বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।ঘুমানোর ইচ্ছে না থাকলেও চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে আছে অপু। একসময় বৃষ্টি তার অনেক ভালো লাগত,কিন্তু ইদানিং বৃষ্টি তার ভালো লাগেনা।শুধু বৃষ্টি না আরও অনেক কিছুই এখন অপুর ভালো লাগেনা।বৈশাখ,বর্ষা বসন্তও ভালো লাগেনা।জীবনের মানচিত্র যেন ছোট হয়ে আসছে ধীরে ধীরে।জীবনের চরম চাওয়া আর পাওয়াগুলো থেকে আজ সে নিজেকে বঞ্চিত থাকতেই বেশি পছন্দ করে।বৃষ্টি থামলে চোখ খুলে জানালার ফাঁক দিয়ে দূর আকাশের পানে চাইতেই রংধনুর সাথে চোখাচোখি ।রংধনু দেখামাত্রই মন ভালো হয়ে গেল অপুর। অপুর দেশের বাড়ি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায়।হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপে রয়েছে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠা বাংলাদেশের একমাত্র হরিণের অভায়রন্য।একসময় এই দ্বীপে প্রচুর হরিণের আনাগোনা দেখা যেত। দলে দলে ছুটে বেড়াত দ্বীপের এ মাথা থেকে ও মাথা।কিন্তু আশরাফুল মাখলুকাতের জ্বালায় আজ তাদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।তিন ভাই-বোন আর বাবা-মা নিয়ে অপুর সুখের পরিবার।ভাইদের মাঝে অপু দ্বিতীয়।বড় ভাই রুহান পিরামিডের দেশ মিসরে PhD করতে গেছে।ছোট বোন শিউলি গ্রামে তার মা-বাবার সাথে থাকে।সামনের বছর ম্যাট্রিক দেবে।আর অপু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করে এখন থাকে ঢাকার এক বেকার মেসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত দারুন উপভোগ করেছে অপু।না বল্গাহীন কোন জীবনের পথে পা বাড়ায়নি সে।পড়ার টেবিলের সাথেও করেনি কোন প্রতারণা।স্কুল,কলেজের মত বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ভাল রেজাল্ট নিয়েই শিক্ষাজীবন শেষ করেছে।কিন্তু শিক্ষাজীবন শেষেই জীবনের বাস্তবতার সাথে যেন নিজেকে আর মেলাতে পারছেনা।চাকরির পেছনে ছুটবে এই চিন্তা কখনো তার মাথায় আসেনি।অন্যসবাই যখন ক্লাসের ফাঁকে চাকরির বইপুস্তক পড়ে নিজেদের এই পুঁজিবাদী সমাজে এগিয়ে নিয়েছে।অপু তখন ডুব দিয়েছে জ্ঞান সাগরে।শরৎচন্দ্র থেকে মার্ক টয়েন কারও লেখাই বাদ দেয়নি।শরীরের ক্ষুধার চেয়ের আত্মার অন্ন অন্বেষণ তার কাছে সবসময়ই প্রাধান্য পেত।আর তাইতো শিক্ষাজীবন শেষে চাকরির গতানুগতিক পড়াশুনা তার ভালো লাগছেনা।দেখতে দেখতে কখন যে দেড়টি বছর চলে গেছে সে হিসাবও মেলাতে পারছেনা।গ্রামের একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র,তাইতো বাবা-মার প্রত্যাশার মাত্রাটাও অনেক বেশি।তবে একটি চাকরির চিন্তার চেয়ে যে চিন্তা তাকে এখন বেশি ভাবনায় ফেলে দিয়ে তা হল “বিয়ে”। অপুর বাবা আকরাম উদ্দিন।আকরাম উদ্দিন গ্রামের হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক।তবে পেশায় শিক্ষক হলেও তিনি এলাকায় পরিচিত আকরাম ঘটক হিসেবে।দুই তিন গ্রামের কত ছেলে-মেয়ের যে বিয়ের ঘটকালি করেছেন তার ইয়ত্তা নেই।একদম বিনে পয়সায় ঘটকালি।আশরাফুল মাখলুকাতের নানা রকম শখ থাকে-বই সংগ্রহ,বিড়াল পোষা,ডাকটিকিট জমানো আরও কত কিছু। আর আকরাম সাহেবের শখ ঘটকালি।বিনে পয়সায় ঘটকালি। অপুর পড়াশুনা শেষ,তাইতো বিয়ের জন্য তার বাবা উঠেপড়ে লেগেছে।বাংলাদেশের সমাজে ছেলেরা বিয়ে করে এবং মেয়েদের বিয়ে হয়।কিন্তু অপু যেন ঠিক আজ বাংলার কোন অসহায় নারীর প্রতিচ্ছবি।তার বিয়ে দেয়ার জন্য তার বাবা উঠে পড়ে লেগেছে।বাবার সামনে একবার সাহস করে বলেছিল,বাবা আমি কিছুদিন পর বিয়ে করি।কিন্তু তার বাবা তাকে এমন ধমক দিয়েছে যে আর কোনদিন এই বিষয় নিয়ে কথা বলার সাহস করেনি।শুনিয়ে দিয়েছে হাজারো কথা।কিছু কথা এখনো তার কানে বাজে,এই যেমন “বিশ্ববিদ্যালয়ে হোয়ালেখা করি বড় পণ্ডিত হইছো?একটা বউ চালাইতে কত টিয়া লাগে আই জানিনা,দেশের অবস্থা দিন দিন খারাপ অইতেছে।হোলা-মাইয়া বিয়ের আগেই বেগানা নারী-পুরুষের লগে ঢলাঢলি করে।যে স্বাদ আজকের হোলা –মাইয়ারা হারামভাবে নিতেছে হেই স্বাদ হালাল ভালে নিলে দোষ কি ? রিজিকের মালিক আল্লাহ।বিয়া কর, বিয়া কইল্লে আলাদা একটা পেরেশানি থাইকবো।এই পেরেশানির বদৌলতে দেখবি নিজের একটা ব্যবস্থা হইব।চাকরি আইজ বাদে কাল পাবিই তয় চরিত্র নষ্ট হইয়া গেলে সারাজীবন ধইরা কান্দন লাইগবো”। সপ্তাহ ঘুরলেই কুরিয়ারে বিভিন্ন পাত্রীর ছবি পাঠায় তার বাবা।কখনো বা কোন মেয়ের মোহনীয় রুপ দেখে ভালো লেগে যায় অপুর।মনে হয় এখনি ফোন করে বাবাকে বলতে বাবা আমি বিয়ে করব।কিন্তু পরক্ষনেই অপুর মনে হয় আমি তো কিছুই করিনা।বিয়ে করে মেয়েকে রাখব কোথায়?খাওয়াবো কি?তাছাড়া বিয়েতে খরচও অনেক বেশী,আমি তো নিজেই চলতে পারিনা। এমন সব হাজারো চিন্তা নিয়ে অপু লাইব্রেরিতে গেল পড়তে।তবে লাইব্রেরীতে গিয়েই বুঝতে পারল তার বন্ধুরা যেন কি নিয়ে কানাঘুষা করছে।পরে অবশ্য জানতে পারল,তার এক বান্ধবীর অশালীন ভিডিও ইন্টারনেটে পাওয়া যাচ্ছে।বেশ কিছুদিন ধরেই এই ধরণের কিছু খবর দেখে অপু দিন দিন কেমন যেন বিমর্ষ হয়ে যাচ্ছিল।চিন্তা করে পারছিল না কি এর সমাধান ? দ্রুত বিয়ে করা,নৈতিক শিক্ষার প্রসার নাকি অন্যকিছু। তবে আজ যেন তার মনে হচ্ছে দ্রুত বিয়ে করা একটা ভালো সমাধান।এতে নিজের চরিত্র সংরক্ষণ হবে তাছাড়া বাবাও খুশী হবে।ফোনটা হাতের কাছেই ছিল,বাবার নম্বরে ডায়াল করেই বলল,বাবা আমি বিয়ে করব তুমি সব ঠিকঠাক কর।
শেয়ার করুন
প্রকাশিত বিভাগ ছোট গল্প
আল মামুন উর রশিদ
একটি সুন্দর গল্প মানুষকে হেরার পথ দেখাতে পারে...
আল মামুন উর রশিদ এর সর্বশেষ লেখা
5 মন্তব্য
- মন্তব্যের লিঙ্ক শনিবার, 16 মে 2015 20:03 লিখেছেন সুজন হোসাইন
অনেক ভালো একটি গল্প ভালো লাগলো
- মন্তব্যের লিঙ্ক শুক্রবার, 15 মে 2015 12:16 লিখেছেন সার্জেন্ট মোঃ নাজমুল কবির (অবঃ)
ভাল হোয়েছে, সুন্দর চালিয়ে যান।
- মন্তব্যের লিঙ্ক শুক্রবার, 15 মে 2015 11:54 লিখেছেন মোঃ খোরশেদ আলম
valo lagl khub vaia . asa kori apnar lekha niomito porte parbo, amader pase sovsome thakben vaia . suvo kamona apnar jonno .
মন্তব্য করুন
Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.