পায়ের তলায় নরম ঠেকল কি! আস্তে একটু চল না ঠাকুর-ঝি--- ওমা, এযে ঝরা-বকুল! নয়? তাইত বলি, বসে' দোরের পাশে, রাত্তিরে কাল---মধুমদির বাসে আকাশ-পাতাল কতই মনে হয়। জ্যৈষ্ঠ আসতে কদিন দেরী ভাই--- আমের গায়ে বরণ দেখা যায়? --অনেক দেরী? কেমন করে' হবে! কোকিল-ডাকা শুনেছি সেই কবে, দখিণ হাওয়া---বন্দ কবে ভাই; দীঘির ঘটে নতুন সিঁড়ি জাগে--- শেওলা-পিছল---এমনি শঙ্কা লাগে, পা-পিছলিয়ে তলিয়ে যদি যাই! মন্দ নেহাৎ হয় না কিন্তু তায়--- অন্ধ চোখের দ্বন্দ্ব চুকে' যায়! দুঃখ নাইক সত্যি কথা শোন্, অন্ধ গেলে কি আর হবে বোন? বাঁচবি তোরা---দাদা ত তোর আগে; এই আষাঢ়েই আবার বিয়ে হবে, বাড়ী আসার পথ খুঁজে' না পাবে--- দেখবি তখন প্রবাস কেমন লাগে? --কি বল্লি ভাই, কাঁদবে সন্ধ্যা-সকাল? হা অদৃষ্ট, হায়রে আমার কপাল! কত লোকেই যায় ত পরবাসে--- কাল-বোশেখে কে না বাড়ী আসে? চৈতালি কাজ, কবে যে সেই শেষ! পাড়ার মানুষ ফিরল সবাই ঘর, তোমার ভাইয়ের সবই স্বতন্তর--- ফিরে' আসার নাই কোন উদ্দেশ! --ঐ য়ে হেথায় ঘরের কাঁটা আছে--- ফিরে' আসতে হবে ত তার কাছে! এইখানেতে একটু ধরিস ভাই, পিছল ভারি --- ফস্ কে যদি যাই--- এ অক্ষমার রক্ষা কি আর আছে! আসুন ফিরে'---অনেক দিনের আশা, থাকুন ঘরে, না থাক্ ভালবাসা--- তবু দুদিন অভাগিনীর কাছে! জন্মশোধের বিদায় নিয়ে ফিরে'--- সেদিন তখন আসব দীঘির তীরে। চোখ গেল ঐ চেঁচিয়ে হ'ল সারা! আচ্ছা দিদি, কি করবে ভাই তারা--- জন্ম লাগি গিয়েছে যার চোখ! কাঁদার সুখ যে বারণ তাহার---ছাই! কাঁদতে পেলে বাঁচত সে যে ভাই, কতক তবু কমত যে তার শোক! চোখ গেল ---তার ভরসা তবু আছে--- চক্ষুহীনার কি কথা কার কাছে! টানিস কেন? কিসের তাড়াতাডি--- সেই ত ফিরে' যাব আবার বাড়ী, একলা থাকা সেই ত গৃহকোণ--- তার চেয়ে এই স্নিগ্ধ শীতল জলে দুটো যেন প্রাণের কথা বলে--- দরদ-ভরা দুখের আলাপন; পরশ তাহার মায়ের স্নেহের মত ভুলায় খানিক মনের ব্যথা যত! এবার এলে, হাতটি দিয়ে গায়ে অন্ধ আঁখি বুলিয়ে বারেক পায়ে--- বন্দ চোখের অশ্রু রুধি' পাতায়, জন্ম-দুখীর দীর্ঘ আয়ু দিয়ে চিরবিদায় ভিক্ষা যাব নিয়ে--- সকল বালাই বহি আপন মাথায়! দেখিস তখন, কাণার জন্য আর কষ্ট কিছু হয়না যেন তাঁর। তার পরে---এই শেওলা-দীঘির ধার--- সঙ্গে আসতে বলবো নাক আর, শেষের পথে কিসের বল' ভয়--- এইখানে এই বেতের বনের ধারে, ডাহুক-ডাকা সন্ধ্যা-অন্ধকারে--- সবার সঙ্গে সাঙ্গ পরিচয়! শেওলা-দীঘির শীতল অতল নীরে--- মায়ের কোলটি পাই যেন ভাই ফিরে'!