সোমবার, 31 আগষ্ট 2020 01:08

চিল্কায় সকাল নির্বাচিত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(1 ভোট)
                কী ভালো আমার লাগলো আজ এই সকালবেলায়,

কেমন করে বলি!

কী নির্মল নীল এই আকাশ,

কী অসহ্য সুন্দর!

যেন গুণীর কণ্ঠে অবাধ উন্মুক্ত তান,

দিগন্ত থেকে দিগন্তে।

কী ভালো আমার লাগল এই আকাশের দিকে তাকিয়ে।

চারদিক সবুজ পাহাড়ে আঁকাবাঁকা,

কুয়াশায় ধোঁয়াটে,

মাঝখানে চিল্কা উঠছে ঝিলকিয়ে।

তুমি কাছে এলে,

একটু বসলে,

তারপর গেলে ওদিকে,

ইস্টিশনে গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে, তা-ই দেখতে।

গাড়ি চলে গেল।

- কী ভালো তোমাকে বাসি,

কেমন করে বলি!

আকাশে সূর্যের বন্যা, তাকানো যায় না।

গরুগুলো একমনে ঘাস ছিঁড়ছে, কী শান্ত।

- তুমি কি কখনো ভেবেছিলে এই হ্রদের ধারে এসে

আমরা পাব

যা এতদিন পাই নি?

রুপোলি জল শুয়ে-শুয়ে স্বপ্ন দেখছে,

নীলের স্রোতে ঝরে পড়ছে তার বুকের উপর সমস্ত আকাশ

সূর্যের চুম্বনে।

- এখানে জ্বলে উঠবে অপরূপ ইন্দ্রধনু

তোমার আর আমার রক্তের সমুদ্রকে ঘিরে

কখনো কি ভেবেছিলে?

কাল চিল্কায় নৌকোয় যেতে-যেতে আমরা দেখেছিলাম

দুটো প্রজাপতি কত দূর থেকে উড়ে আসছে

জলের উপর দিয়ে।

- কী দুঃসাহস!

তুমি হেসেছিলে,

আর আমার

কী ভালো লেগেছিল

তোমার সেই উজ্জ্বল অপরূপ সুখ।

দ্যাখো, দ্যাখো,

কেমন নীল এই আকাশ।

- আর তোমার চোখে

কাঁপছে কত আকাশ,

কত মৃত্যু,

কত নতুন জন্ম

কেমন করে বলি।            
            
2175 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
বুদ্ধদেব বসু

বুদ্ধদেব বসু (জন্ম : নভেম্বর ৩০, ১৯০৮ - মৃত্যু : মার্চ ১৮, ১৯৭৪) একজন খ্যাতনামা বাঙালি সাহিত্যিক। তিনি একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, গল্পকার, অনুবাদক, সম্পাদক ও সাহিত্য-সমালোচক ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর বিশ ও ত্রিশের দশকের নতুন কাব্যরীতির সূচনাকারী অন্যতম কবি হিসেবে তিনি সমাদৃত। তবে সাহিত্য সমালোচনা ও কবিতা পত্রিকার প্রকাশ ও সম্পাদনার জন্য তিনি বিশেষভাবে সম্মাননীয়। অল্প বয়স থেকেই কবিতা রচনা করেছেন, ছেলে জুটিয়ে নাটকের দল তৈরি করেছেন। প্রগতি ও কল্লোল নামে দু'টি পত্রিকায় লেখার অভিজ্ঞতা সম্বল করে যে কয়েকজন তরুণ বাঙালি লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবদ্দশাতেই রবীন্দ্রনাথের প্রভাবের বাইরে সরে দাঁড়াবার দুঃসাহস করেছিলেন তিনি তাদের অন্যতম। ইংরেজি ভাষায় কবিতা, গল্প, প্রবন্ধাদি রচনা করে তিনি ইংল্যান্ড ও আমেরিকায়ও প্রশংসা অর্জন করেছিলেন। ছাত্রজীবনে ঢাকায় তিনি যে এক্সপেরিমেন্ট শুরু করেন প্রৌঢ় বয়সেও সেই এক্সপেরিমেন্টের শক্তি তার মধ্যে প্রত্যক্ষ করা যায়। তার প্রথম যৌবনের সাড়া এবং প্রাক-প্রৌঢ় বয়সের তিথিডোর উপন্যাস দু'টি দুই ধরনের এক্সপেরিমেন্ট।[৪] তার চল্লিশোর্ধ বয়সের রচনাগুলোর মধ্যে - গ্রিক, ল্যাটিন, সংস্কৃত নানা চিরায়ত সাহিত্যের উপমার প্রাচুর্য্য দেখা যায়। অতি আধুনিক উপন্যাসের গীতিকাব্যধর্মী উপন্যাস রচনা করেছিলেন বুদ্ধদেব বসু। রচনার অজস্রতা এবং অভিনব লিখনভঙ্গীর দিক দিয়ে তিনি খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তার উপন্যাসে যে ঘাত-প্রতিঘাত ও মানবিক প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করেছেন, তাতে মনঃস্তত্ত্বের বিশ্লেষণের পরিবর্তে কাব্যোচ্ছাসের প্রাধান্য বিদ্যমান। অকর্মণ্য, রডোড্রেনড্রন গুচ্ছ, যেদিন ফুটল কমল প্রভৃতি উপন্যাসে বুদ্ধদেব বসু কাব্যপ্রবণতার পরিচয় দিয়েছেন। তিথিডোর, নির্জন স্বাক্ষর, শেষ পাণ্ডুলিপি ইত্যাদি উপন্যাস নতুন জীবন-সমীক্ষা-রীতির পরিচয়বাহী। বুদ্ধদেব বসু'র দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ পৃথিবীর প্রতি (১৯৩৩) 'বন্দীর বন্দনা'র পরিপূরক গ্রন্থ। উভয় গ্রন্থেই শরীরী প্রত্যয়ে প্রেমের অভিব্যঞ্জনা প্রকাশ পেয়েছে। কিছুটা স্বাদের ব্যতিক্রম এসেছে 'কঙ্কাবতী' (১৯৩৭) কাব্যগ্রন্থে। পদ ও বাক্যাংশের পুনরাবৃত্তির সাহায্যে একটি ধ্বনি আবর্ত নির্মাণ করে বুদ্ধদেব বসু যৌবনের আনন্দগানকে স্বাগত জানিয়েছেন।

বুদ্ধদেব বসু এর সর্বশেষ লেখা

2 মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.