালে আমি অধমও পেলাম।বাড়ীতে মিলাদ পড়ালাম অল্প আয়োজনে। পূণরায় কর্ম শুরু।আবার দুই বছরের শেষ।আলিমের টেষ্ট পরীক্ষা শুরু হবে,তাই নতুন কিতাব(বই)কিনলাম।আলিমের টেষ্ট পরীক্ষা একের পর এক দিতেছি।হঠাত্ ১২-১২-২০১২ ইং তারিখ ওমানের ভিসা হইল।ঠিকেট করিলাম,চট্টগ্রাম শাহ আমানত(রঃ)বিমান বন্দরে ১২-০১-২০১৩ইং তারিখ বাবা আমাকে দিল ডুকায়।প্রথমেই আমার ইমেগ্রেশন শেষ।রাত ৮টায় বিমান আকাশে উড়তে উড়তে প্রায় চার ঘন্টা পর আরব আমিরাতের সার্জাহ বিমান বন্দরে এসে পৌঁছালাম।সেই থেকে এ-সির ঠান্ডা হাওয়া শরীরে লাগা শুরু।আট ঘন্টা এ-সির হাওয়া লেগে শরীরটা একে বারেই ঠান্ডা হয়ে গেল।সকাল ৮টায় কাঁপতে কাঁপতে আবার ওঠলাম অন্য একটি বিমানে।৪৫ মিনিট বিমান উড়ল আকাশে,নামিলাম মসকেট বিমানবন্দরে।১৩-০১-২০১৩ইং তারিখ সকাল ৯.১৫ মিনিটে আমার পাসপোর্টে দুই বছরের ভিসা দিল লাগিয়ে।ওমানের একামা হল।জাবলে আক্বদার(সবুজ পাহাড়)সহ এদিক সেদিক বিদ্যুতের কাজ কর্ম চলিতেছিল।কিছু মাস পর নিজে দিলাম একটি ডিস-এর দোকান খুলে।এখন দোকান এবং ডিসের কাজ করে চলতেছে আমার জীবন চলিতেছে।