রবিবার, 06 সেপ্টেম্বর 2020 13:16

হঠাৎ হাওয়া নির্বাচিত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(0 টি ভোট)
                হঠাৎ হাওয়া উঠেছে এই দুপুরে
আকাশী নীল শান্তি বুঝি ছিনিয়ে নিতে চায়।
মালোঠিগাঁও বিমূঢ়, হতবাক্‌।
মেঘের ক্রোধ গর্জে ওঠে ঝড়ের ডঙ্কায়।
এখনই এল ডাক।
মন্দাকিনী মিলায় তাল তরঙ্গের নূপুরে।

এ যেন হরধনুর টান ছিলাতে
হেনেছে কেউ প্রবল টংকার।
চিনের চোখ মীলিত। কার ভীষণ জটাজাল
আকাশে পড়ে ছড়িয়ে, শোনো বাতাসে বাজে তার
সঘন করতাল।
ত্রিলোক কোটিকণ্ঠে চায় গানের গলা মিলাতে।

এ যেন কোন্‌ শিল্পী তার খেয়ালে
উপুড় করে দিয়েছে কালো রঙ
আকাশময়। পাখিরা ত্রাসে কুলায়ে ফিরে যায়।
কে যেন তার ক্রোধের কশা দারুণ নির্মম
হানে হাওয়ার গায়ে।
অট্টহাসি ধ্বনিত তার গিরিগুহার দেয়ালে।

এবং, দ্যাখো, নিমেষে যেন কী করে
মিলিয়ে যায় খামার-ঘরবাড়ি,
মিলিয়ে যায় নিকট-দূর পর্বতের চূড়া।
খেতের কাজ গুছিয়ে মাঠ-চটিতে দেয় পাড়ি
ত্রস্ত গাঁওবুড়া।
বিদ্যুতের নাগিনী ধায় মেঘের কালো শিখরে।

হঠাৎ হাওয়া উঠেছে এই দুপুরে,
আকাশী নীল শান্তি যেন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
মালোঠিগাঁও বিমূঢ়, হতবাক্‌।
মেঘের ক্রোধ গর্জে ওঠে ঝড়ের ডঙ্কায়।
এসেছে তার ডাক।
মন্দাকিনী মিলায় তাল তরঙ্গের নূপুরে।            
            
584 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (১৯ অক্টোবর ১৯২৪-২৫ ডিসেম্বর ২০১৮) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কবি। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে আবির্ভূত আধুনিক বাংলা কবিদের অন্যতম। 'উলঙ্গ রাজা' তার অন্যতম বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থ লেখার জন্য তিনি ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্য একাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। কবি পশ্চিমবঙ্গে বাংলা আকাদেমির সাথে দীর্ঘকাল যুক্ত ছিলেন। তার শৈশব কেটেছে পূর্ববঙ্গে যা বর্তমান বাংলাদেশ, ঠাকুরদা আর ঠাকুমার কাছে। কবির ঠাকুরদা কর্মজীবন কাটিয়েছেন কলকাতায়। কর্মজীবন শেষে ৫০ বছর বয়সে কলকাতার পাট চুকিয়ে বাংলাদেশের ফরিদপুরের বাড়ি চান্দ্রা গ্রামে চলে আসেন। তার বাবা কলকাতাতেই ছিলেন। কলকাতার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে তিনি কাজ করতেন। দুই বছর বয়সে কবির মা বাবার কর্মস্থল কলকাতায় চলে যান। কবি থেকে যান তার ঠাকুরদা লোকনাথ চক্রবর্তীর কাছে। গ্রামে কাটিয়েছেন মহা স্বাধীনতায়—ইচ্ছেমতো দৌড়ঝাঁপ করে। কখনো গাছে উঠছেন; কখনো আপন মনে ঘুরেছেন গ্রামের এই প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। চার বছর বয়সে কবির কাকিমা বলেছিলেন, ‌'তুই তো দেখছি কবিদের মতোন কথা বলছিস!' সেই সময়েই মুখস্থ করেছিলেন কবিগান, রামায়ণ গান। গ্রামের দিনগুলো খুব সুন্দর কাটিয়েছেন, তাই তিনি গ্রামের বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় যেতে চাইতেন না। মাত্র ৫ বছর বয়সে তিনি প্রথম কবিতা লেখেন। কিন্তু সেটা কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। ১৬ বছর বয়স থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় তিনি কবিতা লিখে এসেছেন। ১৬ বছর বয়সেই "শ্রীহর্ষ" পত্রিকায় কবিতা লেখার মধ্যে দিয়েই সাহিত্যজগতে তাঁর প্রথম আত্মপ্রকাশ হয়। "দৈনিক প্রত্যহ" পত্রিকায় তাঁর সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। "সত্যযুগ" পত্রিকার সাংবাদিক রূপে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি একে একে "মাতৃভূমি", "স্বরাজ", "ভারত", "ইউনাইটেড প্রেস অফ্ ইন্ডিয়া" প্রভৃতি পত্রিকায় কাজ করা শুরু করেন। ১৯৫১ সালে যোগ দিয়েছিলেন ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকায়। দীর্ঘ সময় তিনি ‘আনন্দমেলা’ পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। নীরেন্দ্রনাথের প্রথম কবিতার বই ‘নীল নির্জন’, প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৪ সালে। এরপর প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা ‘অন্ধকার বারান্দা’, ‘নীরক্ত করবী’, ‘নক্ষত্র জয়ের জন্য’, ‘আজ সকালে’ সহ অসংখ্য কবিতার বই। সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তার লেখা ‘উলঙ্গ রাজা’ কবিতায় সামন্ততান্ত্রিক জমিদার, জোতদার সমাজ ব্যবস্থাকে তীব্র কটাক্ষের বাণে বিদ্ধ করেছিলেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। কবিতার শেষ লাইনে লেখা ‘রাজা তোর কাপড় কোথায়’ লাইনটি আজও মানুষের মুখেমুখে।

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এর সর্বশেষ লেখা

1 মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.