শুক্রবার, 02 অক্টোবর 2015 10:15

ভ্রমণ-বিত্তান্ত (১ম কিস্তি)

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(1 ভোট)
                মেয়েটি ধীরে ধীরে আমার সিটের পাশে এসে দাড়ালো। হাতের ব্যাগ রাখবে কিনা দ্বিধান্বিত। বয়স বিশের বেশি হবে না। নীল স্কার্ফের আড়ালে মুখের বর্ণনা দেয়া সত্যিই অসম্ভব। যদিও কপালে বিরক্তির দেড় ইঞ্চি ভাঁজ। রূপবতী নারীরা যেমন হয় আরকি! নিজের পার্স ছাড়া সব কিছুই এদের চোখে বিরক্তিকর। তবুও ভাগ্য ভালো জীবন বাবু বেঁচে নেই। থাকলে বনলতাকে বিসর্জন দিয়ে একে নিয়ে মহাকাব্য শুরু করতেন। নাম দিতেন বনলতাবধ কাব্য কিংবা মেয়েটির কবিপ্রদত্ত নাম। জানানো দরকার, আমি এখন ঢাকাগামী বাসে বসে আছি। বাসের নাম বিনিময়, গাড়ীচালক মহিউদ্দীন পাটোয়ারী ওরফে পাটু ড্রাইভার আমার পেয়ারি লোক। তবে কন্ট্রাক্টর অপরিচিত। সম্ভবত নতুন মাল। যাহোক, দ্বিধা কাটিয়ে শেষমেশ কথা বললো মেয়েটা।
-----ভাইয়া, এখানে কেউ আছে?
-----হুম, আমি আছি।
-----বলতে চাচ্ছি আপনার পাশে কেউ আছে?
-----মানুষ দেখতে পাচ্ছি না। তবে দু একটা ভূতের বাচ্চা আছে হয়তো।
-----মানে?
-----দেখতে পারছি না বলেই তো অস্বীকার করতে পারি না। করলে অনেক  অদৃশ্যকেই অস্বীকার করতে হয়। 
------ফালতু মজা বাদ দেন, প্লিজ।"
-----মজা হবে কেনো? মার্কেসকে চিনেন না? নোবেল পাওয়া জার্মান সাহিত্যিক। বলতে গেলে অদৃশ্য বিষয়ে ঘাটাঘাটি করেই নোবেল পেয়েছেন। আমাদের তারাশঙ্কর আর সত্যজিৎও কিন্তু কম যান নি। আধুনিক যামানার হুমায়ুন স্যারও পিছিয়ে নেই। হয়তো জানেন।
মেয়েটি বসে পড়লো পাশেই। কপালের ভাঁজ ক্রমেই গিরিখাতে পরিণত হচ্ছে।হয়তো গাড়িতে অন্য কোন সিট ফাঁকা থাকলে এখানে বসতো না।
-----হুম জানি। আর এটাও জানলাম আপনি একটা ইডিয়ট। প্রথম শ্রেণীর ইডিয়ট। আপনার সাথে ঢাকা পর্যন্ত যেতে হচ্ছে বলে আমি অপমানিত বোধ করছি।
----তার গণতান্ত্রিক অধিকার একান্তই আপনার। তবে পরিমাণ বেশি হলে অন্য কাউকে অপমান করতে পারেন। বিষে বিষক্ষয়।
-----প্লিজ, স্টপ এন্ড ফরগেট ইউর রাবিশ স্ট্র‍্যাটেজি অব মেকিং ফুল।
 -----পৃথিবীতে প্রায় সবকিছুই রাবিশ। সবাই কোনো এক সময় কারো না কারো সামনে রাবিশ। আজ আমার কথা আপনার কাছে রাবিশ, কাল আপনার কথা অন্য কারো কাছে রাবিশ হবে। হয়তো লাল টুপিওয়ালা কোন ভদ্রলোক হেড়ে গলায় বলবে, "আপনি একটা আপাদমস্তক উজবুক। সামনে থেকে সরে আমায় একটু স্বস্তির শ্বাস নিতে দিন।" একটু অন্যরকম মনে হলেও কথাটা সত্যি, কম আর বেশি রাবিশ আমরা সবাই। কবি দোহরেন এর একটা কবিতাই আছে,
The world is full of rubbish
I see it all around
Strewn along the pavements
And scattered ‘cross the ground,,,,
----দেখুন, আপনার এই দার্শনিক তত্ত্ব রাস্তার টোকাইদের কাছে ঝারুন। পারলে অন্য কোন সিটে বসুন। আপনাকে আমার সহ্য হচ্ছে না।
আর কিছু বলতে পারতাম। কে জানে, কী অঘটন ঘটিয়ে বসে? নারী বড় আজব চিজ। ঈশ্বরের মতলব বুঝে উঠা যায়, এদের মন বুঝে উঠার কোনো পথ নেই। তাই কানে ইয়ারফোন গুঁজে চুপ মেরে থাকাকেই শ্রেয় মনে করলাম। গান না শুনে খালি ইয়ারফোন কানে গুঁজে রাখার একটা আলাদা মজা আছে। সবার মাথায় ভুল ধারণা ঢুকিয়ে দেয়ার মজা। 
 বেশ কিছু সময় কাটলো। এর মধ্যে মেয়েটা সাত বার আমার দিকে তাকিয়েছে। আমি তাকাই নি, জানালার কাঁচ দেখে গুনেছি। সুন্দরী মেয়েদের ভুল ধারণাগুলোর একটি হচ্ছে নিজেদের র‍্যাম্পে দাড়ানো মডেল আর বাকী মানুষকে উন্মুখ দর্শক ভাবা। এই আধুনিকাও তার বাইরে নয়। কৌতূহলে পরীক্ষা করছে, পাশেরজন উৎসুক হয়ে কয়বার তাকাচ্ছে। 
একটু ঝিমুনি আসছিলো। এমন সময় বাস কন্ট্রাক্টর এসে সামনে দাড়ালো। তামিল হিরো প্রভাসের ছবিওয়ালা টি-শার্ট পড়লেও মুখ থেকে ভিলেনি স্বভাব ঘুচেনি। বরং আরো প্রকট হয়েছে গোঁফের দ্বারা।
                       (চলবে)            
            
951 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
আহমেদ দীন রুমি

খুঁজতে এসো না বৃথা, দিনশেষে পাবে নাকো থই, আর যাই হই আমি, তোমাদের ফটোকপি নই।

2 মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.