এই পৃষ্ঠা প্রিন্ট করুন
বৃহষ্পতিবার, 02 জুলাই 2015 13:40

লোডশেডিং নির্বাচিত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(1 ভোট)
                আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে।বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের পরিবেশ নিয়ে খুব সুখকর কোনো বার্তা ছিলনা।তাই প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম হলে থাকবনা।হঠাৎ ঢাকা কলেজের এক বন্ধুর সাথে দেখা।বললাম,“ বন্ধু,বিশ্ববিদ্যালয়ে তো চান্স পেলাম কিন্তু থাকব কোথায়”।রাসেল বলল,“দোস্ত,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এত হল থাকতে তুই ভাবছিস কোথায় থাকবি”?আমি বললাম ,“দোস্ত হলে নাকি সন্ত্রাসী আর ছাত্র পাশাপাশি থাকে।ও বলল,“দোস্ত,তুই তো রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে পড়েছিস তুই তো বরং হলে থাকার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী হবার কথা।আর তুই কিনা বলছিস হলে থাকবিনা।শোন, “ওসব কান কথায় মন দিসনা,হলে উঠে যা”।সেই থেকে হলে থাকা।

ঢাকাতে এত সমস্যা,বিশুদ্ধ পানির অভাব,নিরিবিছিন্ন বিদ্যুৎ নেই,গাছপালাও খুব একটা দেখা যায়না।এত সমসার মাঝে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো যেন এক একটা স্বর্গ ।এখানে নিজস্ব পাম্প দ্বারা পানি উঠানো হয়,সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ।সবমিলে লোডশেডিং নামে যে একটা শব্দ আছে  শব্দকোষে তা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।ভুলে যাবার অবশ্য আরো দুটো কারণ আছে।প্রথম কারণ-আমার বাড়ী সিরাজগঞ্জ শহরে,গত চার দলীয় ঐক্যজোটের আমলের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর বাড়িও আমাদের সিরাজগঞ্জ।সেই আমলে সিরাজগঞ্জের মানুষ লোডশেডিং নামক সুখকর!অনুভুতির কথা ভুলে গিয়েছিল।এরপর ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে ক্লাস নাইনে  ভর্তি হলাম ।এখানেও  সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ ছিল।বাবার কাছ থেকে তো অনেক টাকা নিয়েছি তাই ভাবলাম এবার একটা টিউশনি করলে কেমন হয়,নিজের খরচ নিজে চালানো যাবে।ক্যাম্পাসে টিউশনি কিছু মানুষের জন্য অপরিহার্য,কিছু মানুষের জন্য এটা নেশা আর কিছু মানুষের এটা পেশা।আমার জন্য অবশ্য তা অপরিহার্য ছিল।

 আদাবরে ক্লাস ফাইভের এক ছাত্রকে পড়ানো শুরু করলাম। শীতকালে যেতে খুব কষ্ট না হলেও গরমকালে যেতে বেশ কষ্ট হত ।অনেক সময় বাদর ঝোলার মত বাসে চড়ে যেতে হত।ছাত্রটি লেখাপড়ায় বেশ ভাল,পড়া জিজ্ঞেস করলে খুব দ্রুত উত্তর দিত ।একদিন পড়ানোর সময় হঠাৎ বিদ্যুত চলে গেল ।ভাবলাম এই সেরেছে,এখন উপায় ?লোডশেডিং এর সুখকর ! অনুভুতির কথাতো ভুলেই গিয়েছিলাম।বই খাতা দিয়ে তো আর ছাত্রের সামনে বাতাস দেয়াও যায়না।এই যখন ভাবছিলাম,তখন অমনি আমার সেই ছাত্রটি এক ভৌদৌড় দিয়ে একটা তালপাতার পাখা নিয়ে এসে আমায় বাতাস করতে লাগলো।আমি অনেক চেষ্টা করলাম ওকে নিবৃত করবার কিন্তু ও বাতাস দিয়েই চলছিল ।বাসে যেতে যেতে ভাবলাম ,হইতোবা আমি নতুন শিক্ষক এজন্য আমাকে একটু বেশি খাতির যত্ন করছে।কিন্তু না আমার ভুল ভেঙ্গে গেল আবার যখন পড়ানোর সময় লোডশেডিং হোল।এরপর যতবার পড়ানোর সময় বিদ্যুত চলে যেত ততবারই ও হাতপাখা নিয়ে এসে ও আমায় বাতাস করত ।ছেলেবেলায় গোলাম কাদের নেয়াজ এর “শিক্ষাগুরুর মর্যাদা” কবিতা খানি পড়েছিলাম ।

একদিন বাদশা আলমগীর দেখলেন ,তার পুত্র মৌলভির পায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছে আর মৌলভি সাহেব নিজ হাতে তার পায়ের ধুলা -বালি পরিষ্কার করছেন।বাদশাহ আলমগীর তার পুত্রের উপর প্রচন্ড রাগান্নিত হন এজন্য যে ,পুত্র কেন শুধু মৌলভীর পায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছিল, পায়ের ধুলা বালিও কেন পরিষ্কার করছিল না ,শিক্ষকের এত অমর্যাদা”। ছেলে বেলায় কবিতা পড়ার সময় বুঝতে চেষ্টা করেছিলাম শিক্ষা গুরুর আসলে কত! মর্যাদা ।যদিও আমার শিক্ষা গুরুদের আমি এতখানি সম্মান করতে পেরেছি কিনা তা বলাই বাহুল্য।কিন্তু আজ যখন আমি নিজেই সেই গুরুর ভূমিকায়,তখন এই সম্মান টুকু পেয়ে আমি সত্যিই অভির্ভুত ।তাই মনে হয়,আজো বাংলার ঘরে-ঘরে বাদশাহ আলমগীরের মত বাবা আছেন যারা তার সন্তানদের শিক্ষকের মর্যাদা সম্পর্কে শিক্ষা দিয়ে থাকেন ।আর তাইতো লোডশেডিং এর কষ্টকর অনুভুতি তো দুরে থাক।এই সুখকর অনুভূতিটিই আমার ক্ষুদ্র শিক্ষকতার জীবনে পরম পাওয়া।তাইতো ধন্যবাদ  লোডশেডিংকে।।            
            
1610 বার পড়া হয়েছে সর্বশেষ হালনাগাদ বৃহষ্পতিবার, 10 সেপ্টেম্বর 2020 13:54
শেয়ার করুন
আল মামুন উর রশিদ

একটি সুন্দর গল্প মানুষকে হেরার পথ দেখাতে পারে...

আল মামুন উর রশিদ এর সর্বশেষ লেখা

1 মন্তব্য