রবিবার, 06 সেপ্টেম্বর 2020 13:57

অন্ধ বধূ নির্বাচিত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(0 টি ভোট)
                পায়ের তলায় নরম ঠেকল কি!
 আস্তে একটু চল না ঠাকুর-ঝি---
 ওমা, এযে ঝরা-বকুল! নয়?
 তাইত বলি, বসে' দোরের পাশে,
 রাত্তিরে কাল---মধুমদির বাসে
 আকাশ-পাতাল কতই মনে হয়। 
 জ্যৈষ্ঠ আসতে কদিন দেরী ভাই---
 আমের গায়ে বরণ দেখা যায়?

 --অনেক দেরী? কেমন করে' হবে!
 কোকিল-ডাকা শুনেছি সেই কবে,
 দখিণ হাওয়া---বন্দ কবে ভাই;
 দীঘির ঘটে নতুন সিঁড়ি জাগে---
 শেওলা-পিছল---এমনি শঙ্কা লাগে,
 পা-পিছলিয়ে তলিয়ে যদি যাই!

 মন্দ নেহাৎ হয় না কিন্তু তায়---
 অন্ধ চোখের দ্বন্দ্ব চুকে' যায়!

 দুঃখ নাইক সত্যি কথা শোন্,
 অন্ধ গেলে কি আর হবে বোন?
 বাঁচবি তোরা---দাদা ত তোর আগে;
 এই আষাঢ়েই আবার বিয়ে হবে,
 বাড়ী আসার পথ খুঁজে' না পাবে---
 দেখবি তখন প্রবাস কেমন লাগে?

 --কি বল্লি ভাই, কাঁদবে সন্ধ্যা-সকাল?
 হা অদৃষ্ট, হায়রে আমার কপাল!

 কত লোকেই যায় ত পরবাসে---
 কাল-বোশেখে কে না বাড়ী আসে?
 চৈতালি কাজ, কবে যে সেই শেষ!
 পাড়ার মানুষ ফিরল সবাই ঘর,
 তোমার ভাইয়ের সবই স্বতন্তর---
 ফিরে' আসার নাই কোন উদ্দেশ!

 --ঐ য়ে হেথায় ঘরের কাঁটা আছে---
 ফিরে' আসতে হবে ত তার কাছে!

 এইখানেতে একটু ধরিস ভাই,
 পিছল ভারি --- ফস্ কে যদি যাই---
 এ অক্ষমার রক্ষা কি আর আছে!
 আসুন ফিরে'---অনেক দিনের আশা,
 থাকুন ঘরে, না থাক্ ভালবাসা---
 তবু দুদিন অভাগিনীর কাছে!

 জন্মশোধের বিদায় নিয়ে ফিরে'---
 সেদিন তখন আসব দীঘির তীরে।

 চোখ গেল ঐ চেঁচিয়ে হ'ল সারা!
 আচ্ছা দিদি, কি করবে ভাই তারা---
 জন্ম লাগি গিয়েছে যার চোখ!
 কাঁদার সুখ যে বারণ তাহার---ছাই!
 কাঁদতে পেলে বাঁচত সে যে ভাই,
 কতক তবু কমত যে তার শোক!

 চোখ গেল ---তার ভরসা তবু আছে---
 চক্ষুহীনার কি কথা কার কাছে!

 টানিস কেন? কিসের তাড়াতাডি---
 সেই ত ফিরে' যাব আবার বাড়ী,
 একলা থাকা সেই ত গৃহকোণ---
 তার চেয়ে এই স্নিগ্ধ শীতল জলে
 দুটো যেন প্রাণের কথা বলে---
 দরদ-ভরা দুখের আলাপন;

 পরশ তাহার মায়ের স্নেহের মত
 ভুলায় খানিক মনের ব্যথা যত!

 এবার এলে, হাতটি দিয়ে গায়ে
 অন্ধ আঁখি বুলিয়ে বারেক পায়ে---
 বন্দ চোখের অশ্রু রুধি' পাতায়,
 জন্ম-দুখীর দীর্ঘ আয়ু দিয়ে
 চিরবিদায় ভিক্ষা যাব নিয়ে---
 সকল বালাই বহি আপন মাথায়!

 দেখিস তখন, কাণার জন্য আর
 কষ্ট কিছু হয়না যেন তাঁর।

 তার পরে---এই শেওলা-দীঘির ধার---
 সঙ্গে আসতে বলবো নাক আর,
 শেষের পথে কিসের বল' ভয়---
 এইখানে এই বেতের বনের ধারে,
 ডাহুক-ডাকা সন্ধ্যা-অন্ধকারে---
 সবার সঙ্গে সাঙ্গ পরিচয়!

 শেওলা-দীঘির শীতল অতল নীরে---
 মায়ের কোলটি পাই যেন ভাই ফিরে'!            
            
451 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
যতীন্দ্রমোহন বাগচী

যতীন্দ্রমোহন বাগচী (২৭ নভেম্বর, ১৮৭৮ - ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮) ছিলেন একজন বাঙালি কবি ও সম্পাদক। তিনি নদিয়া জেলার জমশেরপুরে জমিদার পরিবারে (বর্তমান বাগচী জমশেরপুর) জন্মেছিলেন। তার পৈতৃক নিবাস বলাগড় গ্রাম, হুগলি। তিনি তার প্রথম ডিগ্রি কলকাতার ডাফ কলেজ (এখন স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে নিয়েছিলেন। তিনি বহু সাহিত্যিক পত্রিকায় গঠনমূলক অবদান রেখেছেন। ১৯০৯ থেকে ১৯১৩ পর্যন্ত মানসী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯২১ এবং ১৯২২ সালে তিনি যমুনা পত্রিকার যুগ্ন সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৮ পূর্বাচল পত্রিকার মালিক এবং সম্পাদক ছিলেন। তার রচনায় তার সমকালীন রবীন্দ্র সাহিত্যের প্রভাব লক্ষ্য করে যায়। তাকে রবীন্দ্র পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান সাহিত্যিক হিসেবে বিবেচনা করে হয়। পল্লী-প্রীতি যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কবিমানসের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। "পথের পাঁচালী"র বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও কবি জীবনানন্দ দাশের মত তার কাব্যবস্তু নিসর্গ-সৌন্দর্যে চিত্ররূপময়। গ্রাম বাঙলার শ্যামল স্নিগ্ধ রূপ উন্মোচনে তিনি প্রয়াসী হয়েছেন। গ্রাম জীবনের অতি সাধারণ বিষয় ও সুখ-দুঃখ তিনি সহজ সরল ভাষায় সহৃদয়তার সংগে তাৎপর্যমণ্ডিত করে প্রকাশ করেছেন।

যতীন্দ্রমোহন বাগচী এর সর্বশেষ লেখা

মন্তব্য করুন

Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.