বৃহষ্পতিবার, 26 ফেব্রুয়ারী 2015 21:11

হোমিওপ্যথি মানেই ৫০সহস্রতমিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(5 টি ভোট)
                
হোমিওপ্যাথি মানেই
৫০ সহস্রতমিক
পদ্ধতিতে চিকিৎসা
-ডা: কে এম আলাউদ্দীন
 
আলোচ্য বিষয়ই বলে দিচ্ছে হোমিওপ্যাথি ও ৫০ সহস্রতামিক পদ্ধতির মধ্যে আমি কোন পার্থক্য করতে চাই না। তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ বিষয়টি উপস্থাপন না করে আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে, আমার উপলদ্ধি দিয়ে চিকিৎসা জীবনের বাস্তবতার নিরিখে সহজ সরল ভাবে হোমিওপ্যাথিকে যে ভাবে বুঝেছি তাই শুধু উল্লেখ করতে চাই।
আমার আলোচনা হোমিওপ্যাথিতে আমার আন্তরিকতার আলোকে করতে চাই-অর্জিত জ্ঞান, বুদ্ধি বা বিজ্ঞতার আলোকে নয়। কারণ, বিজ্ঞ পাঠকবৃন্দ অবশ্যই আমার চেয়ে অনেক বেশী জ্ঞানী ও গুনি ।
হ্যানিম্যান শুধু দার্শনিক বা জটিল ধরণের কোন তত্ব কথা দিয়ে হোমিওপ্যাথি আরোগ্য কলার বাগানকে সাজিয়ে রেখে যাননি। বরং মানুষের দুঃখ কষ্টকে আন্তরিকবতার সাথে উপলদ্ধি করতে চেষ্টা করেছেন, তা নিরসনের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। বিজ্ঞানের জটিলতা সমূহ আত্মোপলদ্ধির মাধ্যমে খুব সহজ করে মানুষের কল্যাণ উপযোগী করার চেষ্টা করেছেন।
হ্যানিম্যানের নিজের উপলদ্ধির বাস্তবতা তাকে, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিসেবে সম্মান প্রদান করেছে। কাগুজে সদৃশ বিধানের অনেক কথা হ্যানিমেন-পূর্ব সময়েও প্রচলিত ছিল। তিনি শুধু, সে সব জ্ঞানগর্ভ দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক ভাষ্য সমূহ বিশ্লেষণ করেই হোমিওপ্যাথি আবিস্কার করেননি বা নতুন কিছু আবিস্কারের নেশায় হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের আবিস্কার করেননি। হোমিওপ্যাথি আবিস্কারের পেছনে রয়েছে তার জীবন=যন্ত্রনা , জীবনের উপলদ্ধি, সত্য পথে চলার তীব্র আকাংখা ও বিশ্বাস- তার সাথে নিজেকে, নিজের সমাজকে উপলদ্ধি করার আন্তরিকতাপূর্ণ মানবিক প্রস্তুতি।
তিনি বুঝতে পেরেছিলেন,
- সত্য পথের তিনি একাই পথিক।
- সত্যের জন্য অবশ্যই তাকে অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হবে।
মানব কল্যাণে উৎসর্গকৃত মহাপ্রাণ তার প্রথম প্রস্তুতির চিহ্ন হিসেবে, তিনি তার সখের ও কষ্টের অর্জিত {তৎকালীন (এলোপ্যাথিক) চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্ব্বোচ্চ এম ডি ডিগ্রী} চিকিৎসা জীবনই পরিত্যাগ করেছিলেন।
ভূমিকায় এ কথাগুলো উল্লেখ করে, স্বরণ রেখে-- হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে আমার একটি ধারনার জন্ম হয়েছে যা আপনাদের সামনে পেশ করতে চাই। তবে এর পূর্বে হ্যানিম্যানের যন্ত্রনা কাতর কিছু উপলদ্ধির ছায়াচিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরছি---------
১। কেন বিজ্ঞ জনেরা উপলদ্ধি করতে পারেন না, রোগের সৃষ্টি হয় কিভাবে এবং নিরাময়ের সঠিক উপায় কি?
-যার কারণ রোগ রয়েছে
ক। জীবন প্রক্রিয়ার অভ্যন্তরিন প্রকৃতিতে এবং খ। দেহের অদৃশ্য অভ্যন্তরে (পদটিকা-১)
নিরাময় প্রসংগে বলা যায়---
ক। কল্পনা পূর্ণ এবং অনুমান ভিত্তিক কোন নিরাময় পদ্ধতিই রোগ নিরাময় করতে পারেনা।(ঐ)
খ। অবশ্যই রোগ নিরাময়ের ভিন্ন কোন পথ রয়েছে।
২। যখন পীড়িত মানব সাহায্যের আশায় অসহায় ভাবে ধুকতে থাকে তখন কেন অজ্ঞ লোকেরা দুর্বোধ্য ভাষায় রোগের অদ্ভুৎ ধরনের ব্যাখ্যা দিয়ে জীবন যন্ত্রনাকে আরো বিষময় করে তোলেন, হ্যানিম্যান উচ্চারণ করলেন -রুগ্ন মানুষগুলোকে গালগল্প দ্বারা আশার বানী না শুনিয়ে রোগ মুক্তির সত্যিকার উপায় খুজতে হবে। - এ হল হ্যানিম্যানের যন্ত্রনা কাতর আত্মোলদ্ধির বাস্তব সম্মত প্রকাশ্য ভাষা যা রুগ্ন মানুষের রোগ যন্ত্রনা থেকে নিরাময়ের একমাত্র সোপান।
মহাত্মা হ্যানিম্যান মানব জীবনে মহান আল্লাহর মহিমা প্রত্যক্ষ করে বুঝতে পারলেন, কোন আরোগ্য যোগ্য রোগ বা পীড়া জনিত পরিবর্তন শরীরের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকতে পারে না, বিজ্ঞ চিকিৎসকের নিকট অবশ্যই তা প্রকাশিত হয়ে থাকে ২ ভাবে--
ক। ব্যক্তি কেন্দ্রীক লক্ষণ হিসেবে
খ। বস্তুকেন্দ্রীক লক্ষণ হিসেবে;
আরোগ্য পথে যা মহান আল্লাহর ইঙ্গিত (অর্গানন, অধ্যায়-১৪)।
ধ্যান মগ্ন হ্যানিম্যান শুনতে পেলেন, নৈঃশব্দের গর্ভীর গহ্বর থেকে কে যে উচ্চারণ করছে--
লক্ষণ সাদৃশ্য দ্বারা আরোগ্য সাধন কর (অ,অধ্যায়-৫০)।
সম্মোহিত আত্মমগ্ন হ্যানিম্যান গভীর আত্ম বিশ্বাসের সাথে ঘোষনা করলেন, হোমিওপ্যাথি পদ্ধতি রোগারোগ্য লাভের জন্য অবিতর্কিত ভাবে সঠিক পথ, যা আমার আগে কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে কখনও ব্যবহার করেননি এটা প্রকৃতির শ্বাশ্বত এবং অব্যর্থ বিধির উপর প্রতিষ্ঠিত (অ,অ-৫২,৫৩)।
হ্যানিম্যান এ পদ্ধতিতে রোগী আরোগ্যর জন্য একমাত্র অব্যর্থ পথ প্রদর্শক হিসেবে আমাদের কাছে উপস্থাপন করলেনঃ-
১। রোগের সদৃশ ঔষধ নির্বাচন (অ-২৪)।
২। যা অবশ্যই সুপরীক্ষিত হতে হবে (অর্গা: পাদটিকা ১৫৬)
৩। যথপোযুক্ত ভাবে তা শক্তিকৃত হতে হবে। (অর্গা: অ- ২৪৬)
৪। অবশ্যই তা স্বল্প মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে (অ-২৭২)।
৫। এক বারে একটি মাত্র ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। (অর্গা:অ- ২৭)
স্বরণ রাখার জন্য এভাবে উল্লেখ করা যায়-- ১। সদৃশ ২। পরীক্ষিত ৩। শক্তিকৃত ৪। ক্ষুদ্র ৫। একক
এখানেই হ্যানিম্যান থেমে যাননি, মানবতার কল্যাণে নিমগ্ন হ্যানিম্যান রুগ্ন মানুষকে আরো সহজে আরোগ্য প্রদানের জন্য নতুনভাবে পথ চলা ও গবেষনা শুরু করলেন। নতুন ভাবে শুনালেন প্রায় পুর্নাঙ্গ সফলতার বাণী- রেখে গেলেন, চিকিৎসকবৃন্দের জন্য বন্ধন-মুক্ত হয়ে, রোগী আরোগ্যের অমিয় ধারায় অবগাহনের অভিজ্ঞতার-অলোয় সজ্জিত সুশৃঙ্খল সোপান। জীবনের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ অর্গানন ৬ষ্ঠ সংস্করণে তাই তিনি হোমিওচিকিৎসা জগতে বিস্ফোরণ ঘটালেন। ঔষধ প্রয়োগ বিষয়ে পূর্বের অধিকাংশ ধারনা সমূহ পাল্টে দিলেন। অর্গানন ৫ম সংস্করণ পর্যন্ত প্রয়োগ পদ্ধতি সমূহ বাতিল বলে ঘোষনা করলেন। (অ- ২৪৬ পাদটিকা)
বন্ধন মুক্ত হল হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞান---
১। দ্রুত বিনা কষ্টে ও স্থায়ী রোগী আরোগ্যের পথ উন্মুক্ত হয়ে গেল।
২। মুক্ত বিহঙ্গের মত খোলা আকাশে বিচরনের উপায় খুঁজে পেল চিকিৎসকবৃন্দ।
নতুন ভাবে সংযোজিত হল হোমিওপ্যাথির জয়গান---
১। জলে গুলে ঔষধ প্রদান (অ-২৪৬, ২৭২)
২। নির্দিষ্ট সময় অন্তর (প্রয়োজনে, ঐ পাদটিকা)
৩। শক্তি পরিবর্তন রীতিতে (অ-২৪৮)
৪। স্বল্প মাত্রায় (সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত,অ- ২৪৬)
হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের সকল জ্ঞানের উৎস অর্গানন। হ্যানিম্যান তার জীবদ্বশায়ই এর ৫টি সংস্করণ দেখে গিয়েছিলেন। ৬ষ্ঠ সংস্করণ (১৮৪২, ২০ ফেব্রুয়ারী) প্রেসে দেয়ার পর তিনি ইহ ধাম ছেড়ে যান। প্রসঙ্গ ক্রমে এখানে উল্লেখ করা যায় যে, সকল যুগেই সকল লেখকবৃন্দ তাদের সমৃদ্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সমূহ তার পরবর্তি সংস্করণে সংযোজন করে থাকেন তাই সর্বশেষ সংস্করণকেই সর্বাধিক মূল্যায়ন করা হয়। হ্যানিম্যানের অর্গাননের ক্ষেত্রেও এটাই স্বাভাবিক। অর্গাননের ৫টি সংস্করণ প্রকাশের সময়কাল ছিল ১৮১০-১৮-২৪-২৯-৩৩ এবং ৬ষ্ঠ সংস্করণ প্রেসে দেয়ার পর বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে ১৯২১ সনে জগৎবাসি তার প্রকাশ্য রূপ দেখতে পান। তাই জ্ঞানের দাবী হলো, সর্ব শেষ ৬ষ্ঠ সংস্করণকেই অর্গানন হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ ৬ষ্ঠ সংস্করণই অর্গানন। আমি মনে করি অর্গানন বল্লেই ৬ষ্ঠ সংস্করণকেই বোঝাবে। অন্যান্য সংস্করণের প্রয়োজন হোমিও চিকিৎসা-বিজ্ঞানের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা উপলদ্ধির জন্য, চিকিৎসার জন্য নয়।
অন্যান্য সংস্করণের ব্যবস্থপনা, হোমিও চিকিৎসা-ব্যবস্থাপনায় টেনে আনাই এ চিকিৎসা জগতে বিভেদের মূল কারণ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় শেষ সংস্করণের অর্গাননকেই চিকিৎসার ভিত্তি রূপে আঁকড়ে ধরা।
হ্যানিম্যান এক জন, অর্গানন একটি,
চিকিৎসা পদ্ধতিও একটি (৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতি)
অর্থাৎ হোমিওপ্যাথি একক ।
বলা যায় হ্যানিম্যান, অর্গানন, হোমিওপ্যাথি ও ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা একই কথা। এখানেই সকল মত পথ এক হয়ে গেছে। এখানে এই আরোগ্যের মহামিলন কেন্দ্রে হোমিওপ্যাথির সাথে ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। ৫০ সহস্রতামিক পদ্ধতিতে চিকিৎসাই হোমিওপ্যাথি এবং হোমিওপ্যাথি মানেই ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা।
৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতি আসলে কি? খুব সহজ ভাবে যা বুঝা যায় সে বিষয়ে বলতে চাই হোমিওপ্যাথি আবিস্কারের প্রথম থেকেই শততমিক পদ্ধতিতে ঔষধ তৈরী করা হত। হ্যানিম্যান নিজে এ পদ্ধতিতেই ঔষধ তৈরী করতেন। এ পদ্ধতির প্রধান কথা হল প্রথম শক্তি থেকে পরবর্তী শক্তির মধ্যে ভেষজ অনুর পরিমান ১/১০০ অংশ কম বা ক্ষুদ্র; এ নিয়মেই তা ক্ষুদ্র হতে থাকে এবং প্রতি শক্তি তৈরীতে ১০ টি ঝাঁকি দিতে হয়।
অতঃপর হ্যানিম্যান ১৮৩৩ থেকে গবেষনার গতি আরো বৃদ্ধি করলেন চিকিৎসা জীবনের কিছু কিছু বিষয় তাকে ভাবিয়ে তুল্‌লো। গবেষনার এক পর্যায়ে ক্রনিক ডিজিজ প্রকাশিত হল। যা ছিল তার দীর্ঘ ১২ বৎসরের সাধনার ফসল। সেখানেও তিনি ঔষধ তৈরীর প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন ভাবে গবেষণা চালিয়ে গেলেন। ঔষধ প্রস্তুত সম্পর্কে রুগ্ন মানুষের কষ্ট দূর করার জন্য তার চিন্তা ও গবেষণার ধারা ক্রমগতিতে এগিয়ে চল্লো।
হ্যানিম্যানের জীবিত অবস্থায়ই তিনি নতুন পদ্ধতির ঔষধ প্রস্তুত করেছিলেন। তার বাক্সেই পাওয়া গেল ৫০ সহসতমিক পদ্ধতির ঔষধের ১৭১৬ টি শিশি। এ পদ্ধতিতে তার চিকিৎসিত রোগী বিবরণীও পাওয়া গেল। সকল বিষয়ই তিনি অর্গাননে বিশদ ভাবে উল্লেখ করেছেন। যা ১৮৪২ সালেই তার মৃত্যুর পূর্বে ছাপার জন্য প্রেসে দিয়ে দিলেন। বিভিন্ন কারনে ১৯২১ সালে যা প্রকাশিত হয়।
বলা যায়, নতুন ভাবে প্রস্তুতকৃত ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতির উৎস অর্গানন এবং হোমিওপ্যাথি বিজ্ঞানের উৎসও অর্গানন।
এখানে শক্তির নাম করণ ও রূপ সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করা যেতে পারেঃ
দশমিক (Decimal), শততমিক (Centesimal) ও সহস্রতামিক (Millesimal)। প্রতি ক্রমে ভেষজের বস্তুভাগ কমার ভিত্তিতে নাম করণ করা হয়।
দশমিক পদ্ধতির চিহ্ন সাধারণত ১x ,৩x ,৬x ,--- ; দশমিক পদ্ধতি হোমিওপ্যাথিরূপে ব্যবহৃত হলেও আসলে এটাকে হোমিওপ্যাথি বলা যায় না। কারণ এ পদ্ধতি হ্যানিম্যানের আবিস্কৃত নয়। ডা: হেরিং এ পদ্ধতি আবিস্কার করেণ।
শততমিক পদ্ধতির চিহ্নঃ সাধারণত ৩০, ২০০, ১এম, ১০ এম----(রোমান নিয়মে ১০০০; ১০,০০০; কে 1m, 2m ইত্যাদি লেখার কোন বিধান নেই।
সহস্রতমিক পদ্ধতির চিহ্ন সাধারণত ১/০, ২/০, ৩/০----;(হ্যানিম্যান যে ভাবে লিখতেন)
হ্যানিম্যান--১/০,২/০,৩/০----;ভারতে--০/১,০/২,৩/০---- বা, Lm/১, Lm/২, Lm/৩---বাংলাদেশে---Lm /১, Lm/২, Lm/৩--- m/১, m/২, m/৩; সিম্বল গুলো বিভিন্নভাবে লেখার কারণ সম্পর্কে ডা:জহুরুল ইসলাম সাহেবের মন্তব্যই আমার কাছে সঠিক বলে মনে হয়। তার দর্শন ও বিজ্ঞান বইতে তিনি উল্লেখ করেণ, “আসল ব্যাপার হলো মনের গন্ডগোল। ভারত চেয়েছিলো সিম্বলে একটা স্বাতন্ত্র্য আনতে। তাই ১/০,২/০ এর স্থলে ০/১,০/২ যার কোন অর্থ হয় না। বাংলাদেশ নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখতে করলো m/১,m/২, যেখানে স মানে শুধু ১০০০। এর মধ্যে যিনি খগ করলেন, তিনিও নিশ্চয়ই চেয়েছেন নিজের স্বকীয়তা খাড়া করতে, যার কোন মানেই হয় না। রোমান ভাষায় এর অর্থ হলো, ১০০০-৫০=৯৫০ মাত্র।”
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, শুন্যকে(০) যে কোন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে শুন্য(০) হয় কিন্তু যে কোন সংখ্যাকে শুন্য(০) দিয়ে ভাগ করলে তার ফলাফল হবে অফু্রন্ত (∞) (অর্থাৎ ০/১,২,৩...=০ কিন্তু ১,২,৩.../০=∞ অসীম)। হ্যানিম্যান এটাই বুঝাতে চেয়েছেন। কারণ ৫০সহস্রতমিক পদ্ধতিতে তৈরী ঔষধে, শক্তির স্ফুরণ হয় অফু্রন্ত, অসীম (∞)। হ্যানিম্যান একজন বিজ্ঞ গণিতবিধও ছিলেন।আবার কেউ বলেন, হানেমান রোমান এক(I) এর নিচে ডট (.)দিয়ে গ্লুবিউলের ক্ষুদ্রতম অংশকে বোঝাতে চেয়েছেন।
প্রতিক্রমে ৫০,০০০ ভাগ কমে (১৭০ ফু্‌টনোট) তাই নামকরণ হবে ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতি,
রূপ হবে ১/০, হ্যানিম্যান যে ভাবে লিখেছেন; অন্য অর্থে তা অফুরন্ত (∞) শক্তি বোঝায়, এটাই জ্ঞানের দাবী। অবশ্য হানেমান, এ পদ্ধতির কোন নামকরন করেননি তিনি একে “নব বিধান” বলে উল্লেখ করেছেন।
৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতি আবিস্কারের কারণঃ-
১। দ্রুত নিরুপদ্রোপে ও স্থায়ী আরোগ্যের মর্যাদা সঠিক ভাবে রক্ষা হচ্ছিল না।
২। অসম্পূর্ণতার উপলদ্ধি থেকে সম্পূর্ণতার দিকে অগ্রযাত্রার আত্ম প্রত্যয়।
৩। আরোগ্যের সময়কে সংক্ষিপ্ত করন।
ঔষধের প্রস্তুত প্রণালী সকল চিকিৎসকবৃন্দের জানা থাকা দরকার। যাতে একজন চিকিৎসক বুঝতে পারেন হোমিওপ্যাথিতে কোন স্থূল বস্তুর নাম ঔষধ নয়। ঔষধ প্রয়োগ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনার জন্য একান্ত ভাবে যা জানতে হবে -
পাত্রঃ ১। শিশি- কর্ক, ২। পানির বিশুদ্ধতা,পানির পরিমাণ।
মাত্রাঃ ১। ক্ষুদ্র মাত্রা ও বৃহৎ মাত্রা কি ও কেন (যা রোগী আরোগ্যে একান্ত প্রয়োজন)
২। ক্ষুদ্র করার নিরাময়। ইত্যাদি
অতঃপর যে কথা বলতেই চাই, ‘অর্গানন কোন প্রত্যাদেশ বাণী নয়, একটি সুপরীক্ষিত চিকিৎসা বিজ্ঞান’। বিজ্ঞানে শেষ কথা বলে কিছু নেই; তা’ বলে এ কথা বলাও সংগত হবে না যে প্রাকৃতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত সকল সত্যের ব্যাখ্যাই বিজ্ঞান দিতে সক্ষম। গবেষণার পথ রুদ্ধ নয়-এটা এক চলমান প্রক্রিয়া। বেঁচে থাকলে হ্যানিম্যান হয়তো আরো গবেষণা করতেন। এবং সে গবেষনার ধরণ হয়তো নিম্নরূপ হতে পারতো-
১। কি করে রোগী আরো দ্রুত আরোগ্য করা যায় তা ভাবতেন।
২। লক্ষণ সদৃশ ঔষধ নির্বাচনের আরো সহজ কোন উপায় খুঁজে বের করতেন।
৩। অবশ্যই আরো অনেক ঔষধ প্রুভিং করতেন ।
৪। ৫০ সহস্রতমিক ঔষধ দ্বারা প্রুভিং এর ব্যবস্থা করতেন।
৫। রোগ আরোগ্যের জন্য আরো কোন উচ্চ মানের চিন্তার ফসল আমাদের জন্য রেখে যেতেন।
সকল গবেষণাই পরিচালিত হয়, ভিত্তিভূমিকে স্বিকার করে, তাকে অস্বিকার করে নয়।হয়তো বর্তমানেও এমন কোন বিজ্ঞ পন্ডিত আছেন যারা অর্গানন ভিত্তিক চিন্তার প্রচার প্রসার ও গবেষণায় আত্মনিয়োগ করে মানব জাতির কল্যাণে নিরলস ভাবে গবেষণা করে যাচ্ছেন। আবার এমনও অনেক জ্ঞান-পাপী আছেন যারা গবেষনার নামে হ্যানিম্যান যে মত ও পথ পরিহার করে হোমিওপ্যাথির জন্ম দিয়েছেন তারা, সে পরিত্যক্ত মত ও পথের দিকেই আহবান করছেন; চিকিৎসা নয়, ‘মনগড়া আধুনিক-হোমিও গবেষণা’র আড়ালে যাদের অর্থ-আয়ের লোলুপতাই অধিক প্রস্ফুটিত।
নিশ্চয়ই তাদেরকে হোমিও গবেষক বা হোমিওপ্যাথ বলা যাবে না, যারা----
১। এক সাথে ৪/৫ প্রকার ঔষধ রোগীকে দিয়ে থাকেন।
২। স্থূল মাত্রা, মাদার টিংচার বা হোমিও-হারবাল নামের বিভিন্ন পেটেন্ট ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করেন।
৩। শক্তিকৃত একটি ঔষধের সাথে বায়োকেমী বা অন্য কোন ঔষধ একসাথে-একত্রে সেবন করতে দিয়ে চিকিৎসা করেন এবং যারা এলোপ্যাথি বা হোমিও ঔষধ একই সাথে প্রয়োগের ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন।
হ্যানিমেন স্পষ্ট ভাষায় সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, “এলোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি এরা সরাসরি একে অন্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। যারা মনে করেন এ দু’টো পথ কখনো কাছাকাছি আনা যায় তারা নির্বোধ। পবিত্র হোমিওপ্যাথির প্রতি এটা হচ্ছে একটা অপরাধ যোগ্য বিশ্বাস ঘাতকতা ”(অর্গানন,অ-৫২)। একমাত্র নির্ভূল সাফল্য জনক আরোগ্যের দ্বারাই এ ধরনের লোকদেরকে শিক্ষা দিতে হবে। সর্বোপরি অবশ্যই বলা যায়, একমাত্র সদৃশ-বিধান মতে ঔষধ প্রয়োগ করলেই মানবজাতির সর্ব প্রকার রোগকে সুনিশ্চিতভাবে আরোগ্য সাধন করা সম্ভব। (অর্গানন, অধ্যায়-১০৯)
অবশেষে বলতে চাইঃ
১। হ্যানিম্যান অবিস্কৃত সত্যকে তার প্রদর্শিত পথ ধরেই গবেষনা করতে হবে, সকল গবেষনার ভিত্তি হবে অর্গানন।
২। অর্গানন মানেই ৬ষ্ঠ সংরক্ষণ, ৬ষ্ঠ সংরক্ষণ মানেই হোমিওপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি মানেই ৫০ সহস্রতামিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা।
---
শাকুর ম্যানশন, সদর রোড,বরিশাল। ০১৯১১ ৯২ ৯৪ ৫৭, ০১৭১১ ১০৮৩২
4514 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
কে এম আলাউদ্দীন

কে এম আলাউদ্দিন বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার অম্বিকাপুর গ্রামে পহেলা মে ১৯৫৩ ইং সনে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম আব্দুল হামিদ মিয়া, মাতা মরহুমা রাবেয়া খাতুন। ৩ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে তিনি সকলের বড় । শৈশবকাল হইতেই তিনি লেখা প্রতি ঝোঁক ছিল। তিনি বরিশাল এপেক্স হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হতে ডি.এইস.এম.এস. ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতিতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করে আসছেন। সদা হাস্যোজ্জল ব্যক্তি তিনি। আলোর মুখোমুখি নামে তার একটি কবিতার বই ১৯৮৫ সনে প্রকাশিত হয়েছিল। বর্তমানেও তিনি নিয়মিত ভাবে লিখে চলেছেন, সাহিত্যের একজন সেবক হিসেবে এখনও তিনি সক্রিয়। তিনি বর্তমানে ৭৭৫, সদর রোড, শাকুর ম্যানসন (ক্যাপ্টেন নজিব উদ্দিন ক্লিনিক সংলগ্ন) বরিশাল শহরে বসবাস করছেন।

3 মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.