কবিতা লিখতে ছন্দের প্রয়োজন নেই আবার ব্যাপক প্রয়োজন ৷ এখন বলি কবিতা লিখতে কেন ছন্দের প্রয়োজন ৷ পদ্য এবং কবিতা যতটা ভিন্ন ততটাই অভিন্ন ৷ ষাটের দশকে কাব্য জগত এমন ছিল যে পদ্য শুধুই পদ্য কিন্তু কবিতা নয় ৷ আবার প্রত্যেকটি কবিতা , পদ্যও হয় কবিতাও হয় ৷ এখন পদ্যের কথা বলছি এই কারণে যে ছন্দের ব্যাপারটি পদ্যেরই একটি অলংকার ৷ আর পদ্য কেবল একটি বিষয় একটি প্রেক্ষাপটে চুলচেরা বিষয় তুলে ধরে ছন্দের তবলায় ৷ কিন্তু কবিতা শুধু একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকে না ৷ কবিতা অনেকগুলো বিষয় জড়ো করবে তারপরে তার সবগুলো বিষয়ের সার্থকতা ঘটাবে এরকম একটি থিম আঁকবে শব্দের ব্যঞ্জনায় কিংবা অনুপ্রাসে ৷ এই যে এতক্ষন যে বক বক করলাম এগুলো বিশ শতকের গান শুনালাম ৷ এখন আসি একুশ শতকের কথায় ৷ এই প্রথম দশকে যারা এই শতাব্দীর কবি তারা বলছে , সবই নাকি কবিতা ৷ কেউ কেউ বলেন গালি /বকা দিলেও কবিতা ৷ এরকম ধারণা নিয়েই এই শতকের কবিরা আধুনিক কবিতা রচনা করতে ছন্দ ছেড়ে গদ্য ছন্দের লেবাস নিলেন ৷ আদর্শ করলেন নির্মলেন্দু দা , হেলাল ভাই আর আল মাহমুদ ভাইকে ৷ কিন্তু নির্মলেন্দু দা যে অনুপ্রাসের খেলা খেলতেন গদ্য ছন্দের কবিতায় তা গোবেচারা এই শতকের কবিরা ভুলতে বসেছে ৷ কেউ নিজ ধারা বলে ৷ কেউ বলে মুক্তক ছন্দ ৷ কিন্তু আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বলে কবিতা হোক আধুনিক কিংবা উত্তারাধুনিক ৷ যদি ছন্দ এবং সুর না থাকে তবে সেই কবিতা বেশিদিন টিকে না ৷ কারো হৃদয়ে জেকে বসেনা কবিতা ৷ আমি স্বীকার করি শতবার কবিতা লিখতে ছন্দের প্রয়োজন নেই ৷ কিন্তু বাংলা সাহিত্যে আপনি যদি বেঁচে থাকতে চান তবে ছন্দের পয়ারের সাধনা করতেই হবে ৷ অনেক কবিতার গভীর ভাবের দোহাই দিয়ে তার ছন্দ জ্ঞানের দূর্বলতা ঢাকতে চায় ৷ এটা ঠিক নয় ৷ কেননা প্রবীণরা যা পারেনা তা নবীনরা করে দেখাবে ৷ কিন্তু এভাবে যদি কবিতাকে ছন্দহীন করা হয় তবে গদ্য আর কবিতার মাঝে পার্থক্য হবে সহজবোধ্যতার ৷ তখন দেখা যাবে শরৎ বাবুর উপন্যাস হবে গদ্য ছন্দের মহাকাব্য ৷ তাই কবিতার উন্নতি হোক অবনতি নয় ৷ আর সময়ের সাথে কবিতারও গ্রহনযোগ্য বলে কথা আছে ৷ এই যান্ত্রিক সভ্যতায় মানুষ দাঁত ভাংতে কবিতা পড়বে না ৷ কবিতা হবে আনন্দ চিন্তার বস্তু ৷ এক জীবিত বস্তু ৷ আর তার প্রাণ হলো ছন্দ , অনুপ্রাস আরও কত কি ৷