অন্য রকম গল্প অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী দুজন কবি ছিলেন | তাদের একজন গ্রামে থাকতেন আর একজন শহরে থাকতেন | গ্রামে যে কবি থাকতেন তিনি গ্রাম ছাড়া কোনোদিন বাইরের পৃথিবী দেখেননি | আর যিনি শহরে থাকতেন তিনি শহর ছাড়া আর কিছুই দেখেননি | গ্রামে যে কবি বাস করতেন তিনি গ্রামের প্রকৃতি আর মানুষের জীবনধারা নিয়ে কবিতা লিখতেন | আর যিনি শহরে থাকতেন তিনি নগর জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কবিতা লিখতেন | আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কবিতা লেখা প্রতিযোগিতায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কবিদের কাছে কবিতা পাঠানোর অনুরোধ করা হলো | গ্রাম ও শহরের দুজন কবিই পুরুস্কৃত হলেন | তবে অবাক করা বিষয় হলো গ্রামে যে কবি বাস করতেন তিনি নাগরিক জীবনের বিষয় নিয়ে কবিতা লিখে পুরুস্কৃত হলেন আর শহরের কবি গ্রামীণ জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরে পুরুস্কৃত হলেন | অনেকে ভাবতে পারেন, যে মানুষ কখনো নগর দেখেনি সে পুরুস্কার পেলো নগরজীবনের কবিতা লিখে আর যে মানুষ কখনো গ্রাম দেখেনি সে পুরুস্কার পেলো গ্রামীণ জীবনের কবিতা লিখে-এটা কিভাবে সম্ভব | আসলে অসম্ভব বলে কিছু নেই | কবিরা সৃষ্টিশীল হন | তাদের কল্পনা শক্তি অদেখা ভুবনকে তাদের সামনে নিয়ে আসে | যার নাম হলো তৃতীয় নয়ন | ফলে তাদের মনের খোলা জানালা গ্রাম ছেড়ে শহরে, শহর ছেড়ে বিশ্বে আর বিশ্ব ছেড়ে মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে | ২ এক ছোট শহরে দুজন বিখ্যাত মানুষ বাস করতেন | এদের একজন কবি আর একজন বিজ্ঞানী | কবি লিখলেন “আলো তোমার বেগে ছুটে চলি দিগন্ত ছেড়ে দিগন্তে যে কোন স্বপ্নরাঙা মুহূর্তে” | বিজ্ঞানী কবিতাটি পড়ে একটা দারুণ আইডিয়া পেলো | তিনি আলোর গতিকে ব্যবহার করে কিভাবে মুহূর্তেই একজায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া যায় তা নিয়ে গবেষণা করা শুরু করলেন | হয়তো তা একদিন বাস্তবতায় রূপ নেবে | কবি তার আরেক কবিতায় লিখলেন “আমি সমুদ্রের গভীরে বানাতে চাই আমার বসতবাড়ি যেথায় নীল জলতরঙ্গে ভিজবে জীবন গাড়ি”| বিজ্ঞানী কবিতাটি পড়ে আর্কিমিডিসের মতো বলে উঠলেন “ইউরেকা ইউরেকা পেয়েছি পেয়েছি”| তিনি সমুদ্রের পানির গভীরে কিভাবে মানুষে বাসস্থান, শিল্পকারখানা গড়ে তোলা যায় তা নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন | হয়তো এটাই আজ ও আগামীর বাস্তবতা | মাটির পৃথিবীর নিচে মানুষের বসবাসের জন্য আরেক পৃথিবী তৈরী হবে | একদিন কবি লিখলেন আমি যৌবন ফিরে পেতে চাই আত্মার নির্ভরতায়”| বিজ্ঞানী পেলেন আরেকটি আইডিয়া | তিনি আত্মার গবেষণার মাধ্যমে চির যৌবন ধরে রাখার আবিষ্কারে মন দিলেন | কবির কল্পনা অনেকে ভাবতে পারে অবাস্তব | তবে কবিরাই আসল বিজ্ঞানী, যারা কল্পনা দিয়ে নুতন ধারণা তৈরী করেন আর বিজ্ঞানীরা তা বাস্তবে রূপ দেন | তাই একদিন বিজ্ঞানী বিনয়ী হয়ে বললেন “কবিতা একটি বিজ্ঞান আর কবিরা হলেন বিজ্ঞানীদের শিক্ষক” | কবি সম্মানিত হলেন | তিনিও বিনীতভাবে বললেন “বিজ্ঞানীরা হলেন কবি যারা কবিতাকে বাস্তব করে তুলেন | তারা কবিদের স্বপ্নস্রষ্টা | বিজ্ঞানী মোহিত হলেন |দুজন দুজনকে আবেগে জড়িয়ে ধরলেন | সৃষ্টি হলো নুতন ইতিহাস, নুতন ধারণা | ৩ একদিন এক ফরাসি দার্শনিকের সাথে একজন স্বৈরাচারী শাসকের দেখা হলো | স্বৈরাচারী শাসক দার্শনিককে জিজ্ঞাসা করলো “বলুনতো ক্ষমতার হাত কত বড়” | দার্শনিক বললো “ক্ষমতার হাত আগুনের মতো |” স্বৈরাচারী শাসক অত্যন্ত কৌতুহল নিয়ে বললো “বুঝতে পারলাম না |” উত্তরে দার্শনিক বললেন “যখন আগুনের উত্তাপ থাকে তখন আগুনে সবকিছু পুড়তে থাকে | কেউ বাঁচতে পারেনা | কিন্তু আগুন যখন থেমে যায় তখন সবকিছু ছাই হয়ে যাই | আর দমকা বাতাসে তা উড়ে চলে যায় | তখন আগুনের কোনো অস্তিত্ব থাকেনা | ক্ষমতার হাত ততটুকু যতক্ষণ আগুন জ্বলতে থাকে আর আগুনের উত্তাপ থাকে | তারপর ঐ হাতের কোনো অস্তিত্ব থাকেনা |” স্বৈরাচারী শাসক দার্শনিক বললো “আমাকে সবাই সুশাসক না বলে স্বৈরাচারী বলে কেন?” দার্শনিক বললেন “এটা ব্যক্তির উপর নির্ভর করে | যারা আপনার দ্বারা উপকৃত হয় তারা আপনাকে স্বৈরাচারী বলে কারণ তারা আরো বেশি পেতে চায় | তাদের চাহিদার কোনো শেষ থাকেনা | আর যারা আপনার দ্বারা শোষিত হয় তারাতো আপনাকে স্বৈরাচারী বলবেই | তবে এর সঠিক উত্তর দিতে পারে আপনার বিবেক | মনের আয়নার সামনে দাঁড়ান আর বিবেককে জিজ্ঞাসা করুন আপনি কে? উত্তরটা পেয়ে যাবেন |” যখন স্বৈরাচারী শাসক দার্শনিকের সাথে কথা বলছিলেন তখন তার স্ত্রী এতে বিরক্তি প্রকাশ করতে লাগলেন আর চোখ রাঙিয়ে রাগতস্বরে বললেন “তোমার রাতে আজ খবর আছে |” দার্শনিক কানে কানে স্বৈরাচারী শাসককে বললেন “আপনার থেকে আপনার স্ত্রী বেশি স্বৈরাচারী বলে মনে হচ্ছে | স্বৈরাচারী বিষয়টা আবার কমবেশি হতে পারে | যাক বিচারের ভার আপনার উপর |” স্বৈরাচারী শাসক দার্শনিককে বললেন “আমার ও আমার স্ত্রীর থেকে আপনি বেশি স্বৈরাচারী |” দার্শনিক জিজ্ঞেস করলো কেন | স্বৈরাচারী শাসক বললেন “আমার কানের কাছে চুপিসারে কথা বলে আমার স্ত্রীর মধ্যে যে সন্দেহ তৈরী করলেন তা আমাকে সারাজীবন ভুগাবে |” আসলে কে স্বৈরাচারী তা বলা খুব কঠিন | পৃথিবীটা বুঝি এমনই একটা অদ্ভুত জায়গা | এখানে শিক্ষণীয় বিষয় গুলো হলো ১ | মানুষ যদি সৃজনশীল হয় তবে তার দৃষ্টিভঙ্গি অনেক প্রসারিত হতে পারে | তার ভিতরের সৃষ্টিশীলতা তাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায় | অনেক অদেখা ভুবন তার কল্পনা শক্তি দিয়ে সে দেখতে পায় | ২| কবিরা বিজ্ঞানীদের শিক্ষক হতে পারে আর বিজ্ঞানীরা কবিতাকে বাস্তবতায় রূপ দেয় | দুজনেই একে অন্যের পরিপূরক |আর বিনয় কেবলমাত্র প্রকৃত যোগ্য মানুষেরাই দেখতে পারে | ৩| পৃথিবীতে কে স্বৈরাচারী তা বলা খুব কঠিন | এটা ব্যক্তির বিবেচনা ও বিবেকের উপর নির্ভর করে।