গল্প নাকি বাস্তবতা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী ১ সখিনার প্রেম করে বিয়ে হয়েছিল একই গ্রামের রুবেল মিয়ার সাথে | রুবেল মিয়া বাউন্ডুলে ধরণের একজন মানুষ | অন্তঃসত্বা সখিনাকে ছেড়ে সে একদিন পালিয়ে গেলো | অসহায় সখিনার জীর্ণ ঘরে এলো রাজকন্যার মতো ফুটফুটে একটি মেয়ে | গ্রাম ছেড়ে সন্তানকে কোলে নিয়ে ভাগ্যের অন্বেষণে সখিনা ছুটলো রাজধানী শহর ঢাকায় | একটা বস্তিতে আশ্রয় নিলো সে | কাজ খুঁজতে গিয়ে খারাপ প্রস্তাব এলো তার কাছে | ছেঁড়া আঁচলে সে নরপশুদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে লাগলো | আর বেঁচে থাকার জন্য ক্ষুধার যন্ত্রনা তাকে তাড়িত করছিলো | তার উপর তার সন্তানের আর্তনাদ | একদিন সে বিবেক শুন্য হয়ে তার সন্তান কে বিক্রি করে দিলো | কোনো ব্যথা অনুভব করলোনা সে | নুতন করে ভাগ্য গড়ার নেশায় সে বিয়ে করলো বস্তির করিম মাতব্বরকে | একদিন সেও সখিনাকে অন্তঃসত্বা রেখে বস্তির আরেক মেয়েকে নিয়ে নিরুদ্দেশ হলো | সখিনার ঘরে আরেক মেয়ে জন্ম নিলো | একদিন সে তাকে বিক্রি করে দিলো | কিন্তু কোনো ধরনের অনুভূতি তার মধ্যে কাজ করল না | আবার ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে সে বিয়ে করলো বস্তির রজব বেপারীকে | খুব চতুর ছিল রজব বেপারী | সে কক্সবাজারে ঘুরতে নিয়ে গিয়ে এবার সখিনাকে বিক্রি করে দিলো নর পশুদের হাতে | তারপর শুধু অন্ধকারের গল্প | আর তার মেয়ে দুটি এরাও কি অন্ধকার জগতে হারিয়ে যাবে | বিবেককে প্রশ্ন করুন | উত্তরটা খুব কঠিন | এখানে দোষীদের ভিড়ে খুঁজে পাওয়া কঠিন কে আসল অপরাধী | ২ খুব রক্ষণশীল ঘরের মেয়ে ছিল রহিমা | সব কিছুতেই ছিল বিধি নিষেদ | মা বাবা বন্ধু না হয়ে কসাইয়ের মতো আচরণ করতো | বদ্ধ ঘরের মধ্যে পৃথিবীর আলো বাতাস না দেখেই বড় হয়ে উঠলো রহিমা | তার বাবা একদিন বাড়িতে এসে জানালেন তিনি মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছেন | রহিমার তখন পনের বছর বয়স | কিছুই বুঝত না সে | কারণ তার নিজের ভিতর যে সৃষ্টিশীলতা ছিল তা বিধি নিষেদের বেড়া জালে তার নিজেস্ব চিন্তা করার জগৎটার মৃত্যু ঘটেছিলো | পনের বছরের কচি একটি মেয়ের সাথে বিয়ে দেয়া হলো খুব রক্ষণশীল কাদের আলীর | পঞ্চাশ বছর বয়স ছিল তার | এর আগে তার পাঁচ বার বিয়ে হয়েছিল | বিয়ের পর নারী হিসেবে যে মর্যাদা পাবার কথা ছিল তা হারালো রহিমা | তার নিজেস্ব চিন্তার জগতের কোনো অস্তিত্ব ছিলোনা | এবার কাদের আলী কাদা মাটির মতো নরম মাথায় জঙ্গিবাদের বীজ ঢুকিয়ে দিলো | রহিমার সন্তান হলো | কিন্তু মা হবার আনন্দ তার মধ্যে ছিলোনা | একদিন সে পুরোপুরি জঙ্গি হয়ে গেলো | কাদের আলী ও তার অপর জঙ্গি সঙ্গীরা রহিমা ও তার সন্তানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নাশকতা করার জন্য একটা নিরাপদ জায়গা বেছে নিলো | রহিমা তাদের কুমন্ত্রণায় তার সন্তানকে মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলে নাশকতার অংশ হলো | গোয়েন্দারা গোপন সূত্ৰে খবর পেয়ে জঙ্গিদের আস্তানায় হামলা চালালো | রহিমা তার সন্তানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে গোলাগুলিতে তার সন্তানটির মৃত্যু হলো | রহিমা সামান্য আহত হলো | তার মনে কোনো ধরণের অনুসূচনা বা কষ্ট কাজ করলনা | এখানে কে প্রকৃত অপরাধী তা কে কেউ কখনো খুঁজবে নাকি বরফে ঢাকা পড়বেপ্রকৃত কারণ | ৩ দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে রাতুল রুবিনার সংসার খুব সুখেই কাটছিলো | রাতুল তার কাজকর্ম নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়লো | রাতে এসে সে সন্তাদের আদর করে কোলে নিতো আর তার বউয়ের অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করতো | একদিন রাতুলের সাথে তার এক পুরোনো বন্ধুর দেখা হলো | খুব জমকালো একটা আড্ডা দেয়ার পর সে তার বন্ধুকে নিয়ে রাতে তার বাড়িতে এলো | রুবিনা খুব যত্ন সহকারে রান্না করেছিল | রাতুলের বন্ধু রুবিনার খুব প্রশংসা করলো | রাতুল তার বন্ধুকে কথা প্রসঙ্গে বললো সে কাজের ব্যস্ততার জন্য রুবিনা ও ছেলে মেয়েদের সময় দিতে পারতোনা | বন্ধুটি লম্পট প্রকৃতির ছিল | সে কথাটি শুনেই বললো ভাবি আর বাচ্চাদের আমি সময় দিবো তুই কাজে মন দে | রুবেলের বন্ধু রুবিনার মন জয় করার চেষ্টা করতে লাগলো | রুবেলের নামেও অনেক মিথ্যে কথা বললো | একসময় রুবিনা ও রুবেলের বন্ধু একে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হলো | ছোট ছোট ছেলে মেয়ে দুটি বিষয়টা ভালোভাবে নিতে পারলোনা | একদিন তারা খারাপ ধরণের একটি ঘটনায় খুব কষ্ট পেলো | তারা তার মাকে বললো আজ বাবা আসলে সব বলে দিবো | রুবিনা চিন্তায় পড়লো | সে বিষয়টা রাতুলের বন্ধুকে জানালো | পরকীয়ার বলী হলো নিষ্পাপ দুটি সন্তান | রুবিনার মনে কোনো ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা গেলোনা | বিষয়টা শুধু রুবিনার ক্ষেত্রে ভাবা উচিত নয় এটা রাতুলের ক্ষেত্রেও হতে পারে | এখানে কে প্রকৃত অপরাধী এটা বোঝা খুব জটিল | সমীকরণটাও মেলানো খুব কঠিন | এখানে শিক্ষণীয় বিষয় গুলো হলো ১ | নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ জীবনের ব্যবস্থা করতে হবে | এ বিষয়ে সমাজ, গবেষক, সরকার, সচেতন নাগরিক ও মনস্তত্ববিদদের কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে | ২| নারীদের ঘরে বন্দি না করে পৃথিবীর আলোকিত ভুবনকে চেনাতে হবে | নারী ও পুরুষের ব্যবধান তৈরী করা উচিত নয় | অতি রক্ষনশীলতা মানুষকে জঙ্গি ও নির্মম বানায় | ৩| আপনজনের শিকার যেন আপনজন না হয় | সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে |