এই পৃষ্ঠা প্রিন্ট করুন
শনিবার, 26 সেপ্টেম্বর 2020 22:41

হৃদয়ের আর্তনাদ - পর্ব ১ নির্বাচিত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(3 টি ভোট)
                ছোট গল্প 
হৃদয়ের আর্তনাদ

শীতের মাঝামাঝি  সময়, কলেজের বন্ধু সঞ্জয়  চক্রবর্তীর বড় ভাইয়ের বিয়েতে বরযাত্রী হয় আশরাফুল। মাদারীপুর জেলা শহর থেকে সমান্য একটু দূরে পল্লী একটি গ্রামে। বিয়ের গাড়ি রাত দশটা কুড়ি মিনিটে কনে বাড়ি  পৌঁছে।  হিন্দু রীতি রেওয়াজে বরকে বরণ করা হয়। বরযাত্রীদের যথাযথ আপ্যায়নের ব্যবস্থা তারা করেছে। মুসলিম বরযাত্রীদের আলাদাভাবে খাওয়ানোর জন্য স্থানীয় একজন মুসলমান ব্যক্তির বাড়িতে আয়োজন করা হয়েছে। আশরাফুল ও কলেজের আরো তিন বন্ধু, অন্যান্য মুসলমান বরযাত্রী, এক সাথে সেখানে খাওয়া দাওয়া করে বিয়ে বাড়ি উপস্থিত হয়। শান্তশিষ্ট আশরাফুল কিছুক্ষণ বিয়ের অনুষ্ঠান দেখে  নির্ধারিত বাড়িতে তারা ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে খাওয়া দাওয়া সেরে, চার বন্ধু মাদারীপুর শহরে ঘুরে, দুপুরের আগেই বিয়ে বাড়ির দিকে চলতে থাকে। ফেরার পথে গ্রামের পথ দিয়ে হেঁটে হেঁটে যাবার সময় গ্রামের ছায়াঘেরা সবুজ নৈসর্গে মুগ্ধ হয় আশরাফুল। তার কাছে গ্রামটা খুব চেনাচেনা লগে। মনে হয় এ গ্রামে তার আপন কেউ আছে। ক্ষুধিত হৃদয় অনুসন্ধান করতে থাকে, আড়াল থেকে কে যেন তাকে উদাসীন করে দিচ্ছে?  তিন বন্ধু চঞ্চল স্বভাবের আচরণ করে পথ চলছে। আশরাফুল যেন ভাবগাম্ভীর্যের সাথে নিরবে তাদের সাথে হেঁটে চলছে। তিন বন্ধু এজন্য আশরাফুলকে একটু খোঁচা দিয়ে কথা বলে হাসাহাসি করে। শান্ত স্বভাবের আশরাফুল ভাল ছাত্র হওয়ায় তাদের দলনেতার ভূমিকায় আছে। মাঝে মাঝে বন্ধুদের কথায় মৃদু হাসে। এভাবে সামনে চলার পথে একটি আম বাগান দেখে তারা সেখানে দাঁড়ায়।  বাগানের সাথে মাঝারি ধরণের একটি পুকুর। পুকুরের পারেই পুরাতন ধনী বাড়ি। আশরাফুল ও তার বন্ধুরা বাগানে হাসি আনন্দ করে পুকুরের পাড়ে বসে পদ্মফুল দেখতে থাকে। এমন সময় একটা কিশোর ছেলের সাথে একজন ষোড়শী কন্যা তাদের সামনে দিয়ে আমড়া ফল নিয়ে হেঁটে চলছে। আশরাফুলের বন্ধুরা গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে মেয়েটিকে বলেন, ম্যাডাম আপনার হাতে এগুলো কী?
- আমড়া ফল
- এগুলো কী করে? (তারা জানে তবু মেয়েটির সময় অপচয় করা তাদের উদ্দেশ্য)
- এগুলো টক জাতীয় ফল খেয়ে দেখুন (কিছু আমড়া তাদের খেতে দেয়) 
একজন বলেন তাহলে আমাদের পানি পান করাতে হবে।
- ঠিক আছে আপনারা অপেক্ষা করুন এই ছেলেকে দিয়ে পানি পাঠিয়ে দেব।
তারা চিন্তা করে মেয়েটি তো চলে যাবে। তাকে আরেকটু সময় রাখতেই হবে। হঠাৎ একজন হাবাগোবার পরিচয় দিয়ে আমড়া ফল কামড় দেয়। মেয়েটি ফিক করে হেসে বলে এভাবে নয়। তারা বলে তো কি ভাবে?
- বেশ! অপেক্ষা করেন, আমি খাওয়ার উপযোগী করে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আপনাদের বাড়ি কোথায়? 
তারা নিজেদের পরিচয় দেয়। আশরাফুল চুপচাপ।  মেয়েটির দিকে প্রথম দর্শনেই হৃদপিণ্ডের লাব ডাব শব্দটা বৃদ্ধি পায়। উদাস ভাবে দেখতে থাকে মেয়েটির সুদর্শন গোলাকৃতি মুখমন্ডল। দু' চোখের গাম্ভীর্যতা। সেখানে যেন তার, ক্ষুধিত হৃদয় শীতল হয়ে যায়। 
কচি লাউয়ের মত গোলগাল বাহুদ্বয়। তুলতুলে হাতের আঙ্গুলের সৌন্দর্যতা। মোটকথা পায়ের পাতা থেকে কেশগুচ্ছের ছবি তার হৃদয়ে বন্দি করে রাখে। পেয়ে যায় যেন হৃদয়ের কাঙ্ক্ষিত, কল্পনার অংকিত মনোরাণীর সন্ধান। মনে মনে রাঙিয়ে তোলে টোনাটুনির সংসার। কিশোর ছেলেটি একটা বেঞ্চ এনে দেয়। তারা সেখানে কিছুক্ষণ বসতেই, ছেলেটি ঝাল লবন মরিচ দিয়ে, আমড়া মাখানো একটি প্লেট তাদের হাতে দেয়। বন্ধুরা মিলে মাখানো আমড়া খেয়ে বিয়ে বাড়ির দিকে চলতে থাকে।            
            
708 বার পড়া হয়েছে সর্বশেষ হালনাগাদ শনিবার, 03 অক্টোবর 2020 13:36
শেয়ার করুন
মোহাম্মাদ আজিজুল হক

মোহাম্মাদ আজিজুল হক ১৯৮৬ সালে ২ অক্টোবর, নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামের নন্দকুজা নদীর তীরে, মধ্যবিত্ত এক মুসলিম পরিবারে জম্মগ্রহণ করেন। পিতা আলহাজ্ব মো. আব্দুস সাত্তার, মাতা মোছা. জয়নব বেগম (পরি)- এর চার সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। শৈশব থেকেই সাহিত্যের প্রতি তাঁর ছিলো ব্যাপক অনুরাগ। প্রিয় নদী নন্দকুজার ঢেউয়ের তালে, জোৎস্নাস্নাত রাতে ছন্দ খুঁজে পান। দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'প্রেমাঞ্জলি' প্রকাশিত হয়। তারপর দীর্ঘ সময় সাতিত্য চর্চা থেকে দূরে থাকলেও ২০১৫ সালে, পুনরায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি শুরু করেন। ২০১৬ সালে,একুশে বই মেলাতে তাঁর ছোট গল্প 'দ্বীপান্তর' ২০১৭ সালে একুশে বই মেলায় 'সবুজের বুকে লাল' ও 'আলো ছায়া' কাব্যগ্রন্থ (যৌথভাবে) প্রকাশিত হয়। ২০২০ সালে অমর একুশে বই মেলাতে একগুচ্ছ গল্পনিয়ে 'স্বপ্নদেবী' প্রকাশিত হয়। বর্তমানে তার গবেষণা গ্রন্থ, নিজ জেলা নাটোর নিয়ে 'ঐতিহ্যের লীলাভূমি নাটোর' উপন্যাস 'আমি হেরে গেলাম' প্রবন্ধ 'এসো দুশ্চিন্তা ও বেকারত্বহীন জীবন গড়ি' প্রকাশের অপেক্ষায়। তিনি লেখালেখির সঙ্গে নিবিড় ভাবে জড়িত। তার লেখায় চিরায়ত গ্রামবাংলার সৌন্দর্য ফুটে উঠে, শৈল্পীক শব্দের কাঁরুকাজে। ডিপ্লোমা ইন ডেন্টাল কোর্স ও বি এস এস ডিগ্রী শেষ করে, মানব সেবার ব্রত নিয়ে চিকিৎসা সেবায় তিনি নিয়োজিত আছেন। খেয়ালী মনের মানুষ লেখালেখির মাঝে খুঁজে পান জীবনের আস্বাদন। দাম্পত্য জীবনে তিনি এক সন্তানের (রিফাতুজ্জামান ইমন)-এর জনক। বর্তমান বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। আশা করি তার লেখা পড়ে পাঠক মুগ্ধ হবেন।

মোহাম্মাদ আজিজুল হক এর সর্বশেষ লেখা

4 মন্তব্য