(অনুচ্ছেদ ১ এর শেষাংশ)
এখানে আর একটু আলোচনা করা না হলে অসম্পূর্ণতা হেকে যাবে। অনুচ্ছেদ এক এ সুস্পষ্টভাবে এমন ৪টি শব্দ রয়েছে যা আলোচনা হওয়া দাবী রাখে, শব্দগুলো হলো- ১। চিকিৎসক(physician) ২। স্বাস্থ্য (health) ৩। রোগী (sick) ৪। আরোগ্য (cure)
প্রথম কথাঃ একজন চিকিৎসক চিকিৎসা করবেন, হানেমান তাদের জন্য নিয়ম-নীতি লক্ষ উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। একমাত্র হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিরই, এ ধরণের মৌলিক নিয়ম নীতি রয়েছে আর তা হল রোগীকে স্বাস্থ্যে পুনঃসংস্থাপন, ২নং অনুচ্ছেদে এর ব্যখ্যা আরো ভিন্ন ভাবে করা হয়েছে। অন্য কোন পদ্ধতিতে সুস্পষ্টভাবে মৌলিক কোন নিয়ম-নীতি রয়েছে বলে আমার জানা নেই। আর এ অবস্থায় সঠিক ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করার পূর্ব শর্ত হিসেবে তিনি এ অনুচ্ছেদের পাদটিকায় কতগুলো বর্জনীয় ও গ্রহণীয় বিষয়ের উল্লেখ করেছেন, যা সংক্ষিপ্তভাবে নিম্নে দেয়া হলঃ
*বর্জনীয় বিষয় সমূহ-
১। কল্পনাপূর্ণ মতবাদ ও অনুমান ভিত্তিক পদ্ধতি।
২। দূর্বোদ্ধ শব্দ, জাকজমকপূর্ণ অভিব্যক্তি প্রকাশের বাহাদুরী।
৩। দাম্ভিকতা, প্রতারণা বা জ্ঞানী হবার ভান।(ক্ষমতার লোভ, দলাদলি ইত্যাদি)
৪। রোগের অদ্ভুত বৈচিত্র ও তাদের নিকটতম কারণের ভিত্তিহীন অনুসন্ধান।
*একমাত্র গ্রহণীয় বিষয় হলোঃ
চিকিৎসা ক্ষেত্রে চিকিৎসক নিজে রোগমুক্তির সত্যিকার কাজে অগ্রসর হবেন, পুরো অর্গানন হবে তার পথ চলার পাথেয়।
দ্বিতীয় কথাঃ অত্র অনুচ্ছেদে স্বাস্থ্য বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করতে গিয়ে, হানেমান রোগীকে স্বাস্থ্যে পুনঃসংস্থাপন-এর কথা বলেছেন। জানা দরকার স্বাস্থ্য কি? এক কথায় বলা যায়, আত্মা ও দেহের একতানের স্বাভাবিক অবস্থাই স্বাস্থ্য। তিনি বলেন, “জীবন প্রক্রিয়ার আভ্যন্তরীণ প্রকৃতি এবং দেহের অদৃশ্য অভ্যন্তরে যে রোগের সৃষ্টি হয়---” এখানে আসলে তিনি বলতে চেয়েছেন, জীবনীশক্তির বিশৃঙ্খলার কারণে যে রোগের সৃষ্টি হয়, যা অনুচ্ছেদ ৯-১০ এ বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। চিকিৎসক হবার পূর্বেই আমাদের উচিৎ এ বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে নেয়া।
তৃতীয় কথাঃ হানেমান এ অনুচ্ছেদে রোগীকে স্বাস্থ্যে পুনঃসংস্থাপন-এর কথা বলেছেন কিন্তু রোগ আরোগ্যের কথা বলেননি--- রোগীর আরোগ্য সাধনের কথা বলেছেন। বিষয়টি সকল হোমিও চিকিৎসকই জানেন তবে মানেন কি না তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। একটু ভেবে দেখুন, আত্ম-বিশ্লেষণ করে দেখুন আমরা যারা নিজেকে হোমিওপ্যাথ বলে দাবী করছি, তাদের মধ্যে শতকরা কতজন রোগী খোঁজার মত করে নিজেকে প্রস্তুত করতে পেরেছি এবং রোগের জন্য নয়, রোগীর জন্য ঔষধ নির্বাচনের মত জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছি। রোগের ২/১ টি বর্ণনা শুনে(হোক তা মানসিক বা শারীরিক) ওষুধ দেয়ার প্রবণতা আজ আমাদের রন্ধে রন্ধ বিষ-বাস্পের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ছে, হোমিও চিকিৎসক সমাজকে ধ্বংসের পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। অপহোমিওপ্যাথির সয়লাবে হানেমানের আদর্শ আরোগ্য আজ ভূ-লুন্ঠিত। রুগ্ন মানুষের সেবা নয়, রুগ্ন মানুষ নিয়ে ব্যবসা-ই যেন আজ আমাদের কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছে, তা-ও আবার হানেমানের নামেই।
আসলে রোগী কে? ইংরেজী অনুবাদে Sick শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এ শব্দটিকে একটু ভিন্ন আংগিকে দেখার চেষ্টা করা যেতে পারে---
S= Suffering(কষ্টভোগ, পীড়া, শাস্তি যন্ত্রণা প্রভৃতি ভোগ)
I= Individualisation(ব্যক্তিস্বাতন্ত্র)
C= Correct evaluation( সঠিক লক্ষণের মূল্যায়ন)
K=Keen observer (ইন্দ্রিয় সজাগ মন, উৎসাহী পর্যবেক্ষক)
বলা যায় এক জন চিকিৎসককে, যদি তার রোগীকে জানতে হয় তবে তার নিজের থাকবে ইন্দ্রিয় সজাগ মন, তিনি হবেন উৎসাহী পর্যবেক্ষক এবং তার থকবে সঠিক লক্ষণ মূল্যায়ণের ক্ষমতা।
অবশ্যই তাকে রোগের কষ্টসমূহ জেনে তার ব্যক্তিস্বাতন্ত্র নির্ণয় করতে হবে। তবেই একজন চিকিৎসক, বিশুদ্ধ হোমিওপ্যাথ হবার যোগ্যতা অর্জন করবেন।
৪। আরোগ্য সাধন করাই চিকিৎসকের প্রধান উদ্দেশ্য, সকল চিকিৎসা বিজ্ঞানেই এ কথা স্বীকার্্য সত্য। হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানে আরোগ্যকে বলা হয়েছে, রোগীকে তার পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে দেয়া। আরোগ্য সাধন বলতে ইংরেজী প্রতিশব্দ Cure ধরা হয়েছে। যার অক্ষর বিশ্লেষণে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
C=Confident (সুনিশ্চিত, অতি বিশ্বাসী, সাহসী)
U=Umbra(প্রচ্ছায়া, সৌর কলঙ্কের নিবিড় কালো মধ্যভাগ)
R=Read (অধ্যয়ন করা)
E-Enchain (শৃঙ্খলাবদ্ধ করা)
এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, একজন হোমিও চিকিৎসক অবশ্যই তার নিজস্ব বিধান অর্থাৎ অর্গাননের উপর দৃঢ় বিশ্বাস (Confident) নিয়ে অগ্রসর হবেন।রুগ্ন মানুষের যন্ত্রণাগুলোর লক্ষণ(প্রচ্ছায়া,Umbra)সমূহ সংগ্রহ করবেন। এবং সংগৃহিত লক্ষণ অর্গাননের আহরিত জ্ঞানের (Read) আলোকে শৃঙ্খলা বদ্ধ (Enchain) করে সঠিক ঔষধ নির্বাচন করতে হবে, তবেই রোগীর আরোগ্য সাধন করা সম্ভব হবে এবং রোগী তার হারানো স্বাস্থ্য ফিরে পাবে।
(চলবে)
#বরিশাল, ২৩০২১৫
কে এম আলাউদ্দীন
কে এম আলাউদ্দিন বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার অম্বিকাপুর গ্রামে পহেলা মে ১৯৫৩ ইং সনে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম আব্দুল হামিদ মিয়া, মাতা মরহুমা রাবেয়া খাতুন। ৩ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে তিনি সকলের বড় । শৈশবকাল হইতেই তিনি লেখা প্রতি ঝোঁক ছিল। তিনি বরিশাল এপেক্স হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হতে ডি.এইস.এম.এস. ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতিতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করে আসছেন। সদা হাস্যোজ্জল ব্যক্তি তিনি। আলোর মুখোমুখি নামে তার একটি কবিতার বই ১৯৮৫ সনে প্রকাশিত হয়েছিল। বর্তমানেও তিনি নিয়মিত ভাবে লিখে চলেছেন, সাহিত্যের একজন সেবক হিসেবে এখনও তিনি সক্রিয়। তিনি বর্তমানে ৭৭৫, সদর রোড, শাকুর ম্যানসন (ক্যাপ্টেন নজিব উদ্দিন ক্লিনিক সংলগ্ন) বরিশাল শহরে বসবাস করছেন।
কে এম আলাউদ্দীন এর সর্বশেষ লেখা
6 মন্তব্য
- মন্তব্যের লিঙ্ক শনিবার, 23 সেপ্টেম্বর 2023 16:14 লিখেছেন Danieloxype
https://interpharm.pro/# canadian pharmecy
canada mail order drug - internationalpharmacy.icu They provide a global perspective on local health issues. - মন্তব্যের লিঙ্ক মঙ্গলবার, 08 আগষ্ট 2023 05:53 লিখেছেন Jimmyhog
non prescription prednisone 20mg: http://prednisone1st.store/# buy prednisone online australia
- মন্তব্যের লিঙ্ক বৃহষ্পতিবার, 13 জুলাই 2023 00:40 লিখেছেন lYFqIkfqT
It was earlier reported that the SFC wasstrongly opposed to the IPO as Alibaba wanted to list as apartnership scheme, allowing its founders to retain controlwithout holding a majority of the shares non prescription cialis online pharmacy
- মন্তব্যের লিঙ্ক বুধবার, 25 ফেব্রুয়ারী 2015 00:30 লিখেছেন মোঃ খোরশেদ আলম
ভাল লাগল দাদু । শুভ কামনা রইল
- মন্তব্যের লিঙ্ক মঙ্গলবার, 24 ফেব্রুয়ারী 2015 16:05 লিখেছেন দ্বীপ সরকার
ভালোই লিখেছেন।
- মন্তব্যের লিঙ্ক মঙ্গলবার, 24 ফেব্রুয়ারী 2015 12:09 লিখেছেন সার্জেন্ট মোঃ নাজমুল কবির (অবঃ)
হোমিওপ্যাথি ডাক্তারদের বেশ উপকারে আসবে, সুন্দর লিখেছেন।
মন্তব্য করুন
Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.