.......জাবলে আখদারের অভিজ্ঞতা। .......অর্থাত্-সবুজ পাহাড়। প্রবাস জীবন হল শুরু।প্রথমে আমার ভিসা ছিল ফ্রি।অর্থাৎ যেখানে ইচ্ছে কাজ করা যাবে,কোন সমস্যা নাই।সবাই ব্যস্ত নিজ নিজ কর্মে।হঠাত্ নিজেরও একটা কর্ম হল।যেতে হবে জাবলে আখদার।সব প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম।পর দিন সকাল ৮টায় কোম্পানীর গাড়ী রওনা দিল জাবলে আখদারের দিকে।পথের দ্বারে সাইন বোর্ডে আরবী এবং ইংলিশ লেখা দেখতে পাই।আরবী,ইংলিশ পড়তে পারি কোন রকম,(নিজে চলার মত)।গাড়ী চলতেছে,আমি সেই সাইন বোর্ডের লেখা গুলো পড়তে থাকলাম।অনেকেই গাড়ীতে ঘুমিয়ে গেল।মসকেট থেকে নিজুয়া,নিজুয়া হয়ে কোন একটা জায়গা নাম মনে নাই,প্রায় ৪ঘন্টার পথ শেষ।গাড়ী থামল।হোটেলে ডুকলাম সবাই,নাস্তা করলাম। নিছ থেকে জাবলে আখদারের উঁচ্চতা প্রায় ৩,৭০০শত মিটার উপর(তিন হাজার সাত'শত)যা ওমান সরকারের হিসাব মতে।পাহাড়ে ওঠতেই প্রথমে পুলিশের চেক পোষ্ট।আমাদের কাছে কোম্পানীর কার্ড ছিল।পুলিশের তল্লাশি শেষ হল।এবার জাবলে আখদারের উপর গাড়ী ওঠতে শুরু হল।এক ঘন্টার মত গাড়ী চলার পর মনে মনে ভয় হচ্ছে।কারণ রাস্তাটি ছিল অতি ঝুঁকিপুর্ণ।গাড়ী নাকি থামানো যাবে না,থামলেই দূর্ঘটনা নিশ্চিত।উপর থেকে নিছের দিকে থাকালেই মনে হয় আমি আর কোন দিন নিছে নেমে আসতে পারব না।সবাই আল্লাহর নাম মূখে নিলাম এবং রাসুল(সঃ)এর উপর দরুদ পড়তে লাগলাম।এই ভাবে প্রায় ৫ঘন্টা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর জাবলে আখদারের সর্বশেষ উপর ওঠতে সক্ষম হলাম।পরের দিন থেকে কাজ শুরু হল।কাজ চলতেছে।সেই থেকে ভিন-দেশীদের সাথে আমার চলা ফেরা শুরু।সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক নাই বললেই চলে।কেননা,সেখান থেকে ৩৪দিন বাড়ীতে(দেশে)যোগাযোগ করতে পারিনি তেমন। এক রাতে আমি রুম থেকে একেলা বাহির হলাম।দেখতে পেলাম অনেক গুলো ঘুড়া।পরে জানতে পারি আসলে সে গুলো ঘুড়া নয়,সে গুলো গাধাঁ।আমি সেই গাধাঁ দেখে ভয় পেয়ে গেলাম।তবে গাধাঁ গুলোও আমাকে দেখে ভয় ফেতে লাগল।আমি মনে সাহস নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম,হঠাত্ আমাকে দেখে গাধাঁ গুলো ভয় পেয়ে অতি দ্রুত পালাতে শুরু করল।আমার বড় ভাই ইরফান জাফরি আমাকে গাধাঁ বলে ডাকত।তখন কিন্তু ওনার কথায় গাধাঁ কি আমি জানতাম না।অনেক বার জিঙ্গেঁস করার পরে বলল,হয়তো গাধাঁ জীবনে কোন দিন দেখবি।আর দেখলেই বুঝবি গাধাঁ কি!আমি আসলে সেই দিন বুঝিতে পারিলাম"গাধাঁ গুলো আমার চেয়েও গাধাঁ"। দিনের বেলায় গাধাঁ গুলো চোখে পড়ত না। আমাদের খাবারের বাকি অংশ ফেলে দিতাম।পাহাড়ী ছাগল এসে সেই ফেলে দেওয়া রুটি আর ডাল খেত।আরো দেখেছি ছাগল গুলো ছোট ছোট পাথরের কণা খুজে খুজে খেতে। কাজের শেষে যতটুক সম্ভব আল্লাহর সৃষ্টি প্রাকৃতিক সবুজ পাহাড়টি উপভোগ করতাম।আমাদের থাকার সেই ক্যাম্প থেকে কিছু নিছে একটি প্রাকৃতিক ঝর্ণা ছিল।সেখানে নামাটা একেবারেই কঠিন হলেও আমরা চার জন নামলাম।আহ,আল্লাহর কেমন সৃষ্টি!পাথরের বেতর থেকে পরিস্কার পানীয় প্রবাহিত হচ্ছে,যা পান করার উপযোগী।আর সেই পানিতে ছোট ছোট মাছ দৌঁড়াদৌঁড়ি করতেছে। সেই জাবলে আখদারের চতুর্পাশে থাকালেই বুঝা যায় মহান রাব্বুল আ'লামিনের অস্তিত্ব।বুঝা যায় এই বিশাল পাহাড়ের এক জন মালিক/সৃষ্টি কর্তা রয়েছেন।আর সেই সৃষ্টি কর্তার হুকুমে এই বিশাল পাহাড়টি দাঁড়িয়ে আছে।চতুর দিকে হাহাকার করতেছে।তেমন লোক জন চোখে পড়ে না।প্রতিদিন দেখতে ফেতাম আসর নামাজের পর একটি মেয়ে দু'হাতে দুইটি থলে,মাথায় একটি ছোট বস্তা নিয়ে যেত তাঁর ছাগলের কাছে।হয়তো থলে আর বস্তায় ছাগলের খাবার থাকত।দেখেছি আরবের মহিলাদের মাথার উপর কিছু নিলে পড়ে যায় না। হঠাত্ এক দিন আমাদের মাথার উপর একটি হেলিকেপ্টার উড়তে ছিল।সবাই তো অভাক।শুনতে পেলাম_এক বৃদ্ধলোক খেজুর গাছ হতে পাথরের উপর পড়ে মরা গিয়েছে।আর তাঁকেই কবরস্হানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওমান সেনাবাহিনী সেই হেলিকেপ্টার নিয়ে আসতেছিল।যেই মসজিদটিতে লাশ নেওয়া হবে তা আমাদের চোখের সামনে দেখতে ফেতাম।আমরা ৮-১০ জন হাঁটা শুরু করলাম তাঁহার জানাযায় উপস্তিত হতে।হাঁটতেছি আর হাঁটতেছি তবুও সেই মসজিদটির কাছে যাওয়া হয়নি।কারণ মসজিদটিতে যেতে হলে অনেক দূর থেকে ঘুরে যেতে হবে।সেখানকার রাস্তার পাশে একা একা দাঁড়ালে মনে হত যেন পাথরের সেই পাহাড় থেকে কিছু বাহির হয়ে এসে আমাকে খেয়ে ফেলবে বা আমাকে অদৃশ্য করে ফেলতে পারে।তাই একা একা কোথাও বের হটাম না। জাবলে আখদারের আবহাওয়া ছিল অতি ঠান্ডা।কারণ নিছের চেয়েও উপরের দিকে ঠান্ডার হার বেশি। একদিন সকাল ৯টায় দেখতে ফেলাম আমাদের ক্যাম্পের সামনের পাহাড়টির উপর মেঘ এসেছে,ফলে পাহাড়টিও দেখা যাচ্ছিল না।মেঘ গুলো আমাদের দিকে বয়ে আসতে মনে মনে ভাবলাম কি হয় আল্লাহ ভাল জানেন!মুহুর্তের মধ্যে সেই মেঘ এসে আমাদের শরীরের উপর ছড়িয়ে পড়ল।আমি আমার অন্য কোন সহ পাঠিকে দেখতে পাচ্ছিলাম না।তারাও একজন অপর জনকে দেখতে পাচ্ছিল না।সেই মেঘের মাঝে ঠান্ডা হাওয়া অনুভব করতে লাগলাম।কিছু মুহুর্তের জন্য আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম ভিন্ন এক জগতে।যা অতীতে আর কোন ঠান্ডা হাওয়া আমার এরকম লাগেনি।সে দিন বুঝতে পারলাম মেঘ বরফ নয়,বরং এক প্রকার আল্লাহর সৃষ্টি ভিন্ন রকম ধোঁয়া।আরো বুঝতে পারলাম মেঘ অতিদূত গতিতে চলে। সেখানে দেখেছি আনারগাছ সহ বিভিন্ন রকমের ছোটছোট গাছ-পালা।যা কোন মানুষ রোপন করেনি।কেউ কোন দিন পানিও দেয়নি।পাথরের উপর দাঁড়িয়ে আছে গাছ গুলো।একমাত্র মহান আল্লাহ গাছ গুলোকে পাথরের উপর জীবিত রেখেছেন,আর কেউ নয়। এই ভাবে জাবলে আখদারে আমার ৩৪দিন কর্মতে শেষ হল। জাবলে আখদার থেকে নেমে আসার সময় সবার প্রাণ যায়যায় অবস্তাই হইল।কারণ গাড়ীটি অতিদূত নিছের দিকে নামে আর পাহাড়ের সেই আঁকা-বাঁকা রাস্তায় ঘুরতে ছিল। যাক,আল্লাহর রহমত এবং মা-বাবার সহ সবার দোয়ায় সমতলে নেমে আসতে সক্ষম হলাম। বিদায় জাবলে আখদার বিদায়। চিরদিন তোমাকে স্মরণ রাখিব জাবলে আখদার। বিদায় তোমায় বিদায়।