এই পৃষ্ঠা প্রিন্ট করুন
মঙ্গলবার, 31 মার্চ 2015 08:29

বেঁচে নেই কবিতা আমার

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(2 টি ভোট)
                সবেমাত্র কবিতার নরম ঘাসের উপর
হাঁটি হাঁটি পা পা পথ হাঁটছিলাম---
কাঁদা মাটির পথ, দু’পাশে উঁকি দেয়া
কচি পাতার গায়ে ফোঁটা ফোঁটা
বৃষ্টির আদুরে কণা স্পর্শ-সুখে
খুব কাছে টানছিলো।

সে কবেকার পুরনো কথা; হেঁটে হেঁটে বিকেলের পথ
দেহ মন ছুঁয়ে নিয়ে যেত যৌবনহারা মাসকাটা নদী-বুকে,
আমার শৈশব-ভূমি পাতারহাট বন্দর পাশে স্টিমার-ঘাট
নামের আড়ালে স্মৃতি হয়ে ধুঁকে ধুঁকে আজো বেঁচে আছে।
যে মাসকাটা নদী একদিন গিলে খেত কোলকাতা থেকে
ধেয়ে আসা স্টিমার-লঞ্চ, জেলে মাঝিদের চোখে বুকে
জাগাতো প্রলয় মাতম--আজ থুড়-থুড়ে বুড়ি
কোঁচকানো চামড়ার ভাঁজের খোড়লে, এ যেন
ভাঙ্গা জীবনেরই ভিন্ন এক ছবি।

আমরা ক’জন কবিতা-দর্শন-ধর্ম, প্রেম আরো কত কি সব
মোহময় শব্দাবলী গায়ে মেখে, গোধূলী-আবির ছুঁয়ে ছুঁয়ে
মুক্ত উড়ন্ত আকাশ দেখে, কেবলই
হোঁচট খেতে খেতে যে যার ঘরে ফিরে এসে--
যেন ক্লান্ত পাখী জীবনকে চেখে---
সুখে ঘুমাতাম, চিন্তাহীন।

সকালে চায়ের আড্ডায় ফের আজাদ রেস্তোরায় জীবনকে
খুঁজে পেতে সংসারহীন চোখ ডুবে যেত কবিতার কাপে।
তখনও আমাদের চোখে মুখে বুকে রাতের সৌরভ যেন
নড়তো চিবুকে-ঠোঁটে-চোখে, সেও এক সময়ের আমি।

তখন রবির হৃদয় আলো, নজরুলের দ্রোহ,
সুধীন-বিষ্ণু আর জীবনানন্দের ভাঙ্গা-গড়া খেলা,
ফররুখ-জসীম শেষে আল-মাহামুদ ও শামসুর রহমান এসে
মগজের সবগুলো কিট চিবিয়ে খেয়ে তোলপার করে
চলে যেত, পড়ে থাকতো চায়ের কাপের ঝড়,
চেয়ার টেবিলের এলোমেলো শব্দাবলী,
উম দেয়া কিছুটা সময়।

যে যার পথে হেঁটে সুখ খোঁজে; দীর্ঘ সময়ের ভাঁজে
জংধরা সে কবিতা শিশু সুখে-দুখে মাঝে মাঝে
এখনও জাবর কাটে, বুকে তার চৈতের
দাপটে পোড়া জেলে মাঝিদের ত্রাস
সেই মাসকাটা এখন শান্ত, শুধু চরা-ভূমি,
জবর দখলে বিবসা ক্লান্ত, পরে আছে
ছড়ানো ছিটানো ভাঙ্গা আয়নার মত।

পুরনো স্মৃতির সে ঝরাপাতা্র মড়মড় বিষন্ন গান
এলোমেলো শব্দাবলীর কান্না ভেজা
কৃষাণী-চোখের ভাষা, আজ আর নেই--
আধুনিক কারখানা, ধোঁয়ামাখা বাতাসের ছলাকলা,
খামখেয়ালী রক্তের আলপনা আঁকা রাজপথ কিংবা
অন্য কোন শব্দ দিয়ে তা আর এখন বোঝানো যাবেনা।

জানি, সরল স্মৃতির কথা কবিতা হবেনা, কবিতার
ফুল-কলি মুকুলেই অবেলায় ঝরে গেছে। আজ আর
কবিতার সেই মেঠো পথ, কাঁদা-মাটি, নদীর বাহার
হৃদয়ে নাচেনা; সাজানো ইটের নিচে সে স্মৃতির পাহার
কবিতার মরা ঘাস হয়ে বুকে জেগে আছে। আমার
ভেতরে কবিতা পরাগে সুপ্ত এক অসহায়-আমি বলে---
না না ওখানে যেওনা; এখন ওখানে ঐ ডোবা-জলে
কবিতার শব্দ নেই, সুখ নেই বেঁচে নেই কবিতা আমার।

#বরিশাল, ২৬০৩১৫
737 বার পড়া হয়েছে সর্বশেষ হালনাগাদ সোমবার, 09 নভেম্বর 2020 09:21
শেয়ার করুন
কে এম আলাউদ্দীন

কে এম আলাউদ্দিন বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার অম্বিকাপুর গ্রামে পহেলা মে ১৯৫৩ ইং সনে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম আব্দুল হামিদ মিয়া, মাতা মরহুমা রাবেয়া খাতুন। ৩ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে তিনি সকলের বড় । শৈশবকাল হইতেই তিনি লেখা প্রতি ঝোঁক ছিল। তিনি বরিশাল এপেক্স হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হতে ডি.এইস.এম.এস. ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতিতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করে আসছেন। সদা হাস্যোজ্জল ব্যক্তি তিনি। আলোর মুখোমুখি নামে তার একটি কবিতার বই ১৯৮৫ সনে প্রকাশিত হয়েছিল। বর্তমানেও তিনি নিয়মিত ভাবে লিখে চলেছেন, সাহিত্যের একজন সেবক হিসেবে এখনও তিনি সক্রিয়। তিনি বর্তমানে ৭৭৫, সদর রোড, শাকুর ম্যানসন (ক্যাপ্টেন নজিব উদ্দিন ক্লিনিক সংলগ্ন) বরিশাল শহরে বসবাস করছেন।

কে এম আলাউদ্দীন এর সর্বশেষ লেখা

একই ধরনের লেখা

3 মন্তব্য