বৃহষ্পতিবার, 12 অক্টোবর 2017 22:43

গল্প নাকি বাস্তবতা নির্বাচিত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(0 টি ভোট)
                গল্প নাকি বাস্তবতা

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী


১
সখিনার প্রেম করে বিয়ে হয়েছিল একই গ্রামের রুবেল মিয়ার সাথে | রুবেল মিয়া বাউন্ডুলে ধরণের একজন মানুষ | অন্তঃসত্বা সখিনাকে ছেড়ে সে একদিন পালিয়ে গেলো | অসহায় সখিনার জীর্ণ ঘরে এলো রাজকন্যার মতো ফুটফুটে একটি মেয়ে | গ্রাম ছেড়ে সন্তানকে কোলে নিয়ে ভাগ্যের অন্বেষণে  সখিনা ছুটলো রাজধানী  শহর ঢাকায় | একটা বস্তিতে আশ্রয় নিলো সে | কাজ খুঁজতে  গিয়ে খারাপ প্রস্তাব এলো তার কাছে | ছেঁড়া আঁচলে সে নরপশুদের লোলুপ দৃষ্টি  থেকে নিজেকে রক্ষা করার  চেষ্টা করতে লাগলো | আর বেঁচে থাকার জন্য ক্ষুধার যন্ত্রনা তাকে তাড়িত করছিলো | তার উপর তার সন্তানের আর্তনাদ | একদিন সে বিবেক শুন্য  হয়ে তার সন্তান কে বিক্রি করে দিলো | কোনো ব্যথা অনুভব করলোনা সে | নুতন করে ভাগ্য গড়ার নেশায় সে বিয়ে করলো বস্তির করিম মাতব্বরকে | একদিন সেও  সখিনাকে  অন্তঃসত্বা রেখে বস্তির আরেক মেয়েকে নিয়ে নিরুদ্দেশ হলো | সখিনার ঘরে আরেক মেয়ে জন্ম নিলো | একদিন সে তাকে বিক্রি করে দিলো | কিন্তু কোনো ধরনের অনুভূতি তার মধ্যে কাজ করল না | আবার ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে সে বিয়ে করলো বস্তির রজব বেপারীকে | খুব চতুর  ছিল রজব বেপারী | সে কক্সবাজারে ঘুরতে নিয়ে গিয়ে এবার সখিনাকে বিক্রি করে দিলো নর পশুদের হাতে | তারপর শুধু অন্ধকারের গল্প | আর তার মেয়ে দুটি এরাও কি অন্ধকার জগতে হারিয়ে যাবে | বিবেককে প্রশ্ন করুন | উত্তরটা খুব কঠিন | এখানে দোষীদের ভিড়ে খুঁজে পাওয়া  কঠিন কে আসল অপরাধী |
 
২
 খুব রক্ষণশীল ঘরের মেয়ে ছিল রহিমা | সব কিছুতেই ছিল বিধি নিষেদ | মা বাবা বন্ধু না হয়ে কসাইয়ের মতো আচরণ করতো | বদ্ধ ঘরের মধ্যে পৃথিবীর আলো বাতাস না দেখেই বড় হয়ে  উঠলো রহিমা | তার বাবা একদিন বাড়িতে এসে জানালেন তিনি মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছেন |  রহিমার তখন পনের বছর বয়স | কিছুই বুঝত না সে | কারণ  তার নিজের ভিতর যে সৃষ্টিশীলতা ছিল তা বিধি নিষেদের বেড়া জালে তার নিজেস্ব চিন্তা করার জগৎটার মৃত্যু ঘটেছিলো | পনের বছরের কচি একটি মেয়ের সাথে বিয়ে দেয়া হলো খুব রক্ষণশীল কাদের আলীর | পঞ্চাশ  বছর বয়স ছিল তার | এর আগে তার পাঁচ বার  বিয়ে হয়েছিল | বিয়ের পর নারী হিসেবে যে মর্যাদা পাবার কথা ছিল তা হারালো রহিমা | তার নিজেস্ব চিন্তার জগতের কোনো অস্তিত্ব ছিলোনা | এবার কাদের আলী কাদা মাটির মতো নরম   মাথায় জঙ্গিবাদের বীজ ঢুকিয়ে দিলো | রহিমার সন্তান হলো | কিন্তু মা হবার আনন্দ তার মধ্যে ছিলোনা | একদিন সে পুরোপুরি জঙ্গি হয়ে গেলো | কাদের আলী ও তার  অপর  জঙ্গি সঙ্গীরা রহিমা ও  তার সন্তানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নাশকতা করার জন্য একটা নিরাপদ জায়গা  বেছে নিলো | রহিমা তাদের কুমন্ত্রণায় তার সন্তানকে মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলে নাশকতার অংশ হলো | গোয়েন্দারা গোপন সূত্ৰে খবর পেয়ে জঙ্গিদের আস্তানায় হামলা চালালো | রহিমা তার সন্তানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে গোলাগুলিতে তার সন্তানটির মৃত্যু হলো | রহিমা সামান্য  আহত হলো | তার মনে কোনো ধরণের অনুসূচনা বা কষ্ট কাজ করলনা | এখানে কে প্রকৃত অপরাধী তা কে কেউ কখনো খুঁজবে  নাকি বরফে ঢাকা পড়বেপ্রকৃত কারণ |
 
৩
 দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে রাতুল রুবিনার সংসার খুব সুখেই কাটছিলো | রাতুল তার কাজকর্ম নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়লো | রাতে এসে সে সন্তাদের আদর করে কোলে নিতো আর তার বউয়ের অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করতো | একদিন রাতুলের সাথে তার এক পুরোনো বন্ধুর দেখা হলো | খুব জমকালো একটা আড্ডা দেয়ার পর সে তার বন্ধুকে নিয়ে রাতে তার বাড়িতে এলো | রুবিনা খুব যত্ন সহকারে রান্না করেছিল | রাতুলের বন্ধু রুবিনার খুব প্রশংসা করলো | রাতুল তার বন্ধুকে কথা প্রসঙ্গে বললো সে কাজের ব্যস্ততার জন্য রুবিনা ও ছেলে মেয়েদের সময় দিতে পারতোনা | বন্ধুটি লম্পট প্রকৃতির ছিল | সে কথাটি শুনেই বললো ভাবি আর বাচ্চাদের আমি সময় দিবো তুই কাজে মন দে | রুবেলের বন্ধু রুবিনার মন জয় করার চেষ্টা করতে লাগলো | রুবেলের নামেও অনেক মিথ্যে কথা বললো | একসময় রুবিনা ও রুবেলের বন্ধু একে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হলো | ছোট ছোট ছেলে মেয়ে দুটি বিষয়টা ভালোভাবে নিতে পারলোনা | একদিন তারা খারাপ ধরণের একটি ঘটনায় খুব কষ্ট পেলো | তারা তার মাকে বললো আজ বাবা আসলে সব বলে দিবো | রুবিনা চিন্তায় পড়লো | সে বিষয়টা রাতুলের বন্ধুকে জানালো | পরকীয়ার বলী হলো নিষ্পাপ দুটি সন্তান | রুবিনার মনে কোনো ধরণের প্রতিক্রিয়া  দেখা গেলোনা | বিষয়টা শুধু রুবিনার ক্ষেত্রে ভাবা উচিত নয় এটা রাতুলের ক্ষেত্রেও  হতে পারে |  এখানে কে প্রকৃত অপরাধী এটা বোঝা খুব  জটিল | সমীকরণটাও মেলানো খুব কঠিন |
 
এখানে শিক্ষণীয় বিষয় গুলো হলো
১ | নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ জীবনের ব্যবস্থা  করতে হবে | এ বিষয়ে সমাজ, গবেষক, সরকার, সচেতন নাগরিক   ও মনস্তত্ববিদদের কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে |
২| নারীদের ঘরে বন্দি না করে পৃথিবীর আলোকিত ভুবনকে চেনাতে হবে | নারী ও পুরুষের ব্যবধান তৈরী করা উচিত নয় | অতি রক্ষনশীলতা মানুষকে জঙ্গি ও নির্মম বানায় |
৩| আপনজনের শিকার যেন আপনজন না হয় | সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে |            
            
725 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর এ দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন। শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি যেমন অবদান রেখে চলেছেন তেমনি সৃষ্টিশীল লেখার ক্ষেত্রেও তাঁর পদচারণা। তিনি মনে করেন বিজ্ঞান চর্চা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি একে অন্যের পরিপূরক। তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, গবেষক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, কবি, গীতিকার, নাট্যকার, সমাজ সংস্কারক ও সাংস্কৃতিক কর্মী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শনে বিশ্বাসী এই মানুষটির ছোটবেলা থেকেই লেখায় হাতেখড়ি। কৈশোর ও তারুণ্যে তিনি বাংলা একাডেমি, খেলাঘর, কঁচিকাচার মেলা সহ বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করেছেন। এই সময় তাঁর প্রবন্ধ, কবিতা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রকৌশল বিদ্যা অধ্যায়নের সময় তিনি প্রগতিশীল কর্মী হিসেবে কাজ করে সহিত চর্চা করে গেছেন। এ সময় তাঁর লেখাগুলো বিশ্ববিদালয়ের ম্যাগাজিনে এখনও সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও অনেকদিন ধরেই তিনি দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে লিখে চলেছেন। বাংলা ও ইংরেজি দুই সাহিত্যেই তাঁর সমান দক্ষতা রয়েছে। সমাজ, রাষ্ট্র, প্রকৃতি, বিজ্ঞান, শিক্ষা, পরিবর্তন, সম্ভাবনা ও মানুষ তাঁর লেখার মূল উপজীব্য বিষয়। তিনি একজন ভাল বক্তা। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টক্ শো সহ বিভিন্ন সৃজনশীল অনুষ্ঠানে তাকে অতিথি হিসেবে দেখা যায়। ভারতরে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় তথ্যমন্ত্রী অজিত কুমার পাঁজা কলকাতা দূরদর্শনের একটি প্রতিযোগিতায় তাঁর প্রেরিত প্রবন্ধে মোহিত হয়ে নিজ হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সে সময় সম্প্রচারিত হয়। এই খবরটি আজকাল, সংবাদ, বাংলাবাজার সহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এছাড়া তিনি ফিলিপিন্স, চীন, বি-টিভি সহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন পুরুস্কারে ভূষিত হন। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের একজন কর্মী হিসেবে তিনি কাজ করে চলেছেন।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী এর সর্বশেষ লেখা

1 মন্তব্য

  • মন্তব্যের লিঙ্ক exellamug সোমবার, 06 নভেম্বর 2023 18:21 লিখেছেন exellamug

    Additional studies are still needed to determine the role of FGFR signaling in recovery from injury; however, our data suggest that in surviving AEC2s, FGFR signaling may not be required for differentiation into type I AECs coupons for cialis 20 mg Although small amounts of senna cross into breast milk, it doesn t seem to be a problem for nursing babies

মন্তব্য করুন

Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.