বৃহষ্পতিবার, 12 অক্টোবর 2017 22:57

জীবন ও বাস্তবতার গল্প নির্বাচিত

লিখেছেন
লেখায় ভোট দিন
(0 টি ভোট)
                জীবন ও বাস্তবতার গল্প

ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরীর গল্প

একদেশে এক রাজা ছিল। রাজার খুব শখ হল সে কবিতা লিখবে। রাজা শুধু ভাবে আর ভাবে কিন্তু কবিতা কি নিয়ে লিখবে ভেবেপায়না। অবশেষে রাজা রানীর কাছে গেলো। রানীর কাছে গিয়ে বললো আমি কিনিয়ে কবিতা লিখতে পারি। রানী বললো আমাকে নিয়ে কবিতা লিখো।
রাজা রানীর কোন বিষয় নিয়ে কবিতা লিখবে তা ভেবে কুল কিনারা পেলোনা। রাজা ভাবছে আর ভাবছে। কিন্তু কোনো শব্দই লিখতে পারছেনা।
রাজা আবার রানীকে গিয়ে বললো আমি তোমার কোন বিষয় নিয়ে লিখবো।
রানী বললো, আমার রূপের বর্ণনা নিয়ে লিখো।
রাজা আবার ভাবতে শুরু করলো রানীর রূপের কোন বিষয় নিয়ে লিখবে।
রাজা ভেবে ভেবে আর কোনো উত্তর খুঁজে পায়না। রাজা আবার রানীর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো তোমার রূপের কোন বিষয় নিয়ে আমি লিখতে পারি?
রানী বললো আমার চেহারের বর্ণনা দিয়ে কবিতা লিখতে পারো।
রাজা আবার চিন্তায় পড়ে গেলো রানীর ভিতরের চেহারা নিয়ে লিখবে নাকি বাইরের চেহারা নিয়ে লিখবে। কারণ রাজা জানতো রানী তার অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য ভিতরে ভিতরে অহংকারী হয়ে উঠেছিল। আবার বাইরের চেহারার কোন বিষয় নিয়ে লিখবে তা ভেবে ভেবে রাতদিন কেটে গেলো। মাস শেষে বছর গেলো। বছর শেষে যুগ গেলো। এরপর দুই যুগ কেটে গেলো কিন্তু রাজা একটা শব্দও লিখতে পারলো না। রানী ইতিমধ্যে বুড়িয়ে গেলো। রূপ লাবণ্য হারালো।
একদিন হঠাৎ করে সে রাজাকে জিজ্ঞাসা করলো আমাকে নিয়ে কবিতাটা কি লিখেছো?
রাজা বললেন, না।
রানী বললেন, তবে আর লেখার দরকার নেই।
কারণ রানী জানে এখন সে বয়সের কারণে রূপ লাবণ্য হারিয়েছে। কাজেই এখন রাজা তাকে নিয়ে যদি কোনো কবিতা লিখে সেটা ভালো হবে না।
রাজা খুশি হলো এই ভেবে যে বয়সের কারণে রানীর বাইরের সৌন্দর্য কমে গেলেও তার ভিতরের চেহারায় যে অহংকার ছিল তা আর নেই। রাজা ভাবলো কবিতা লিখতে চাইলেও লিখা যায় না। রাজা হওয়া সহজ কিন্তু কবি হওয়া কঠিন।
অবশেষে রাজা কবিতা লিখার চিন্তা বাদ দিয়ে রাজ্য শাসনে মন দিলেন।
২

ঘটনাটা সত্য হতে পারে আবার কাল্পনিকও হতে পারে। তবে অবাস্তব কিছু নয়। খুব ঢাকঢোল পিটিয়ে বিদেশী একটি রিসার্চ গ্রুপ বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় তরুণদের জন্য রোবোটিক্স প্রতিযোগিতায় আয়োজন করলো। তারা বিজয়ী দলের জন্য পাঁচলক্ষ টাকা অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করলো। বিদেশী রিসার্চ গ্রুপটি জানতো এদেশের তরুণদের মেধা ও আইডিয়া এবং তার প্রয়োগ বিশ্বের যে কোনো তরুণদের চেয়ে অনেক বেশি। তারা তাই সুকৌশলে বড় অংকের অর্থের পুরস্কার ঘোষণা করে তরুণদের প্রলুদ্ধ করতে চাইলো। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল আইডিয়া ও প্রযুক্তি চুরি করে তাদের দেশে এটা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা আর আবিষ্কারের কৃতিত্ব টাকে নেওয়া। তরুণরা তাদের ভিতরের বিষয়টি বুঝতে না পেরে তাদের অনেক নুতন ও যুগান্তকারী আইডিয়া ও সৃষ্টি প্রতিযোগিতায় নিয়ে আসলো। বিদেশী রিসার্চ গ্রুপটি আইডিয়া ও সৃষ্টিগুলো পেয়ে গেলো। অন্য কথায় চুরি করল।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী একটি গ্রুপকে পাঁচলক্ষ টাকা পুরস্কার প্রদান করা হলো।
এরপর ঐ বিদেশী রিসার্চ গ্রুপটি বাংলাদেশের তরুণদের আইডিয়া ও সৃষ্টিগুলো তাদের দেশে নিজেদের বলে প্রকাশ করল। এগুলোর পেটেণ্ট বা মালিকানাসত্ব তারা নিজেদের নামে করে নিলো।
এখন তাদের চুরি করা ভালোভালো আবিষ্কার ও আইডিয়াগুলো আইনগতভাবে তাদের হয়ে গেলো। তারা বাণিজ্যিকভাবে এগুলো উৎপাদন করা শুরু করল আর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মালিক বনে গেলো।
মাত্র পাঁচলক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে তারা বিশ্বব্যাপী তাদের ব্যবসা প্রসারিত করল। বাংলাদেশের সম্ভবনাময় তরুণরা তাদের ফাঁদে পা দিয়ে তাদের আগামীর সম্ভবনা নষ্ট করল।
৩. এক নিভৃত শহরে তিনজন লোক বাস করতো। লোকগুলোর কথাবার্তা ছিল অন্যদের থেকে খানিকটা ভিন্ন ধরণের। একজন লোক বলতো আমি চাঁদে যাবো। আরেকজন বলতো আমি চাঁদকে আমার হাতের মুঠোয় নিবো। অন্য একজন বলতো মানুষের রূপান্তর ঘটে। গ্রামের মানুষেরা তাদের নিয়ে খুব হাসাহাসি ও অবিশ্বাস করতো।
একদিন গ্রামের মানুষের একত্রিত হয়ে তাদের জেরা করা শুরু করল।
প্রথমে তারা চাঁদে যে যেতে চায় তাকে জিজ্ঞাসা করল “তুমি যে চাঁদে যাবে তোমার রকেট কই?” সবাই একথাটা বলার পর তাকে ব্যাঙ্গ করা শুরু করল। তবে লোকটি উত্তর দিলো আমার রকেট নেই তবে টিকেট আছে। আমি আগামী মাসে চাঁদ প্রজাতন্ত্রে বেড়াতে যাবো আর এটা মধ্য আফ্রিকার একটি দেশ। সবাই কথাটা শুনে বোকা বনে গেলো ।
যে লোকটা চাঁদকে হাতের মুঠোয় নিবে বলেছিলো তাকে বললো ” দেখি তুমি আকাশের চাঁদকে কিভাবে হাতের মুঠোয় নিতে পারো?” সবাই হাসিতে গড়াগড়ি খেলো। লোকটি তখন ছোট একটা বৃত্তাকার কাচের আয়না তার হাতে রেখে আকাশের চাঁদকে আয়নার ভিতরে আনল। সবাই লোকটির বুদ্ধিতে হতবাক হলো।
এরপর তারা আরেক জনকে বললো “বলত কিভাবে মানুষে রূপান্তর ঘটে ? মানুষ কি বানর হয় নাকি বনমানুষ ?” উত্তরে সে বললো আমি যদি একজন নারীর কথা বলি “প্রথমে সে কন্যা হয়, এরপর সে কারো ঘরের বৌ হয়, তারপর মমতাময়ী মা হয়, শেষে নানী বা দাদী হয় “। আর এভাবে মানুষের রূপান্তর ঘটে। শহরের লোকেরা নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। তারা নিজেদের বোকামিতে লজ্জিত হলো।

এখানে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো হলো-
১. সবাই কবি হতে চাইলেও কবি হতে পারেনা। এর জন্য একটা সৃষ্টিশীল মন থাকতে হয়। সময়ের সাথে মানুষের ভিতরের উপলব্ধির পরিবর্তন ঘটে।
২. কখনো কোনো সৃষ্টিশীল আইডিয়া কারো কাছে শেয়ার করতে নেই। একজনের অবদান অন্যজন কৌশলে কেড়ে নিতে পারে।
৩. মানুষকে কখনো ভালোভাবে না জেনে অবিশ্বাস করতে নেই । কেননা বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।            
            
754 বার পড়া হয়েছে
শেয়ার করুন
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর এ দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন। শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে তিনি যেমন অবদান রেখে চলেছেন তেমনি সৃষ্টিশীল লেখার ক্ষেত্রেও তাঁর পদচারণা। তিনি মনে করেন বিজ্ঞান চর্চা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি একে অন্যের পরিপূরক। তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, গবেষক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, কবি, গীতিকার, নাট্যকার, সমাজ সংস্কারক ও সাংস্কৃতিক কর্মী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শনে বিশ্বাসী এই মানুষটির ছোটবেলা থেকেই লেখায় হাতেখড়ি। কৈশোর ও তারুণ্যে তিনি বাংলা একাডেমি, খেলাঘর, কঁচিকাচার মেলা সহ বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করেছেন। এই সময় তাঁর প্রবন্ধ, কবিতা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রকৌশল বিদ্যা অধ্যায়নের সময় তিনি প্রগতিশীল কর্মী হিসেবে কাজ করে সহিত চর্চা করে গেছেন। এ সময় তাঁর লেখাগুলো বিশ্ববিদালয়ের ম্যাগাজিনে এখনও সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও অনেকদিন ধরেই তিনি দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে লিখে চলেছেন। বাংলা ও ইংরেজি দুই সাহিত্যেই তাঁর সমান দক্ষতা রয়েছে। সমাজ, রাষ্ট্র, প্রকৃতি, বিজ্ঞান, শিক্ষা, পরিবর্তন, সম্ভাবনা ও মানুষ তাঁর লেখার মূল উপজীব্য বিষয়। তিনি একজন ভাল বক্তা। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টক্ শো সহ বিভিন্ন সৃজনশীল অনুষ্ঠানে তাকে অতিথি হিসেবে দেখা যায়। ভারতরে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় তথ্যমন্ত্রী অজিত কুমার পাঁজা কলকাতা দূরদর্শনের একটি প্রতিযোগিতায় তাঁর প্রেরিত প্রবন্ধে মোহিত হয়ে নিজ হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সে সময় সম্প্রচারিত হয়। এই খবরটি আজকাল, সংবাদ, বাংলাবাজার সহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এছাড়া তিনি ফিলিপিন্স, চীন, বি-টিভি সহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন পুরুস্কারে ভূষিত হন। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের একজন কর্মী হিসেবে তিনি কাজ করে চলেছেন।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী এর সর্বশেষ লেখা

1 মন্তব্য

  • মন্তব্যের লিঙ্ক ahDqUl সোমবার, 10 জুলাই 2023 21:28 লিখেছেন ahDqUl

    Dr Chu In patients with left ventricular dysfunction, secondary mitral regurgitation effective regurgitant orifice area 20 mm2 and exercise induced increase in effective regurgitant orifice area 13 mm 2 are independent markers of poor prognosis with increased cardiac mortality how much does cialis cost

মন্তব্য করুন

Make sure you enter all the required information, indicated by an asterisk (*). HTML code is not allowed.