এই পৃষ্ঠা প্রিন্ট করুন
শুক্রবার, 05 জুন 2015 07:42

আলোকবর্তিকা নির্বাচিত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(2 টি ভোট)
                রোকন আজ একটু চিন্তিত কারন ইকবালের একটা কথার কোন কূলকিনারা বের করতে পারছেনা।ইকবাল আবার মাঝে মাঝে কিছু হাইপোথিটিকাল কথা বলে থাকে।অন্যরা এসব হাসি দিয়ে উড়িয়ে দিলেও রোকন আবার ইকবালের কথার খুব গুরুত্ব দেয়।ইকবালের সবচেয়ে ভালো বন্ধু রোকন।আর তাইতো ইকবালের যেকোনো ভালো কাজে রোকন সবসময় উৎসাহ দেয়,আর রোকন যদি কোন ভুল করে তবে ইকবালই সবচেয়ে আগে  সেই ভুল সংশোধনের জন্য এগিয়ে আসে।দুজনের এই বন্ধুতের কথা রাকিব আবার একটু আধটু বোঝে,সাদ বুঝলেও না বোঝার ভান করে থাকে।তরুণ আবার অন্যের বন্ধুত্ব-ভালোবাসার প্রতি খুব বেশি মনোযোগ দেয়না,নিজের প্রেম-ভালোবাসা নিয়েই বেশি ব্যাস্ত।আর জয়ন্ত সবসময় একটু সংশয়ে থাকে তরুনের বন্ধুত্ব নিয়ে।আসলেই কি লাবণ্য তরুনের বন্ধু নাকি তার চেয়েও বেশি কিছু!!!

সকাল গড়িয়ে দুপুর এল বলে কিন্তু এখনও ইকবালের কথার কোন কূল কিনারা করতে পারছেনা রোকন।সকাল বেলা শুভংকর সারের ক্লাসে উপস্থিতি জানান দিয়ে সেইযে ক্লাস থেকে দুজন বের হয়ে গেছে আর যাওয়া হয়ে উঠেনি।একবার অবশ্য ক্লাসে যেতে চেয়েছিল তার প্রিয় আলিম সারের ক্লাস করার জন্য কিন্তু ইকবালের প্রশ্নের উত্তর বের না করা পর্যন্ত তার কোন কাজে মন বসছেনা।চিন্তায় মনোযোগ আনার জন্য রোকন মনে মনে তাই একটা ফাঁকা রুম খুজছিল।দ্বাদশ শ্রেণীর ভাইয়াদের  যে সমাপনি পরীক্ষা চলছিল সংকর দা তা ভুলেই গিয়েছিল।ছোট মেয়ে শিউলিমালার বিয়েতে বরপক্ষ যৌতুক চেয়েছে ৫০০০০! টাকা।এই চিন্তায় বিভোর হয়ে কখন যে নিত্যকার মত ভাইয়াদের ক্লাসরুম খুলে রেখেছে তার খেয়ালও নেই। মাঝে মাঝে কিছু ভুল বড় কোন সৃষ্টির পথ বের করে দেয়।রুমটা ফাকা পেয়ে রোকন তাই আপনমনে প্রশ্নের জবাব খুঁজতে লাগলো।ধীরে ধীরে মনে করার চেষ্টা করল ইকবালের প্রশ্নটা-

“দিনের বেলায় সূর্য এই পৃথিবীকে আলোকিত করে,রাত্রিতে করে বিদ্যুৎ ,শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে দিনদিন এই পৃথিবী,কিন্তু তারপরও পুরো পৃথিবীতে এত অন্ধকার কেন?কেন এত অশান্তি?”

বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছিল ইকবাল।

পর পর তিন ক্লাসে রোকনকে দেখতে না পেয়ে রাশেদ আবার খুঁজতে খুঁজতে চলে এল ঐ ক্লাসে।রোকনকে খুঁজে পেয়েই তো আচ্ছা বকা শুরু করল রাশেদ।

তোকে আমি কতগুলো ফোন দিয়েছি তুই দেখেছিস?

রোকনের অবশ্য সেই দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।আনমনে ভেবে যাচ্ছে কামালের প্রশ্নের উত্তর তালাশের জন্য।হঠাৎ তার মনে হোল,আচ্ছা রাশেদকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে কেমন হয়?অন্যরা যখন সারাক্ষণ ইন্টারনেটে ফেসবুক নিয়ে বসে থাকে রাশেদ তখন বেশির ভাগ সময় পার করে বিভিন্ন বই পুস্তক আর ম্যাগাজিন পড়ে।কারন রাশেদ বিশ্বাস করে “জানতে হলে পড়তে হবে,কিন্তু সত্য জানতে হলে অনেক বেশি পড়তে হবে”।

কালবিলম্ব না করে রোকন বলেই ফেলল রাশেদকে ।রাশেদ একটু চিন্তা করে বলল,আরে বুদ্ধিজীবী এত কিছু জানিস আর এই সহজ প্রশ্নের উত্তর জানিস না।রোকনের যেন আর তর সয়ছিল না।রাশেদ তুই বলবি ??নাকি মজা করছিস আমার সাথে।আমি প্রায় তিন ঘন্টা ধরে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি,আর তুই এক মুহূর্তের মধ্যে এটা বের করে ফেললি।

আচ্ছা বলছি।

উত্তর দেবার আগে রাশেদ রোকনকে একটা প্রশ্ন করল-আচ্ছা রোকন বলত আমাদের কে সৃষ্টি করেছেন?

রোকন বলল,কেন মুসলমানরা বলবে আল্লাহ্‌,হিন্দুরা বলবে ঈশ্বর আর খ্রিষ্টানরা বলবে গড।

হুম।রাশেদের চেহারায় কিছুটা গম্ভীর ভাব ফুটে উঠল।

আচ্ছা তাহলে বল?সে আল্লাহ্‌,ঈশ্বর কিম্বা গড কি পৃথিবীর মানুষকে আলোকিত করার  জন্য কোন জীবনবিধান পাঠিয়েছেন?

হ্যা পাঠিয়েছেই তো।রোকন যেন মুখস্ত বলতে লাগল।তাওরাত মুসা নবীর উপর,যবুর হজরত দাউদ নবীর উপর,ইঞ্জিল হজরত ইসা নবীর উপর এবং সর্বশেষ আল কুরআন হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর।

এখন বল,এই মহামানবেরা দুনিয়াতে কি জন্য এসেছিলেন?

কেন?মানুষের অন্তরকে আলোকিত করে সত্যিকার মনুষ্যত্ব জাগ্রত করার জন্য।

কি পেয়েছিস তোর উত্তর?

ঠিক বুঝলাম না।

সূর্য দিনে আলো দেয়,বিদ্যুতের আলোয় রাত্রির অন্ধকার দূরীভূত হয় সত্যি।কিন্তু যে অন্ধ, চোখে দেখতে পায়না তার কাছে কি এই আলোর আদও কোন মূল্য আছে?পুরো পৃথিবীটা নিয়ন বাতি দিয়ে আলোকিত করলেও তো তার কাছে এই জগতটা অন্ধকারই লাগবে।

রোকন বলল,হ্যাঁ তাইতো।

বন্ধু,আমাদের এই পঞ্চইন্দ্রিয় দিয়ে আমরা যে জ্ঞান অর্জন করতে পারি সেই জ্ঞান দিয়ে এই দুনিয়ার সকল পাপ-পঙ্কিলতার অন্ধকার দূর করা সম্ভব নয়,তার জন্য দরকার এমন একটা আলোকবর্তিকা যা কিনা মানুষের হৃদয় আলোকিত করে,পবিত্র করে তোলে তার আত্মাকে।আর তা হচ্ছে-আল্লাহ্‌ ,ঈশ্বর কিম্বা গড হতে প্রেরনকৃত জীবনবিধান।এবং সেটাই হচ্ছে সমস্ত মানব জাতির জন্য এক স্থায়ী আলোকবর্তিকা।আমরা যেদিন এই আলোকবর্তিকাকে সাথে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলব সেদিন এই ধরণীতে আর কোন অন্ধকার থাকবেনা,রইবেনা কোন অশান্তি।রোকন কিছু বলবে বলবে মনে হচ্ছিল কিন্তু রাশেদের জবাব যেন তাকে আবার নতুন করে ভাবনায় ফেলে দিল।            
            
914 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
আল মামুন উর রশিদ

একটি সুন্দর গল্প মানুষকে হেরার পথ দেখাতে পারে...

আল মামুন উর রশিদ এর সর্বশেষ লেখা

6 মন্তব্য